ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

মন্ত্রীর কাছে নানা সমস্যা তুলে ধরলেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ০৮ মার্চ ২০১৮

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান এবং সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামানের কাছে নানা সমস্যা ও আবদার তুলে ধরলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাদের তুলে ধরা সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকট, প্রশ্ন প্রণয়নে সমস্যা, স্কুলে ‘মিডডে মিল’ চালু না করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের মধ্যে সমন্বয় না থাকা ইত্যাদি।

‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে যোগাযোগ ও সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ’বিষয়ক এক কর্মশালায় অংশ নিয়ে দেশের চার বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তার বৃহস্পতিবার এসব সমস্যার কথা তুলে ধরেন। রাজধানীর ন্যাশনাল বাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই)।

কর্মশালায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উপ-পরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিনন্টেডেন্ট, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সহকারী সুপারিনন্টেডেন্ট, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইনস্ট্রাক্টর, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের সহকারী ইনস্ট্রাক্টর, মনিটরিং অফিসার (উপবৃত্তি), সহকারী মনিটরিং অফিসার, বিভিন্ন পর্যায়ের অফিস স্টাফ, স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ প্রায় দুই হাজার ৫০ জন কর্মকর্তা এতে অংশ নেন। মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন তারা।

কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পিয়ারা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার দিতে না পারায় তাদের ফুলটাইম স্কুলে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তাই মায়েদের উদ্বুদ্ধ করে বাচ্চাদের জন্য মিডডে মিল সঙ্গে পাঠানোর জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে।

রমনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি শামিমারা শিমুল বলেন, তার স্কুলে ১০ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও সেখানে ছয়জন শিক্ষক রয়েছেন। তাই প্রতিদিন একজন শিক্ষককে আট থেকে ১০টি করে ক্লাস করতে হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা মনোযোগ দিয়ে পড়াতে পারছেন না। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ জানান তিনি।

ফরিদপুর জেলার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) ইনস্ট্রাক্টর ফিরোজ মিয়া বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সমন্বয় কম। মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে উভয়ের মধ্য সমন্বয় বাড়ানো দরকার।

Primary-2

পটুয়াখালীর শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আলী খান বলেন, প্রাথমিক স্কুলে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরিতে জাতীয়ভাবে কোনো কাঠামো তৈরি করা হয়নি। এ কারণে একেক স্কুলে একেক রকম প্রশ্ন তৈরি করা হয়। জাতীয়ভাবে যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্ন তৈরির দাবি জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ জেলা প্রাথমিকের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কুব্বত আলী বলেন, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা সংকট রয়েছে। এ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ৩০ বছরে মাত্র একটি পদোন্নতি হচ্ছে। তাদের বসবারের জন্য নেই কোনো বাসস্থান। এসব সমস্যা নিরসণের দাবি জানান তিনি।

মাঠ পর্যায়ে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা, শিক্ষকদের নির্ধারিত ইউনির্ফম, আইসিটি ইন্সট্রাক্টর, শৈশপ্রহরী নিয়োগ, পরিদর্শনের গাড়ি বরাদ্দ, ভালো কাজের জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ প্রদান, বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনের দাবি জানান সংশ্লিষ্টরা।

প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে শিক্ষার বিষয়ে একমত হতে হবে। এ বিষয়ে কোনো রাজনীতি নেই। আমরা সবাই মিলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সুন্দর করে তুলতে হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়ে বিদ্যালয়মুখী হয়। শিক্ষকরা দরদ দিয়ে পড়ালেখা করালে মানসম্মত শিক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।

দুপুরে খাবার দেয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ উদ্যোগ সন্তানের মায়েদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেন তারা প্রতিদিন তাদের সন্তানদের সঙ্গে খাবার পাঠিয়ে দেন। যদি সরকার পরিবর্তন হয়, তবুও এই উদ্যোগ পরিবর্তন হবে না। সরকার বই দিচ্ছে, উপবৃত্তি দিচ্ছে। মায়েরা শুধু খাবার দেয়ার অনুরোধ জানান। আগামী মাস থেকে সারা দেশে এর কার্যক্রম চালু করা হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামানে বলেন, আপনাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া ও পরামর্শগুলো আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের সব সহকারী প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসারের কাজের সুবিধার্থে একটি করে ডিজিটাই ডিভাইজ (ট্যাব) দেয়া হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকের দ্বারা মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। কিন্তু সবার মধ্যে সেই বোধ তৈরি না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর জন্য দায়ী মাঠ পর্যায়ের পরিদর্শকরা। সবার অবস্থান থেকে নিজ নিজ কাজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দেন তিনি।

এছাড়াও সভায় বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এফ এম মঞ্জুর কাদির, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তাফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব মো. রমজান আলী।

এমএইচএম/জেডএ/পিআর

আরও পড়ুন