ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিতে নানা তদবির
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগ বন্ধে উঠেপড়ে লেগেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। বিগত ১০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন কোনো অধ্যক্ষ নেই। মাসখানেক আগে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। এরপরই নিয়োগ বন্ধে এই মহলটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
তবে প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে সকল বাধা উপেক্ষা করে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম বহাল রাখা হবে বলে গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ভিকারুনিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ বন্ধে নেমেছে একটি গ্রুপ। ওই গ্রুপটি চায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অস্থায়ী অধ্যক্ষ বহাল থাকুক। তাহলে গোষ্ঠীটির ভর্তি বাণিজ্য, কেনাকাটা বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করার সুযোগ থাকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে সুপারিশ করেছে, এ কারণে এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী একটি মহলটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনাকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য নেমেছেন। ওই মহল নিয়োগ স্থগিতের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়াও আরও নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
সর্বশেষ ২০০৮ সালে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার পর আন্দোলনে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের প্ররোচনায় অরিত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে- এমন অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিচারের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আবারও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পরিবর্তন করা হয়।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা অভিযোগ করেন, স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ না হওয়ার পেছনে বড় বাধা হলো- ২০০৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত যারাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন তাদের প্রায় সকলেই সেই পদ আঁকড়ে দীর্ঘদিন থাকতে চেয়েছেন। এজন্য তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা অভিযোগ ও তদবির করে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ আটকে রেখেছেন। এ কারণেই ভিকারুননিসার মতো একটি প্রতিষ্ঠান এতদিন ধরে স্থায়ী অধ্যক্ষ ছাড়াই চলছে।
বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষও একই তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলছেন, তারা স্থায়ী অধ্যক্ষ চান। এ লক্ষ্যে নিয়োগ কার্যক্রম অব্যহত রাখার দাবি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়, মাউশি ও শিক্ষা বোর্ডের সহায়তাও কামনা করেছেন তারা।
জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। গত ১ জানুয়ারি আবেদন কার্যক্রম শেষ হয়। নিয়োগ প্রত্যাশী ১৬ প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছয়জন ও বাইরে থেকে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান দায়িত্বরত অধ্যক্ষ নিজেই একজন আবেদনকারী হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে নতুন এজজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী মহল এ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। তারা নানা মহলে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ দিচ্ছে। নিয়োগের জন্য সরকারি প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে আগামী সপ্তাহে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশিতে আবেদন করা করা হবে। সেখানে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের বর্তমান সঙ্কটের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। সরকারি প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হলে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে জানান গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান।
নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের আইন উপদেষ্টা মিজানূর রহমান বলেন, আবেদনকারী কোনো প্রার্থী স্ব-পদে বহাল থাকতে পারবেন না। এ সংক্রান্ত আদালতের একটি নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে- চাকরি প্রত্যাশী আবেদনকারী নিয়োগ কমিটিতে থাকতে পারবে না। সে মোতাবেদন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক স্ব-পদে বহাল থেকে আবেদন করলে তাকে অপসারণ করতে হবে বলে জানান।
এমএইচএম/এমবিআর/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ বুয়েটে প্রাক-নির্বাচনীতে যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ, নির্বাচিত ২৪২০৫
- ২ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরছে ভর্তি পরীক্ষা, বদলে যাচ্ছে পদ্ধতিও
- ৩ এনসিটিবি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাপ্তাহিকসহ সব ছুটি বাতিল
- ৪ ‘শিক্ষা ক্যাডার’ বাতিলের পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে কঠোর কর্মসূচি
- ৫ পেছনের শিক্ষাক্রমে ফেরার লড়াই প্রাথমিক-মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের