সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতি ঢাবির বৈষম্য!
নীলক্ষেত মোড়ে রাস্তা অবরোধে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার বেলা ১১টা থেকে রাজপথে নেমেছেন তারা।
২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাত কলেজকে অধিভুক্ত করা হলেও নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষাগ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ডিগ্রি, অনার্স ও মাস্টার্সের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থীর জীবন হুমকিতে পড়েছে।
আজ বুধবার দুপুর ১টায় সরেজমিন নিউমার্কেট ও নীলক্ষেত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একটি রিকশার ওপর মাইক লাগিয়ে শিক্ষার্থীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন। প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে তারা তাদের দাবি মেনে নিতে আহ্বান জানাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, প্রশাসন থেকে কেউ তাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করেননি।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাবির অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে তাদের শিক্ষাজীবন হাজারো সমস্যায় জর্জরিত।
তারা জানান, ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স ও মাস্টার্স সেশনগুলোর কোন বর্ষের পরীক্ষা কখন হবে, শিক্ষার্থীরা তা জানে না। প্রত্যেক বর্ষের পরীক্ষার রুটিন পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রকাশ করা হয়। একটি বর্ষের পরীক্ষা প্রায় দুই-তিন মাস ধরে গ্রহণ করা হয়। যেসব বর্ষের প্রাকটিক্যাল পরীক্ষা আছে তা পরীক্ষার পরপরই গ্রহণ করা হয় না। ফলাফল প্রকাশেও হচ্ছে বিলম্ব। তা কখনও কখনও ৮ থেকে ৯ মাস কিংবা বছর পেরিয়ে যায়। ফলাফল প্রকাশের পর তা থাকে ভুলে ভরা।
রাসেল নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ২০১৬-২০১৭ সেশনের প্রথম বর্ষ প্রায় ৩০ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ১ম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয়নি। ডিগ্রির সব বর্ষের ফরম ফিলাপ, রুটিন, পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না।
শিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও চলে টাকার বাণিজ্য। ফরম ফিলাপ ও মানোন্নয়নসহ ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কয়েকগুণ বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে।
অনিক নামের একজন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জানান, ২০১৫-২০১৬ সেশনের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলতি ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও কেন হচ্ছে না সে বিষয়ে নোটিশ করে জানানো হয়নি।
জানা গেছে, ডিগ্রি ২০১৬-২০১৭ সেশনটি প্রায় ৩০ মাস যাবৎ ১ম বর্ষে আটকে আছে। অনার্স ২০১৫-২০১৬ সেশনের ২য় বর্ষের ফল প্রকাশ হয়েছে। তবে তাতে কয়েকটি বিষয়ে শতকরা ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হন। ডিগ্রি ২০১৪-২০১৫ সেশনের ২য় বর্ষের পরীক্ষার সাত মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ফলাফল প্রকাশিত হয়নি। অনার্স ২০১৬-২০১৭ এবং ডিগ্রি ২০১৫-২০১৬ সেশন দুটির ১ম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা গত বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এক বছর পরও সেশন দুটির শিক্ষার্থীরা ২য় বর্ষের পরীক্ষায় বসতে পারছে না। ডিগ্রি ২০১৩-২০১৪ সেশনের শিক্ষার্থীরা গত বছরের অক্টোবর মাসে তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসেছিলেন। এরপর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হচ্ছে না।
এসব কারণে তারা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। দফাগুলোর মধ্যে ৯০ দিনের মধ্যে ত্রুটিমুক্ত ফলাফল প্রকাশ, ডিগ্রি পাস কোর্স, অনার্স ও মাস্টার্সে গণহারে ফেলের কারণ প্রকাশ, সাত কলেজ পরিচালনার স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন, সিলেবাস অনুযায়ী মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ উত্তরপত্র মূল্যায়ন সস্পূর্ণভাবে সাত কলেজের শিক্ষক দ্বারা করা এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করা।
এমইউ/জেডএ/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ২ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৩ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৫ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন