ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

বেসরকারি ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে ইউজিসির সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১২:১৬ পিএম, ২৩ মে ২০১৮

দেশের ২৪ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মঙ্গলবার ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) জাফর আহম্মদ জাহাঙ্গীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কোনোটির বিরুদ্ধে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানোর অভিযোগ, শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশপ্রাপ্ত, সনদ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে কয়েকটি অভিযুক্ত এবং বন্ধ ঘোষিত। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আবার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ আছে কয়েকটির বিরুদ্ধে।

এতে আরও বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে ১০১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে ৯২টি কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মধ্যে ২৪টির ব্যাপারে ভর্তি সতর্কতা বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ৮টি নতুন। এগুলো এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি। ভর্তি হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য সতর্ক করতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইউজিসিকে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এর আলোকে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

এই বিজ্ঞপ্তিতে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারেও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়েছে। কেউ অনুমোদনবিহীন কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস বা অননুমোদিত কোনো প্রোগ্রাম বা কোর্সে ভর্তি হলে তার দায়-দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা ইউজিসি নেবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত ক্যাম্পাস ও প্রোগামে ভর্তি হতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ইবাইস ইউনিভার্সিটি :

ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা করেছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পদক্ষেপের বিষয়েও একটি গ্রুপ আদালতে মামলা করে ওই পদক্ষেপের বিষয়ে স্থগিতাদেশ পেয়েছে।

আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি :

২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে আদালতে রিট আবেদন করে স্থগিতাদেশ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বতীকালীন রায়ে ৩৫ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, অষ্টম তলা, বনানী ক্যাম্পাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয়া হয়।

পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫৪/১ প্রগতি সরণী, বারিধারা, নর্দ্দা, পুলিশ স্টেশন, গুলশানের ঠিকানা অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু ওই ঠিকানার ক্যাম্পাস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অবৈধ ক্যাম্পাস উচ্ছেদ করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা :

২০০৬ সালের ২২ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় সরকার। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে কোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেয়। পরে গত ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালুর অনুমতি দেয়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও ভবনের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শনের জন্য ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে গত ২ এপ্রিল চিঠি দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে রিট দায়ের করে ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করেছে। যদিও ইউজিসি এর বিরুদ্ধে আপিল করেছে।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ :

আদালতের রায় অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩৯, মেহেদীবাগ, চট্টগ্রাম এবং ২২ শহীদ মির্জালেন চট্রগ্রামে ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য সব ক্যাম্পাস অবৈধ হওয়ায় অবৈধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর ইউজিসি ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষার্থী ভর্তি না করাতে চিঠি দেয়। ইউজিসির এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রিট করলে আদালত ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে।

গণ বিশ্ববিদ্যালয় :

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত প্রেগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ার জন্য কমিশন ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে রিট করলে ২০১৭ সালের ২৯ মে আদালত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, ইনভায়রনমেন্ট সায়েন্স, এমবিবিএস, বিডিএস এবং ফিজিওথেরাপি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি আমলে নিতে ইউজিসিকে নির্দেশনা দেয়।

দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় :

আদালতের আদেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কুইন্স ইউনিভার্সিটি :

সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দিলেও ২০১৫ সালের ৬ সপ্টেম্বর শর্ত সাপেক্ষে এক বছরের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেয়। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।

৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের অননুমোদিত ক্যাম্পাস :

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ফয়জ লেক, খুলশী, চট্টগ্রামের ক্যাম্পাসকে অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস জানিয়ে ইউজিসি বলছে, ধানমণ্ডির ৬৩ সেন্ট্রাল রোডে বিশ্ববিদ্যালয়টির অনুমোদিত ক্যাম্পাস আছে।

গত ১৫ মে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে অননুমোদিত ক্যাম্পাস বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।

দি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাস সৃষ্টিগড়, শিবপুর, নরসিংদী এবং অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা- ৩/২ ব্লক-এ, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টির অননুমোদিত একটি ক্যাম্পাস আছে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়ার অনুমোদিত অস্থায়ী ক্যাম্পাস বাড়ি ৭৬-৭৭, রোড ১৪, ব্লক-বি, বনানী, ঢাকা। তবে বাড়ি-৭২, রোড-১৭, ব্লক-সি, বনানী, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস আছে।

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যালয়ের অনুমোদিত স্থায়ী ক্যাম্পাসের ঠিকানা প্লট-২০১, সেক্টর-১৫, খানটেক, উত্তরা, ঢাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার উত্তরায় ১২ নম্বর সেক্টরের বাড়ি-৫১, শাহ মখদুম রোড এবং বাড়ি-০২, সোনারগাঁও রোডে দুটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।

ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব-মামলা ৫টি বিশ্ববিদ্যালয় :

ঢাকার ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লার ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ড নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন।

শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি ৮টি বিশ্ববিদ্যালয় :

রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, রূপায়ন এ কে এম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, আনোয়ার খান মর্ডান ইউনিভার্সিটি, জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে সর্তকতা জারি করা হয়েছে।

এমএইচএম/এমবিআর/এমএস

আরও পড়ুন