অনলাইন আবেদনে ডিজিটাল ভোগান্তি
একাদশে ভর্তির আবেদনে নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা। সার্ভার সমস্যা, ফিরতি এসএমএস না আসাসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ঢাকা বোর্ডে সরেজমিনে ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন সমস্যার কারণে আবেদন সম্পন্ন করতে না পেরে ভর্তিচ্ছুরা এসেছেন ঢাকা বোর্ডে। কেউ এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করলেও ফিরতি ম্যাসেজ পায়নি। কারও আবেদন অসম্পন্ন অবস্থায় চূড়ান্ত দেখানো হয়েছে। আবার কারও আবেদন করার সময় তা সম্পন্ন দেখানো হয়েছ।
ঢাকা বোর্ডে আসা রায়হান জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুরের বশির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছি। সোমবার (১৪ মে) ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গিয়ে দেখি অন্য কেউ করে ফেলেছে। বিষয়টি বাসায় জানালে মঙ্গলবার বাবাসহ বোর্ডে লিখিত অভিযোগ জানায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা ঠিক হবে বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।
সভার থেকে এসেছেন সুমাইয়া রিয়া। তারও আবেদন অন্য কেউ করেছে। তাই বোর্ডে এসে অভিযোগ করেছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় একটি দোকানে ভর্তির আবেদন করার সময় দেখি আবেদন আগেই কেউ করে ফেলেছে। বিষয়টি বাসায় জানালে আম্মু আজ বোর্ডে নিয়ে এসেছে। বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগের আবেদন বাতিল হবে বলে বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ২০টির মতো ভুয়া আবেদনের অভিযোগ এসেছে ঢাকা বোর্ডে। শিক্ষার্থীদের অজান্তে এসব আবেদন করা হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে এ কাজ করছে। এমন অভিযোগ ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পরদিন থেকে পাওয়া যাচ্ছে।
বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, বেশ কিছু ভুয়া আবেদনের অভিযোগ পেয়েছি। এসব আবেদন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করে প্রকৃত শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীকে না জানিয়ে আবেদন করাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তবে আবেদন কার্যক্রমে কোনো ভোগান্তি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সহজ ও সুন্দরভাবে একাদশে ভর্তি কার্যক্রম চলছে। গত তিনদিনে প্রায় চার লাখ আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনের সময় কোনো সমস্যা হলে হেল্পলাইনে সহায়তা নেয়া যাবে। পাশাপাশি ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে ঢাকা বোর্ডে একটি সেল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশের আটটি সাধারণ ও মাদরাসা বোর্ডের অধিনে সাত হাজার ৩১৯টি কলেজে ২৮ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৯টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের অধিনে রয়েছে ৯৮৭ কলেজ। সেখানে চার লাখ ৬৬ হাজার ৮৮৭ আসন রয়েছে।
মাদরাসা বোর্ডের অধিনে ৩২ হাজার ৩৬৪টি কলেজে ৪২ হাজার ৭৪৪টি আসন রয়েছে। তাই আসন সংকট হবে না।
জানা গেছে, এবার ঢাকা বোর্ডে মোট ৪ লাখ ৩২ হাজার ২০১ জন পাস করেছে। পাস করা শিক্ষার্থীর চাইতে আসন সংখ্যা বেশি রয়েছে। এছাড়াও আট বোর্ডের অধিনে ২১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৫৯টি আসন রয়েছে। সেখানে এবার ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সাধারণ বোর্ডেও পাসের চাইতে আসন সংখ্যা বেশি রয়েছে।
ভুয়া ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ভুয়া আবেদনের অভিযোগ আসছে। অভিাযোগ আসলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আগের আবেদন বাতিল করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর প্রথমবারের মত এ অপরাধকে দণ্ডনীয় হিসেবে ভর্তি নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জিয়াউল হক বলেন, যে সব কলেজে আসন সংখ্যার চাইতে বরাবর শিক্ষার্থী ভর্তি কম রয়েছে এমন প্রায় ২০০ প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যা কমানো হয়েছে। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীর ভর্তি চাহিদা রয়েছে অথচ আসন কম এমন ১৫০টির মতো কলেজের আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এবার কারিগরি বোর্ডের ভর্তি কার্যক্রম আলাদা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৩ মে থেকে একাদশে অনলাইন ও এসএমএস-এর মাধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে ২৪ মে। তবে পুনর্নিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে, তাদের আবেদন আগামী ৫ ও ৬ জুন পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে। ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরু হবে।
এমএইচএম/এএইচ/এমএস
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন চাকরি ছাড়া কিছুই ভাবতে দিচ্ছে না
- ২ পাঠ্যবইয়ে ত্রুটি, আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রীর ছোট ভাইকে শোকজ
- ৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধে হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব
- ৪ সরকারিতে আসনের চারগুণ আবেদন, সাড়া নেই বেসরকারিতে
- ৫ সাত কলেজের ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরি নির্দেশনা