ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে সার্টিফিকেট বিক্রি বন্ধ করতে হবে

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৯:৫৯ পিএম, ০৭ মে ২০১৯

উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে হলে সার্টিফিকেট বিক্রি বন্ধ করতে হবে। দল-মত না দেখে চোখ বন্ধ করে এসব অপরাধীকে দমন করতে পারলে উচ্চশিক্ষার মান বাড়বে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান।

চেয়ারম্যান হিসেবে মঙ্গলবার (৭ মে) ছিল তার শেষ কর্মদিবস। এদিন জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে ইউজিসির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং তার ব্যক্তিগত নানা চিন্তা-ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে ইউজিসির সব কার্যক্রমে জবাবদিহিতা তৈরি এবং তা দৃশ্যমান হয়েছে। বিগত চার বছর এ প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো কিছুতেই থমকে যাইনি। সততা ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সহকর্মীদের সহযোগিতা পেয়েছি বলে তা সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ নিয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি। সারাদেশে ১০৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও বর্তমানে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পিছিয়ে রয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর না হওয়ায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন করে কোনো বিষয় চালুর অনুমোদন দেয়া হয়নি।

‘আইনগত কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়াও সম্ভব হয়নি। শক্তিশালী একটি উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করে এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে আইনের আওতায় আনা উচিত‘- বলেও মত দেন তিনি।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষা তো অন্য ১০টি পণ্যের মতো নয়, এটি মানুষ গড়ার হাতিয়ার। এ কারণে শিক্ষার মানের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন রয়েছে, তবে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি ও প্রশিক্ষণমূলক বিশ্ববিদ্যালয় বেশি প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েট হয়ে চাকরির পেছনে নয়, চাকরি গ্র্যাজুয়েটদের পেছনে ছুটে বেড়ায় কিনা- সেটিই হবে দেখার বিষয়।’

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার মানের দিক বিবেচনা করলে এখনও আমরা পিছিয়ে আছি। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে যে স্পিরিট নিয়ে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আজ যা ভালো, কাল তা ভালো নাও হতে পারে। যুগোপযোগী শিক্ষা বাস্তবায়নকেই মানসম্মত শিক্ষা হিসেবে নির্ণয় করা হয়। তবে আগের চেয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার মান অনেক বেড়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, শিক্ষা সবার অধিকার, কিন্তু সব স্তরের শিক্ষা সবার অধিকার নয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ সবার অধিকার। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সবার অধিকার নয়। নির্ধারিত কিছু মানুষের জন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থাকা দরকার। সবার জন্য যত উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়বে তত বেকারত্ব বাড়তে থাকবে।

গত চার বছরে সফলতা ও ব্যর্থতা জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার কোনো ব্যর্থতা নাই, সফলতার সঙ্গে চার বছর পার করেছি। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা ব্যবস্থা নিতে থমকে যাইনি। সহকর্মীদের সহযোগিতায় আমরা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে গেছি।’

তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি ও গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে ‘হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট’ (হেকেপ) সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বৃদ্ধি করা হয়েছে। গরুর ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন, সহজে ক্যান্সার পরীক্ষার পদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। সফলভাবে এ প্রকল্প সম্পন্ন হওয়ায় বর্তমানে আগের চেয়ে দিগুণ অর্থে এডিবি ‘হিট’ নামের প্রকল্প চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। হিট প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ অগ্রগতিও হয়েছে।

উচ্চশিক্ষা কমিশনের রূপরেখা কেমন হওয়া দরকার- জানতে চাইলে আবদুল মান্নান বলেন, মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের কাছে শিক্ষার গুরুদায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়েছে। শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে। তবেই দেশে স্থায়ীভাবে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। পাশাপাশি দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের তাগিদ দেন তিনি।

ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, এখনও যারা শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রি করছে তাদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে। কে, কোন দলের তা না দেখে চোখ বন্ধ করে এসব অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে শিক্ষার মানের সব অর্জন ও চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।

এদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যানের শেষ কর্মদিবসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে গুঞ্জন চলে, নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে কে আসছেন- তা নিয়ে। অপরদিকে, অধীনস্থ কর্মকর্তারা এক-এক করে এসে সিক্ত মনে চেয়ারম্যানকে বিদায় জানাচ্ছিলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানা যায়, ৭ মে ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হয়। ইউজিসিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর সম্মতির পর এ তালিকা প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে তা রাষ্ট্রপতির দফতরে পাঠানোর কথা রয়েছে। এরপর রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা মোতাবেক ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যানের নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

ইউজিসির নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তৈরি করা তালিকার মধ্যে রয়েছেন- ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন অর রশিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খন্দকার বজলুল হক।

তবে আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক চেয়ারম্যান আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এমএইচএম/এনডিএস/এমএআর/পিআর

আরও পড়ুন