টানা এক মাস রাস্তায় শিক্ষকরা
এমপিওভুক্তির (মানথলি প্যামেন্ট অর্ডার) দাবিতে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা রাস্তায় নামার টানা এক মাস পেরোলো। গত ১০ জুন থেকে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এরপর প্রতীকী অনশনের পর ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের এই রাস্তায় নামার ১ মাস ১ দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ, আর আমরণ অনশনের ১৫তম দিন। অনশন চালিয়ে যাওয়া এই শিক্ষক-কর্মচারীরা আরও কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবছেন।
মঙ্গলবার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ চেয়ে তার কার্যালয়ে যেয়ে আবারও আবেদন করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন ফেডারেশনটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন, সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ, প্রচার সম্পাদক মো. ফিরোজ আহম্মেদ।
তাদের আবেদনপত্র গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ ওয়াহিদা আক্তার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শিক্ষকদের আস্থা রাখতে বলেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে সংগঠনের পক্ষে এমপিওভুক্তির বিকল্প প্রস্তাবও ছিল। সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার প্রধানমন্ত্রীর ৫ জানুয়ারির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
আজকের আমরণ অনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির কার্যক্রম গ্রহণ করে শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষক-কর্মচারীদের এই আমরণ অনশন চলবে বলে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত ৩ জুলাই আরও বৃহত্তর কর্মসূচির হুমকি দেয় শিক্ষক- কর্মচারীদের আরেকটি গ্রুপ। ওইদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি দেন স্বাধীনতা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ।
এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন ঠাকুরগাঁও- ৩ (পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল) আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক ইয়াসিন আলী। বেলা পৌনে ২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে উপস্থিত হন তিনি। পরে সেখানে সংহতি প্রকাশ ও দাবি বাস্তবায়নে জোরালো ভূমিকা রাখার কথাও বলেন তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি ন্যায্য তারা বছরের পর বছর বিনা বেতনে চাকরি করছেন যা অমানবিক। সরকারের উচিত দাবি মেনে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। এর আগে ২ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন লেখক, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।
এই এমপিওভুক্তির বিষয়ে গত ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা অনুসরণ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির (মানথলি প্যামেন্ট অর্ডারের আওতায়) বিষয়ে দ্রুত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন - ‘প্রতিশ্রুতির পরও শিক্ষক আন্দোলন রহস্যজনক’
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় দফায় আন্দোলনের এক মাস পূর্ণ হলো। আমরণ অনশনের ১৫তম দিন হলো। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন চলছে। দাবি একটাই- ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এত দিনেও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
আমরণ অনশনের চেয়েও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানান নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আর কী করতে পারি? শিক্ষক হয়ে তো আর আন্দোলনের নামে হাঙ্গামা করতে পারি না। অথচ সেই সুযোগটাই বুঝি নেয়া হচ্ছে। আমরা আর কতো সহ্য করবো?
এমইউএইচ/জেডএ/পিআর