চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে একদল মানুষ। কেউ শুয়ে আছেন, কেউবা বসে। সেখানে তাদের অবস্থান পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এসব মানুষের পরিচয় তারা শিক্ষক। এসেছেন দাবি আদায়ে।
জাতি গঠনের এসব কারিগর নিজেদের দাবি আদায়ে ঘুমাচ্ছেন রাস্তায়, চলছে তাদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। শীতের সকালে মিঠে রোদ এসে খেলছে প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায়, আর সেখানেই খোলা আকাশের নিচে শিক্ষকরা বিগত কয়েকদিন যাবৎ রাতে শুয়ে-বসে সময় কাটিয়েছেন।
স্বীকৃতপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দাবিতে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে আগামীকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যাবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
দাবি আদায়ের এ আন্দোলনে যোগ দিতে লালমনিরহাট থেকে এসেছেন গোবধা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘১৭ বছর চাকরি করি এখনও কোনো বেতন পাইনি। অভাবের সংসার চলে কিছুটা কৃষি কাজ করে। বেতন না থাকায় পরিবারের কাছে লজ্জায় থাকতে হয়। সে কারণে দাবি আদায়ে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি; আগামীতে আমরণ অনশনে যাব। এই শীতের রাতে পলিথিন বিছিয়ে আমর মত শত শত শিক্ষক এখানে রাত কাটাচ্ছেন। আমাদের চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই। শিক্ষকদের এমন দু:খগাথা জীবন থেকে পরিত্রাণ চাই। সরকার যেন আমাদের দাবি মেনে নেন’।
সঠিবারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ইউসুফ আলী তিনিও এসেছেন দাবি আদায়ের এ আন্দোলনে। বলেন, ‘সবাই আমাদের জাতি গড়ার কারিগর বলে সম্বোধন করে; কিন্তু এই জাতি গড়ার কারিগররাই আজ অভাবে দু:খ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। বুক ভরা আশা নিয়ে দাবি আদায়ের এই আন্দোলনে এসেছি। গত ২৬ তারিখ থেকে খেয়ে না খেয়ে এক কাপড়ে এখানে অবস্থান করছি’।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আরেক শিক্ষক না নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি ১৫ বছর ধরে শিক্ষকতা করি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বেতন পাইনি। আমার স্ত্রী সেলাইয়ের কাজ করে, তা দিয়েই সংসার চলে। স্ত্রী সন্তানের চাওয়া পাওয়া কখনই পূরণ করতে পারিনি, তাদের কাছে লজ্জা পাই। এই হল আমারা নন-এমপিও শিক্ষকদের জীবন। এ কারণে দাবি আদায়ের আন্দোলনে এসেছি’।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড.বিনয় ভূষণ রায় জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে আমাদের এই অবস্থান কর্মসূচি চলছে। আজ সারাদিন দেখবো, আশানুরূপ ফল না আসলে আগামীকাল থেকে আমরা অনশন কর্মসূচিতে যাবো।
কর্মসূচি পালনকালে শিক্ষক নেতারা বলেন, সরকারের হিসাব মতে বর্তমানে দেশে ৫ হাজারের অধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতিপ্রাপ্ত অবস্থায় আছে, যা এমপিও প্রত্যাশী। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত বিনা বেতনে শিক্ষাদানের মত মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন। সেখানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ১ লাখেরও বেশি। আর পাঠদান করা হচ্ছে ২৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থীকে।
তারা বলেন, ‘নন এমপিও এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই নিয়ম নীতি, কারিকুলাম, সিলেবাস ও প্রশ্নপদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। তাদের নিয়োগ পদ্ধতিতেও কোনো পার্থক্য ছিল না বা বর্তমানেও নেই। অথচ নেই শুধু এমপিও নামক অর্থনৈতিক মুক্তির ছোঁয়া। অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আমরা রাজপথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছি। এমপিও আদায়ের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না’।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারের সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে সারা দেশ থেকে আসা নন-এমপিও শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন।
এএস/এমএমজেড/এমএস/আইআই
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - শিক্ষা
- ১ ইউজিসি ঘেরাও করে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- ২ গুচ্ছ ভর্তি বহাল রাখতে ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে জরুরি নির্দেশনা
- ৩ শনিবারও বন্ধ থাকবে স্কুল, সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনই বহাল
- ৪ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২৫ সালে ছুটি ৭৬ দিন, তালিকা প্রকাশ
- ৫ সরকারি-বেসরকারি স্কুলে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা জুনে, বার্ষিক নভেম্বরে