এইচএসসির ভুল প্রশ্নে ‘বিশেষভাবে’ উত্তরপত্রের মূল্যায়ন
> ২০১৯ সালের বদলে ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা গ্রহণ
> ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দেয়া খাতা ‘বিশেষভাবে’ মূল্যায়ন করা হবে
> অপরাধের বিষয়টি প্রমাণিত, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে
চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্রে ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়া তিন কেন্দ্রের খাতা ‘বিশেষভাবে’ মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ইতোমধ্যে এসব কেন্দ্রের খাতা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে ভুল প্রশ্ন দিয়েই এসব উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৯ সালের বদলে ২০১৬ সালের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলেও কোনো পরীক্ষার্থীর ক্ষতি হবে না। এসব খাতা ‘বিশেষভাবে’ মূল্যায়ন করা হবে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ আর না হয় সে বিষয়ে সব কেন্দ্রে আবারও সর্তক করা হয়েছে। অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল সোমবার (১ এপ্রিল) এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা (আবশ্যিক) প্রথমপত্র পরীক্ষায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সিঙ্গাইর সরকারি কলেজ ও মাদারীপুরের শাজাহান খান সরকারি কলেজে ২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণ করা হয়। পরে ভুল প্রশ্নেই এই তিন কেন্দ্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, বিষয়টি প্রকাশ হলে সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসেন ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সিঙ্গাইর সরকারি কলেজ ও শাজাহান খান সরকারি কলেজ কেন্দ্রের সব খাতা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের খাতা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
এদিকে সোমবার রাতেই ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একদিন মেয়াদি একটি কমিটি গঠন করা হয়। বুধবার (৩ এপ্রিল) এ কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া বাকি দুটি কেন্দ্রের ঘটনা খতিয়ে দেখতে দুই জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা ভুল প্রশ্ন বিতরণের বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ঢাকা বোর্ডে প্রতিবেদন পাঠাবেন।
ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, দুটি কেন্দ্রে ২০১৯ সালের বদলে ২০১৬ সালের শুধু এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) প্রশ্ন বিতরণ করা হয়েছে। একটি কেন্দ্রে ২০১৬ সালের দুটি সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। যারা সেই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়েছে তার ওপরই উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হবে। যেহেতু পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি, এ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া তিন কেন্দ্র সচিবকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদনে কারও বিরুদ্ধে অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত প্রতিবেদনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে।
এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী ১ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১২ থেকে ২১ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এবার দুই হাজার ৫৭৯টি কেন্দ্রে ৯ হাজার ৮১টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণির এই চূড়ান্ত পরীক্ষা অংশ নিচ্ছে।
গতবারের চেয়ে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১১৮টি, কেন্দ্র বেড়েছে ৩৮টি। ঢাকার বাইরে এবার বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৭৫ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে ১২৭ জন ছাত্র ও ১৪৮ জন ছাত্রী।
এবার এইচএসসি সমমানের মোট ৫১টি বিষয়ে ১০১টি পত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন সিলেবাসে পত্রের সংখ্যা ১৫১টি। সারাদেশে মোট ২ হাজার ৫৮০টি কেন্দ্রের প্রায় ৪০ হাজার কক্ষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ১ লাখ শিক্ষক পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত। পরীক্ষা নিতে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন এবং ব্যবহারিক পরীক্ষার জন্য মোট ৩ হাজার ৯৩২ ধরনের প্রশ্ন ছাপা হয়েছে। এছাড়া প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিবন্ধী ও বিশেষ চাহিদাপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট বরাদ্দ থাকবে।
পরীক্ষায় এবারও শুরুতে এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) অংশ এবং পরে রচনামূলক অংশের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় ৩০ মিনিট এবং ৭০ নম্বরের সৃজনশীল পরীক্ষার সময় আড়াই ঘণ্টা। পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে প্রশ্ন সেট নির্ধারণ করে সব বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
এমএইচএম/আরএস/এমএস