ইউনেস্কোর প্রতিবেদন : বাংলাদেশের শিক্ষায় জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে
বাংলাদেশের শিক্ষায় সমন্বিত উদ্যোগের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে শিক্ষায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতিও তৈরি হয়েছে। জবাবদিহিতার প্রশ্নে চলছে দোষারোপের খেলা। এই খেলা বন্ধ করতে হবে। কেননা, শিক্ষা হল অংশীদারিত্বমূলক দায়িত্ব। সবাই মিলেই শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে হবে। ইউনেস্কোর সর্বশেষ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং (জিইএম) রিপোর্টে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এবারের প্রতিবেদনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘শিক্ষায় জবাবদিহিতা : আমাদের দায়বদ্ধতা পূরণ’। প্রতিবেদনটি আজ (মঙ্গলবার) বাংলাদেশে প্রকাশিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় রাজধানীর বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোতে (ব্যানবেইস) এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন।
এবারের প্রতিবেদনে অভিভাবক বা পরিবার থেকে শুরু করে স্কুল, শিক্ষক, সরকার, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষায় জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কী ভূমিকা রাখা প্রয়োজন সেই তথ্য ও সুপারিশ স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সকল অংশীজনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সবার আগে সরকার গঠনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার অধিকার অর্জনে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে জানানো, সংসদীয় কমিটির কার্যকর ভূমিকা, সামাজিক আন্দোলন, বিচার ব্যবস্থার কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ তথা সম্পদের সমতাভিত্তিক বণ্টন থাকতে হবে। শিক্ষায় কার্যকর পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন থাকতে হবে। এজন্য সাক্ষ্যপ্রমাণভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকল্পনা দরকার।
প্রতিবেদনে সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার জন্য পিতামাতা ও শিক্ষার্থীর বেশ কয়েকটি দায়িত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে- স্কুলে নিয়মিত উপস্থিতি, স্কুল পালানো বন্ধ, শর্তাধীন অর্থ হস্তান্তর, স্কুলে অভিভাবক সভা, স্কুলে আচরণবিধি ঠিক করা তথা শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভাল ব্যবহার।
স্কুলের কিছু দায়িত্ব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে, স্কুলের সামগ্রিক উন্নয়ন। ফলাফলভিত্তিক শাস্তি ও পুরস্কারের ব্যবস্থা। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শিক্ষালয়। শিক্ষালয়ের অনুমতি ও স্বীকৃতি প্রাপ্তি, পরিদর্শন, স্কুল ব্যবস্থাপনা ও সহায়ক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করার নাম দেয়া হয়েছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শিক্ষালয়।
প্রতিবেদনে শিক্ষক সংক্রান্ত কিছু দিক উল্লেখ আছে। এর মধ্যে রয়েছে, শিক্ষক মূল্যায়ন, কাজের মাননির্ভর বেতন প্রদান, উচ্চমানের জেন্ডার সমতাভিত্তিক শিক্ষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবীক্ষণ, পেশাগত শিখন সমাজ, নৈতিকতার বিধান তথা পেশাগত রীতি। প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক সংস্থার কিছু ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে। এগুলো হচ্ছে- আন্তর্জাতিক সংস্থায় অংশগ্রহণ, দেশের সাধারণ লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা, লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা ও অনুদান। এতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা সম্পর্কে তিনটি দিক চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে- স্কুল পরিবেশিত খাদ্য। এ ব্যাপারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণেও স্বচ্ছতা দরকার। স্কুলে শিখন উপকরণ আসে বেসরকারি খাতের সহায়তা। স্কুলের শিক্ষার বাইরে গৃহশিক্ষকতা প্রথা বহাল আছে বিভিন্ন দেশে। এর জন্য আচরণবিধি দরকার।
প্রতিবেদনে শিক্ষার জবাবদিহিতার ব্যাপারে গণমাধ্যমের ভূমিকা উল্লেখ করে বলা হয়, শিক্ষা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম এ ব্যাপারে সরকারের ওপর নজরদারি করতে পারে। সরকারের কৃতকর্ম মূল্যায়ন করে তারা নাগরিকদের সাহায্য করতে পারে।
প্রতিবেদন সম্পর্কে বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো (বিএনসিইউ) সচিব মনজুর হোসেন সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবেদনে সাতটি প্রধান ও বারটি উপ-সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে আছে, তিনটি পৃথক পদক্ষেপ নিয়ে সরকারকে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন এবং যথাক্রমিক দায়িত্ব পালনে একটি অংশীদারিত্বমূলক বোঝাপড়া গড়ে তুলতে অর্থবহ পরিস্থিতি এবং প্রতিনিধিত্বমূলক সম্পৃক্তি সৃষ্টি করতে হবে। সরকারকে শিক্ষা পরিকল্পনা ও স্বচ্ছ বাজেট তৈরি করতে হবে। এর জন্য সুস্পষ্ট দায়িত্ব বণ্টন ও প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নিরীক্ষা পদ্ধতি থাকবে। স্কুল ও শিক্ষকের এমন জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে হবে যা সহযোগিতামূলক এবং গঠনমূলক হবে। বিশেষ করে কাজের ভাল-মন্দের ব্যাপারে সংকীর্ণ ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা পরিহার করতে হবে। সরকারকে গণতান্ত্রিক মতামতের সুযোগ দিতে হবে।
সুপরিশে বলা হয়েছে, শিক্ষার বিষয় খুটিয়ে দেখতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় সুরক্ষা দিতে হবে। অভিযোগ চিহ্নিত করার জন্য নাগরিকদের স্বাধীন সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার উন্নয়নে কার্যকরী জবাবদিহিতা বাস্তবায়নের জন্য তথ্য, সম্পদ এবং সক্ষমতার ব্যাপারেও আলাদা পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বচ্ছ, প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগী এবং উপাত্ত নীতিনির্ধারকদের কাছে প্রাপ্ত হতে হবে। পর্যাপ্ত আর্থিক যোগান দিতে হবে এবং দায়িত্ব পালনে শিক্ষক ও অন্যান্যদের যথাযথ দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এমএইচএম/এমবিআর/জেআইএম