সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি কমছে
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। গত এক বছরে ৮ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী কম ভর্তি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের (ডিপিই) ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে বর্তমানে দেশে সন্তান জন্মের হার হ্রাস এবং কিন্ডার গার্টেনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমেছে। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা চিন্তিত নয়।
ডিপিই’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২০১৫ সালে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন, ২০১৬ সালে ২ কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ২২৩ জন। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে এসে তা ২ কোটি ৯ লাখ ১৯ হাজার ২০১ জনে দাঁড়িয়েছে। ফলে এক বছরে ৮ লাখ ১৩ হাজার ২২ জন কমেছে। যার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে শেষ বছরে ৩৬ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫১ জন ভর্তি হয়।
শিক্ষার্থী ভর্তির গ্রোস রেটে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ১০৯ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১১২ দশমিক ২ শতাংশ এবং ২০১৭ সালে তা কমে ১০৯ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। কমেছে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুনরাবৃত্তির হার। যা ২০১৫ সালে ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৬ দশমিক ১ শতাংশ। যা ২০১৭ সালে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে, প্রাথমিক স্তুরে কমেছে ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীর হার। ২০১৫ সালে এ হার ছিল ২০ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে ১৯ দশমিক ২ শতাংশ, ২০১৭ সালে এটি ২১ দশমিক ৭ শাতাংশ এবং ২০১৮ সালে তা কমে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশে নেমেছে।
অন্যদিকে, গত তিন বছরের মধ্যে শেষের বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার তুলনামূলক কমেছে। গত দুই বছর ৯৮ দশমিক ৫ ও ৯৮ দশমিক ৫১ শতাংশ হলেও ২০১৭ সালে এটি ৯৫ দশমিক ১৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে।
দেখা গেছে, সারাদেশে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি মিলে মোট ৭৫ হাজার ৯৯১ প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি বিদ্যালয় প্রায় ৬৫ হাজার। পুরুষ-নারী মিলে মোট শিক্ষকের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৭৯ জন। আর মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লাখ ৫৯ হাজার ৮৯৯ জন। তাদের মধ্যে ৬৬ লাখ ৪৫ হাজার ৯৪ জন বালক ও ৬৯ লাখ ১৪ হাজার ৮০৫ জন বালিকা। এছাড়াও ইবতেদায়ি পর্যায়ে ১২ হাজার ১৮২টি মাদরাসা, ৩৮ হাজার ২৯২ শিক্ষক ও ১৬ লাখ ৯৫ হাজার ৩৬০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে সারাদেশে ৩৯ হাজারের বেশি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ, ছেলে-মেয়েদের জন্য প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ ওয়াশব্লক নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৩৯ হাজার ৩০০টি নলকূপ স্থাপন, ৬৫ হাজার কক্ষ নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন, ৪৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরুরি অবস্থায় শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ ও ১৫ তলা বিশিষ্ট লিডারশিপ ট্রেনিং সেন্টার ভবন নির্মাণ, ১ হাজার ৫০০টি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও ১২টি জেলা সরকারি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান আছে।
দেশে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ৬৪ হাজার ৯৯৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং ৬৫টি পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ৫ হাজার টাকা করে মোট ৩২ কোটি বায়ান্ন লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের বয়স, সামর্থ্য, মেধা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় রেখে আকর্ষণীয়, উপভোগ্য, চিত্তাকর্ষক ও শিশুতোষভাবে শিখন কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ১১ হাজার ৯২৫ জন শিক্ষককে ১৫ দিনব্যাপী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এছাড়াও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় আনতে পাঠপর্যায়ে প্রতিবন্ধিতা সহায়ক উপকরণ ক্রয় ও বিতরণে এ বছর ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলায় ৪২০ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৯০০ অংশীজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ৬৭ হাজার ৯৮৫ জন প্রধান শিক্ষককে অটিজমসহ একীভূত শিক্ষা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূণ্যপদে এ বছর ৮৯৮ জন নন-ক্যাডারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরসহ ২৮টি জেলায় ৭ হাজার ৫৫২ জনকে সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্বে বসানো হয়েছে। খেলাধূলায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যাওয়ায় উদ্বেগের কিছু নেই। বর্তমানে দেশে জন্মহার কমেছে। সেই সঙ্গে যত্রতত্র কিন্ডারগার্টেন গজিয়ে ওঠছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অনেক ক্ষুদে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। এসব কারণে সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে গেছে। তবে তারা যেন ঝরে না পড়ে সেদিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। যেসব শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে শিক্ষকদের মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এটি বাস্তবায়নে আমরা নানামুখী কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আনতে নানারকম সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তি দেয়াসহ বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ কারণে কেউই পড়ালেখার বাইরে থাকছে না। বিষয়গুলো সর্বশেষ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমএইচএম/এমএমজেড/পিআর