চেয়ারম্যান নেই, বন্ধ বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া!
>> আগের চেয়ারম্যানের দুর্নীতিতে সব কার্যক্রমে জটিলতা
>> এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান পদে কেউ যোগ দিতে চান না
>> পরপর দুজনকে নিয়োগ দিলেও একজনও যোগ দেননি
>> ১৩ নভেম্বর যোগ দেয়ার কথা রয়েছে নতুন চেয়ারম্যানের
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা দুই মাস চেয়ারম্যানের পদ শূন্য থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশে বেসরকরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩৮ হাজার ৮০০ জন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকলেও এ কারণে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
জানা গেছে, এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করার পরও নিয়োগ না পেয়ে ৩৫টি মামলা করেছেন বিভিন্ন সময়ে নিবন্ধিত প্রার্থীরা। তার ভিত্তিতে আদালত থেকে নিবন্ধিত প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দেয়া হয়। সে মোতাবেক গত তিন মাস আগে প্রথম থেকে ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এ তালিকায় নানা ধরনের ভুল-ভ্রান্তি উল্লেখ করে সারাদেশ থেকে সহস্রাধিক আবেদন করেন প্রার্থীরা। পরে তা সংশোধন করে মোট ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৮৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন।
এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সারাদেশের সব স্কুল-কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্য আসনের তালিকা পাঠাতে তিন দফায় নির্দেশনা দেয় এনটিআরসিএ। এতে ৩৮ হাজার ৮০০ জনের শূন্য আসনের তালিকা আসে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও প্রতিষ্ঠানে চেয়ারম্যান না থাকায় এখনো এই বিশাল শূন্যপদ পূরণে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
তারা জানান, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এনটিআরসিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আজহার হোসেন অবসর গ্রহণ করেন। এরপর গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালকে জনপ্রশাসন থেকে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিলেও তিনি সেখানে যোগদান করেননি। এ কারণে বাধ্য হয়ে গত এক সপ্তাহ আগে অতিরিক্ত সচিব এস এম আশফাক হোসেনকে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি বিদেশ সফরে রয়েছেন। আগামী ১২ নভেম্বর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, নানা অনিয়ম ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কুক্ষিগত করে রাখতেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. আজহার হোসেন। এ কারণে এনটিআরসিএ’র সব কার্যক্রম ধীরগতি হয়ে পড়ে। সব কার্যক্রমে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে এনটিআরসিএ’তে নতুন করে কেউ যোগদান করতে চায় না। এ প্রতিষ্ঠানে বদলিকে শাস্তিমূলক বদলি বলে মনে করা হয়। তাই পরপর দুজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দিলেও একজনও যোগদান করেননি। তবে সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত সচিব এসএম আশফাক হোসেনের যোগদান করার কথা রয়েছে আগামী ১৩ নভেম্বর। বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মাহামুদ উল হককে রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনিও গত ৩ নভেম্বর থেকে জ্যামাইকায় আছেন। ফিরবেন ১৩ নভেম্বর। এই সময়ের মধ্যে এনটিআরসিএ’র সদস্য (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) নাসির উদ্দিন আহমেদকে আর্থিক ক্ষমতাসহ চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
সাবেক চেয়ারম্যান আজহার হোসেনের অনিয়মের তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন অভিযোগকারী কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব নুসরাত জাবীন বানু জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের কার্যক্রম স্থবির, কথাটি ঠিক নয়। শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের জন্য চাহিদা পাওয়া গেছে। কিছু ভুল-ভ্রান্তি ছিল, তা সংশোধন করা হয়েছে। দ্রুত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রার্থীদের কাছে আবেদন চাওয়া হবে। তবে, চেয়ারম্যান না থাকায় বড় সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে মোট ৩৮ হাজার ৮০০ জন শিক্ষকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। টেলিটক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। শূন্য আসনের তালিকা সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা কমকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নতুন চেয়ারম্যান যোগদান করলে চলতি মাসের শেষের দিকে নিবন্ধিত প্রার্থীদের আবেদন চেয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারে এনটিআরসিএ। এরপর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মোধাক্রমে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করবে এ প্রতিষ্ঠানটি।
এমএইচএম/জেডএ/এমএস