স্কুল-কলেজ থেকে সরছে পাবলিক পরীক্ষা
ধার করা কেন্দ্রে আর পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করতে চায় না সরকার। এ কারণে প্রত্যেক জেলায় একটি স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ কেন্দ্রে জেলার সব পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দেশের প্রত্যেক জেলায় একটি করে পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে (ইইডি) এ কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষাগ্রহণকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসে সংশ্লিষ্টরা। বৈঠকে প্রতি উপজেলায় একাধিক পরীক্ষা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব আসে। তবে এ জন্য অন্তত আড়াই হাজার একর ভূমি প্রয়োজন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, পাবলিক পরীক্ষা আয়োজনে প্রত্যেক জেলার যেকোনো এক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ওই কেন্দ্রে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হয়। এমন প্রতিষ্ঠানও আছে, পরীক্ষার কারণে বছরে প্রায় ৩- ৪ মাস বন্ধ থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বহুদিন ধরেই শিক্ষা কেন্দ্রের বাইরে স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের দাবি উঠে।
এ প্রসঙ্গে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, পাবলিক পরীক্ষার জন্য আলাদা কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা পর্যায়ে স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ডিপিপি (বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি, দ্রুতই মন্ত্রণালয়ে এটি পাঠানো হবে।
ভবনের কাঠামো রূপরেখা হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব পাবলিক ও কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নেয়া হয় তারমধ্যে সবচেয়ে বড় পিইসি। এ কারণে ২০১৭ সালের পিইসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যার সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে প্রতি উপজেলার ভবিষ্যৎ পরীক্ষার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সংখ্যার উপর ভিত্তি করে পরীক্ষা হলের জায়গা নিরূপণ করা হয়। প্রতি কক্ষে একশ পরীক্ষার্থীর বসার আসন থাকবে। একটি ভেন্যু কেন্দ্রে একসঙ্গে চার হাজার পরীক্ষার্থীর ব্যবস্থা রাখা হবে। ভেন্যু পাঁচ একর জমির উপর নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে চার একরে ভবন হবে। বাকিটা পুকুর, উন্মুক্ত স্থান ও বাগানের জন্য থাকবে। পাঁচ তলার বেশি ভিত হলে ভবনে লিফটের ব্যবস্থা থাকবে। ভবনের জমি অধিগ্রহণে যাতায়াত সুবিধা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। পরীক্ষা ছাড়া বছরের বাকিটা সময় কমিউনিটি সেন্টারসহ সামাজিক অনুষ্ঠানাদির জন্য বহুমুখী ব্যবহারের প্রস্তাবও আছে। এতে বেসরকারি আয়ের পথও উন্মুক্ত হবে।
এ বিষয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে অনেকগুলো পাবলিক পরীক্ষা আয়োজন করা হচ্ছে। এরমধ্যে পঞ্চম শ্রেণির পিএসসি ও ইবতেদায়ি, অষ্টম শ্রেণির সমাপনী, এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল পরীক্ষা রয়েছে। স্বতন্ত্র কেন্দ্র স্থাপন হলে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার নির্দিষ্ট স্থান তৈরি হবে। ফলে পরীক্ষার কারণে দীর্ঘদিন আর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে না।
তিনি বলেন, এসব পরীক্ষা কেন্দ্র মাল্টিপারপাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যখন পাবলিক পরীক্ষা থাকবে তখন তা অনুষ্ঠিত হবে, যখন থাকবে না তখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে। নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য একটি নির্ধারিত স্থান তৈরি হবে। মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে এ ধরনের কেন্দ্র জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, উপজেলায় ভেন্যুগুলো পরিচালনার জন্য সম্ভাব্য জনবল কাঠামোর প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছে। ষষ্ঠ গ্রেডের পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা হবেন উপজেলায় পরীক্ষা কেন্দ্রের সমন্বয়ক বা প্রধান। তার সঙ্গে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার দুইজন সহকারী সমন্বয়ক থাকবেন। এই তিনজনই পদায়ন হবে শিক্ষা ক্যাডার থেকে, যাদের নিয়ন্ত্রণকারী হবে মাউশি। এছাড়া এক একটি কেন্দ্রে অফিস সহকারী, স্টোর কিপার, হিসাবরক্ষক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, গাড়ি চালক, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও অন্য সাধারণ পদে জনবল থাকবেন। সব পদই রাজস্ব খাতের হবে।
জানা গেছে, প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্র হবে আধুনিক প্রযুক্তিগত সুবিধা সম্পন্ন। যাতে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা দ্বারা পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ করা হবে। থাকবে সাদা বোর্ড, ইন্টারনেট সংযোগ, মাল্টিমিডিয়া, জেনারেটর এবং সোলার সিস্টেম, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। পরীক্ষার হলে বয়স বিবেচনায় বেঞ্চ থাকবে। এরমধ্যে পিইসি পরীক্ষার্থীদের জন্য এক ধরনের এবং জেএসসি ও উপরের পরীক্ষার্থীর জন্য আরেক ধরনের বেঞ্চ রাখা হবে।
এমএইচএম/এএইচ/পিআর