ভিকারুননিসায় অধ্যক্ষ নিয়োগ স্থগিতে হাইকোর্টে রিট
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করেছেন।
অভিভাবক প্রতিনিধিদের পক্ষে মঙ্গলবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী রফিকুল ইসলাম সরকার। আজ (বুধবার) এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি।
বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ভিকারুননিসা কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ কারণে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেছেন অভিভাবক প্রতিনিধিরা। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার পর আন্দোলনে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের প্ররোচণায় অরিত্রী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে- তাই এর বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তারা। পাশাপাশি অরিত্রীর বাবা ভিকারুননিসার তৎকালীন অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নাজনীন ফেরদৌসসহ তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাদের চাকরিচ্যুত ও এমপিওভুক্তি বাতিল করে গর্ভনিং কমিটি।
জানা গেছে, এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিভিন্ন দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। অথচ গত বছরের ২৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে অধ্যক্ষ পদে এবং ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের সব কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হলো। এ আদেশ এখনও বহাল থাকার পরও গত ৯ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি মাসের পহেলা জানুয়ারি আবেদনের সময় শেষ হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মহিলা প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রার্থীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।
রিটকারী ও অভিভাবক প্রতিনিধি আব্দুস সামাদ সুজন বুধবার জাগো নিউজকে বলেন, অধ্যক্ষ নিয়োগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নিজেদের আনুগত্যকে নিয়োগ দিতে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ভর্তি বাণিজ্য করতেই মূলত গভর্নিং বডির সদস্যরা তড়িঘড়ি করে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে মঙ্গলবার হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছি। আজ (বুধবার) হাইকোর্টের ২৫ নম্বর বেঞ্চে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি এম এন হাসানের উপস্থিতিতে শুনানি হবে। আইনজীবী রফিকুল ইসলাম সরকারের মাধ্যমে রিটটি করা হয়েছে। এতে শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক, ঢাকা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও লিখিতভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, যেহেতু অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি অবৈধ। এ জন্য অফিসিয়াল অনুমোদন নিতে হবে। নতুবা নিয়ম না মানার কারণে গভর্নিং বডি ভেঙে দেয়াসহ একাধিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
এমএইচএম/এমএমজেড/আরআইপি