শিক্ষক বদলি কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রাথমিকে
দ্বিতীয় দফায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ জন সহকারী শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। চট্টগ্রামের জেলা শহরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তাদের বদলি করা হয়েছে।
গত ৩১ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) পলিসি ও অপারেশন পরিচালক খান মো. নুরুল আমিনের স্বাক্ষরিত এই বদলির আদেশ জারি করা হয়। তবে এ নির্দেশনা মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ডিপিইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
একই তারিখে স্বাক্ষরিত অপর তিনটি আলাদা আদেশে দ্বিতীয় দফায় ঢাকার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬৫ জন সহকারী শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে। তার মধ্যে এক আদেশে ২১ জন ও অপর দুটিতে যথাক্রমে ২১ ও ২৩ জন শিক্ষককে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।
এদিকে দ্বিতীয় দফার বদলি নিয়েও নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক শিক্ষক। পাশাপাশি বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সহকারী শিক্ষক বদলি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
৩১ মার্চ খান মো. নুরুল আমিন স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, শূন্যপদের বিপরীতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ জন সহকারী শিক্ষককে বদলি করা হলো। তাদের নিজেদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ জারি করায় বদলিকৃত শিক্ষকরা কোনো প্রকার ভ্রমণভাতা প্রাপ্য হবেন না।
আদেশে আরও বলা হয়, ডিপিই মহাপরিচালকের সদয় অনুমোদনের পর এ আদেশ জারি করা হয়েছে। পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে তাদের বদলিকৃত স্কুলে যোগদান করতে হবে। গত ৩০ মার্চ এ নির্দেশনা জারি হলেও ৯ এপ্রিল তা চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দফতরে পাঠানো হয়েছে। তবে এদিন তা ডিপিইর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, বদলি নিয়ে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। অধিকাংশ বদলি অর্থের বিনিময়ে করা হয়েছে। ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক বদলি করা হয়েছে। বদলির আবেদনের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শূন্যপদের তালিকা দিলেও সেসব প্রার্থীকে বদলি না করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) থেকে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
ডিপিই থেকে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীতে দুশ শূন্যপদের বিপরীতে বদলির জন্য ১০ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। শিক্ষকদের বদলির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার তদবিরের পাহাড় জমে গেছে। যাদের তদবিরের ভার বেশি তাদের পচ্ছন্দের প্রতিষ্ঠানে বদলি করা হচ্ছে, বাকিরা বিভিন্ন কর্মকর্তার দ্বারে দ্বারে ঘুরে শুধু আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকে আবার বদলি হতে দালালকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে পথে বসেছেন। এসব দালালের সঙ্গে ডিপিইর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, চট্টগ্রামের কয়েকটি বিদ্যালয়ে শূন্য আসন সাপেক্ষে তারা সম্মলিতভাবে বদলির আবেদন করেন। পরে ডিপিই অফিসে ডিজি স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের শূন্যপদের তালিকা আনতে বলেন। যাদের আবেদনের সঙ্গে শূন্যপদের তালিকা থাকবে বদলির জন্য তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে বলেও জানান তিনি (ডিজি)।
তারা আরও জানান, এর ভিত্তিতে জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শূন্যপদের তালিকা এনে ডিপিইতে জমা দিলেও তাদের বদলি করা হয়নি। অনেকের আবেদনও গায়েব হয়ে যাচ্ছে। যেসব শিক্ষককে আবেদন করতেও দেখা যায়নি, টাকা দিয়ে তারা পচ্ছন্দের প্রতিষ্ঠানে বদলি হয়ে গেছেন। কেউ কেউ যে প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদের নাম প্রস্তাব করে পাঠিয়েছেন তাকে সেখানে না দিয়ে ভিন্ন বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিইর মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, টাকা দিয়ে বদলি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, যারা বলছে তারা ঠিক বলছে না। নিয়ম অনুযায়ী বদলি করা হচ্ছে। এক প্রতিষ্ঠানে দুজন আবেদন করলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আবেদনকারীর ফাইল গায়েব হয় না, আগে আবদেন করায় অনেক সময় ফাইল খুঁজে পাওয়া যায় না। বদলির ক্ষেত্রে ব্যক্তির প্রয়োজনকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। মানবিক কারণেও অনেককে গুরুত্ব দেয়া হয়, বদলি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বেশকিছু শিক্ষক বদলি করা হবে বলেও জানান তিনি।
এমএইচএম/এমএমজেড/পিআর