প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে : বিশ্ব ব্যাংক
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের যা শেখানো হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। ৫ম শ্রেণিতে ১১ বছর পর্যন্ত যে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে তা মূলত সাড়ে ছয় বছরে পাওয়ার কথা। ফলে অন্যান্য দেশের তুলনায় সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
রাজধানীর একটি হোটেলে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ব ব্যাংকের প্রাথমিকের ‘লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজ-২০১৮’শীর্ষক বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বাংলাদেশের অংশ তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান এডো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে ৫ম শ্রেণির ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে নিজ পাঠ্যপুস্তকের অংশ দেয়া হলেও তাদের মধ্যে প্রতি চারজনে একজন অংক করতে পারে। ফলে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই পাঠ্যবইয়ের অংক বোঝে না।
অপরদিকে ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে। বাকি ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই বাংলা বই পড়তে পারে না। প্রাথমিক স্তরে ১১ বছর পর্যন্ত যা শেখানে হচ্ছে তা মূলত অন্যান্য দেশের বাচ্চারা সাড়ে ছয় বছরের মধ্যেই শিখছে। ফলে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক স্তর শেষ করলেও তারা সাড়ে চার বছর পিছিয়ে থাকছে।
এ সব সমস্যা সমাধানে বিশ্ব ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। সে সব সুপারিশের মধ্যে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষার মান মূল্যায়ন করতে হবে, প্রাথমিক পর্যায়ের বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষকদের মান বাড়াতে হবে, এবং প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও শিক্ষার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. রবাট জে সাম বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সব শিক্ষার্থী স্কুলে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা বেশি। কিন্তু ক্লাসে যা শেখানো হচ্ছে তা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকছে। মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় অনেক কম। এখানে মালয়েশিয়ার চেয়ে অর্ধেক জিডিপির অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে শিক্ষা খাতে। বাংলাদেশের বাজেটে শিক্ষা খাতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা দিয়ে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা বেশি খাপার করছে। উদাহরণ হিসেবে ভিয়েতনামের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী যে পরিমাণে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে জামার্নির শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক পর্যায়েই তা শিখছে।’
প্রধান অতিথির ব্যক্তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশে শতভাগ স্কুলে ভর্তি শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমরা মানসম্মত শিক্ষার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের জন্য সরকারি বিদ্যালয়গুলো আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। মেধাবিরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৯ বছর ধরে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। গত এক বছরে ২ লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিগত আট বছরে শিক্ষা খাতে ৫ গুণ বাজেটে অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে বাজেটে ১২ থেকে ১৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে শিক্ষা খাতে। মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে শিক্ষা খতে বাজেটে অর্থ বাড়ানো হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- লিগো ফাউন্ডেশনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিস সারা বুচি, বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি হেলসি রোগাস্টাস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
এমএইচএম/এনডিএস/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ২ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৩ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা
- ৪ গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্মরণসভা করার নির্দেশ
- ৫ পিএইচডি-এমফিলধারী ২০৬ শিক্ষককে সংবর্ধনা দিলো জমিয়াতুল মোদার্রেছীন