ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

উচ্চশিক্ষা কমিশন গঠন অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:০১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৮

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ভেঙে উচ্চশিক্ষা কমিশন বা হায়ার এডুকেশন কমিশন (এইচইসি) গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ‘উচ্চশিক্ষা আইন’ চূড়ান্ত খসড়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলছে খোদ ইউজিসি। ইউজিসি’ই চাচ্ছে না, মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত আকারে আইনটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠানো হোক। ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত ‘উচ্চশিক্ষা আইন’ এর চূড়ান্ত খসড়ার ব্যাপারে তাদের আপত্তির পর, সেটি আবারও থেমে গেছে।

ইউজিসি’র দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা আইনটি অনুমোদন পেলে ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের যেটুকু স্বায়ত্তশাসন ও স্বকীয়তা রয়েছে তা খর্ব হবে। ইউজিসি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি অধিদফতরে পরিণত হবে। ইউজিসি’র বর্তমানে যতটুকু ক্ষমতা ও স্বাধীন স্বত্তা রয়েছে, তাও থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার দীর্ঘ ছয় বছর পর ইউজিসি’র ক্ষমতা ও কার্যাবলি আরো সম্প্রসারণে এবং প্রয়োগিক ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৮/২৯টি সুনির্দিষ্ট কার্যাবলি নির্ধারণ করে উচ্চ শিক্ষা কমিশন বা হায়ার এডুকেশন কমিশন (এইচইসি) গঠনের লক্ষ্যে ‘উচ্চশিক্ষা আইন’-র খসড়ার করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল, ইউজিসি’র সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আযাদ চৌধুরীর আমলে।

অর্থাৎ বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষ সময়। কিন্তু অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইউজিসি’র প্রস্তাবনা ও খসড়াকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ আমলানির্ভর এবং মন্ত্রণালয়ের আজ্ঞাবহ একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে এ আইনের খসড়া তৈরি করে। সেটি গত ২৬ আগস্ট প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় ‘উচ্চশিক্ষা কমিশন আইন, ২০১৮’ অনুমোদন দেয়া হয়। এটি এখন প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রধানমন্ত্রী সম্মতি জানালেই কেবল এখন মন্ত্রিসভার পরবর্তী যে কোনো বৈঠকে তা উত্থাপন করা হতে পারে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনের খসড়ার ব্যাপারে ইউজিসি’র ঘোর আপত্তি এবং প্রস্তাবিত আইনে আমলানির্ভরতা এবং ইউজিসিকে আরো ‘ঠুটো জগন্নাথে’ পরিণত হবার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। ফলে মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত আইনটি হয়তোবা বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে আর আলোর মুখ দেখছে না।

হায়ার এডুকেশন কমিশন (এইচইসি) গঠনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ‘উচ্চশিক্ষা আইন’-র বর্তমান অবস্থা এবং পরিনতি সম্পর্কে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেভাবে উচ্চশিক্ষা কমিশন চান এবং ইউজিসি যে আকারে হায়ার এডুকেশন কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছিল, তার কোনোটিই প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় নেই। হায়ার এডুকেশন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মতো প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক সেটা কেউ চায় না।

মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, খসড়া আইনে যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানটি অনেকটাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদফতরে পরিণত হবে। সকল বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও অনুমোদন নিতে হবে। অপেক্ষা করতে হবে। এতদিন ‘দন্তহীন বাঘ’ হিসেবেও যেসব বিষয়ে ইউজিসি’র সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা ছিল- খসড়া প্রস্তাবনা অনুসারে সেগুলোর ক্ষেত্রে এখন প্রাক-অনুমোদন দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সংস্থাটির প্রধানের পদেও শিক্ষক নন, তবে প্রশাসনিক সক্ষমতা এমন ব্যক্তি বা সরকারি আমলা পদায়নের রাস্তা খুলে রাখা হয়েছে। সচিব পদ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কমিশনের বাইরে। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিধানে অস্পষ্ট ও স্ববিরোধী নির্দেশনা আছে। তবে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে এতে কয়েকটি কঠোর বিধান রাখা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় প্রণীত ও সচিব কমিটি অনুমোদিত খসড়ায় উচ্চশিক্ষা কমিশন আইনে নামে মাত্র স্বায়ত্তশাসন প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি, বিষয়/বিভাগ/ইন্সটিটিউট খোলা, অর্থ বরাদ্দসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে ইউজিসি নিয়ে থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুমোদন, বিভাগ-বিষয় খোলা বা স্থগিত/বাতিল ইত্যাদি ও ইউজিসি কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই করছে।

অথচ প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, এসব ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদন লাগবে। ইউজিসি নিজস্ব পদ সৃষ্টি, যোগ্যতা নির্ধারণ ও নিয়োগের বিষয়েও পূর্বানুমোদন নিতে হবে। উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম কমিশন সরাসরি নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করবে।

প্রস্তাবিত খসড়ায় আরো বলা হয়েছে, কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে পারবে, কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারবে না। এটা নেবে মন্ত্রণালয়। শুধু তাই নয়, মন্ত্রণালয় কমিশনের সুপারিশ মানতে বাধ্য নয়। পরিদর্শন ও তদন্ত বিষয়ে সরকার যেমন মনে করবে, তেমন ব্যবস্থা নিতে পারবে। অথচ আইনে কমিশনকে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

শুধু ইউজিসিই নয়, প্রস্তাবিত আইনের খসড়া অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসন খর্ব করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শর্তাবলি কমিশন নির্ধারণ করবে। অথচ বর্তমানে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় এটা নির্ধারণ করে।

প্রস্তাবিত কমিশনের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের জন্য প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন খণ্ডকালীন সদস্য রাখার কথা বলা হয়েছে। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন সচিব খণ্ডকালীন সদস্য থাকবেন। এ ছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন ভিসি এবং তিনজন ডিন সদস্য নিয়োগ পাবেন। কিন্তু বর্তমানে শুধু শিক্ষাবিদরাই কমিশনের চেয়ারম্যান হতে পারেন।

প্রস্তাবিত আইনে ‘আমলা’ নিয়োগের পথ খোলা রেখে বলা হয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষক, গবেষক বা প্রশাসক হিসেবে শিক্ষাক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা চেয়ারম্যান হতে পারবেন।

ইউজিসি দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, নীতিমালা-বিধিমালা প্রণয়ন এবং প্রয়োগের ক্ষমতা যদি মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকে তা হলে নতুন আইন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। ইউজিসি’র দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অ্যাডিটেশন কাউন্সিল গঠনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আইন হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না আজও। তাহলে নতুন আইন দিয়ে কী লাভ হবে?

ক্ষমতা, কর্তৃত্ব এবং আইনি সাপোর্ট না থাকায় ইউজিসি’র বর্তমান অচল কাঠামো দিয়ে দেশে পাবলিক-প্রাইভেট প্রায় দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার মান নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন দেশের উচ্চ শিক্ষার তদারকি সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।

তারা বলেন, তদারকি কর্তৃপক্ষের অক্ষমতার সুযোগ নিচ্ছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়। এর জন্য মূলত আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই দায়ী।

এমএইচএম/এসএইচএস/পিআর

আরও পড়ুন