পরীক্ষা পেছানোয় অসন্তুষ্ট অভিভাবকরা
কওমি শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমান দেয়ায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামীকাল রোববার (৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ‘শোকরানা মাহফিল’অনুষ্ঠিত হবে। এ কারণে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্খায় চলমান জেএসসি ও জেডিসির রোববারের নির্ধারিত বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। হটাৎ পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলেন, রোববারের ইংরেজি পরীক্ষা পিছিয়ে আগামী শুক্রবার নেয়া হবে। এর আগেরদিন (বৃহস্পতিবার) গণিত ও পরদিন (শনিবার) বিজ্ঞান পরীক্ষা রয়েছে। এই তিনটি খুবই গুরত্বপূর্ণ পরীক্ষা। তাই অনেক বেশি প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়ায় পরীক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জেএসসি পরীক্ষার্থী নীরা হায়দারের বাবা মোজাম্মেল হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, পরীক্ষা পরিবর্তনের সংবাদে আমি নিজেই ঘাবড়ে গেছি। কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পরীক্ষা পর পর তিন দিনে শিক্ষার্থীরা দেবে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের জেএসসি পরীক্ষার্থী জিসান রহমানের মা মিথুন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন , পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করে পাহাড় সমান বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি চাপ পড়বে।
তারা বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এতো চাপ নিয়ে পরীক্ষা দিলে তাদের পরীক্ষা খারাপ হবে। ফলে অনেকে কাঙ্ক্ষিত ফল থেকে পিছিয়ে পড়বে। তাই কড়া নিরাপত্তা দিয়ে রোববারের নির্ধারিত পরীক্ষা আয়োজন করা যেত। তাতে পরীক্ষার্থীরা পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময় পেত। এখন পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া কঠিন হয়ে যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্ততে ভুল সিদ্ধান্ত বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন করলে সেখানে একজন পরীক্ষার্থীও যদি তার কবলে পড়ে কেন্দ্রে পৌঁছাতে না পারে তার দায়দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। এ কারণে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষাগুলো আয়োজন করতে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি সভায় পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পরীক্ষার্থীরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছে। তাই একটি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে পরীক্ষা পেছানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রোববার ‘শোকরানা মাহফিল’এর আয়োজন করেছে ‘আল-হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে উপস্থিত থাকার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোববার সকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদরাসা শিক্ষার্থীদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। সারাদেশ থেকে তারা ঢাকায় আসবে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এতে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে আসতে বিঘ্ন ঘটতে পারে। বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে শনিবার (৩ অক্টোবর) জরুরি সভা ডাকা হয়।
পরীক্ষা পেছানোর বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে রোববারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা পিছিয়ে আগামী শুক্রবার সকাল ৯টায় আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি জরুরি সভা ডাকা হয়। সেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ দফতর ও সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।’
বর্তমান পরীক্ষা রুটিন অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার জেএসসির গণিত, শুক্রবার ইংরেজি ও শনিবার বিজ্ঞান পরীক্ষা হওয়ায় কথা রয়েছে। অন্যদিকে জেডিসির বৃহস্পতিবার গণিত, শুক্রবার আরবি-২য় পত্র এবং শনিবার ইংরেজি ও ইংরেজি ২য় পত্র (অনিয়মিত) পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠানকে ঘিরে রোববার রাজধানীতে যান চলাচলের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। সারাদেশ থেকে কওমি মাদরাসার সঙ্গে যুক্ত কয়েক লাখ মানুষ রাজধানীতে সমবেত হতে পারেন।
এমএইচএম/এনডিএস/জেআইএম