ইশরাত-সঞ্চিতা-এশাদের টার্গেট এখন মেডিকেলে ভর্তি
এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমেছে। তবে যারা জিপিএ-৫ পেয়ে অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিষ্ঠানের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তাদের ভাবনা কী? তাদের কেউ মেডিকেলে, কেউবা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়তে চান। তবে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর ইচ্ছা মেডিকেলে পড়ে চিকিৎসক হওয়া।
রোববার শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের পরপরই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তালিকা নোটিশ বোর্ডে টাঙানোর পরেই স্লোগানে ক্যাম্পাস প্রকম্পিত করে তোলে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা গেছে, জিপিএ-৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দের বন্যা। একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি। বাদ্যের সঙ্গে নৃত্য। বাবা-মায়ের বুকে মাথা গুঁজে কারও কারও আনন্দঅশ্রুও বিসর্জন। কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ব্যস্ত স্বজনদের সুখবর জানাতে।
পাসের হার গত বছরের ন্যায় প্রায় একইরকম থাকলেও এবার জিপিএ-৫-এর সংখ্যা কমেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মেধার পরিচয় দিয়ে উত্তীর্ণ হতে চেষ্টা ও পরিশ্রম আরও বাড়িয়ে দেবারই প্রতিশ্রুতির কথা জানালেন শিক্ষার্থীরা।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মাত্র ৫৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৭৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
ইশরাত জাহান নুসা ফলাফল জানতে মায়ের সঙ্গে এসেছেন কলেজ প্রাঙ্গণে। বিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ায় মাকে জড়িয়ে উল্লাস করেন। আবেগে কেঁদে ফেলেন।
পরে জাগো নিউজকে বলেন, এসএসসির পরেই আমি টার্গেট নিয়েছিলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ব। সেজন্য চেষ্টা ছিল এইচএসসিতে যেন কোনোভাবে রেজাল্ট খারাপ না হয়। সেটা আমি করতে পেরেছি। শিক্ষক, মা-বাবার সহযোগিতা ও দোয়া ছিল। আমার এখন মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়াই প্রধান টার্গেট।
তার মা শামসুন্নাহার গৃহিনী। সবসময় চোখে চোখেই মেয়েকে খেয়ালে রাখতেন। তিনি বললেন, তার (মেয়ের) বাবা কলেজশিক্ষক তাই মা হিসেবে সার্বক্ষণিক মেয়েকে দেখাশোনা করাই ছিল আমার প্রধান কাজ।
এই গৃহিনী বলেন, মেয়ে ও আমাদের ইচ্ছা মেডিকেলে পড়া। ওর ইচ্ছা পূরণের পথটা এবার ফলাফলের মাধ্যমে এগিয়ে গেল। ওকে ডাক্তার হিসেবে দেখতে পারলে জীবনে আর কোনো অপূর্ণতা থাকবে না।
বাজনা ও সাইট ড্রামের তালে-তালে পাশেই উল্লাস করছিলেন সঞ্চিতা। তিনি এসেছেন মা গীতাঞ্জলি সূত্রধরের সঙ্গে। ব্যবসায়ী বাবা নিরঞ্জন সূত্রধর ব্যস্ত সময় পার করলেও মেয়ের ফলাফল জানতে ভুলে যাননি। মোবাইল ফোনে জেনে নেন।
মা গীতাঞ্জলি বলেন, ওর বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবার। পারেননি। ব্যবসায় শেষমেশ পেশা হয়েছে। মেয়ের মাধ্যমে নিজের সে ইচ্ছের পূর্ণতা দেখতে চান তিনি।
সঞ্চিতা বলেন, ভালো ফলাফলে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। এখন সামনের পথ মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধ। সেখানেই যেন সফল হই প্রার্থনা করবেন।
ফলাফল পেতে দেরি হওয়ায় ছটফট করছিলেন এশা। মন মানছিল না। মায়ের মুখেই জিপিএ-৫ পাওয়ার সংবাদ শোনেন। কেঁদে ওঠেন এশা। মাকে জড়িয়ে বলেন, ‘মা আমি তোমার কথা রেখেছি।’ এবার দোয়া করো যেন মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।
কথা হয় সুমনের সঙ্গে। সুমন জানান, মা মিষ্টি কিনতে গেছেন। তিনি অত্যন্ত খুশি আমি জিপিএ-৫ পেয়েছি। আমার ইচ্ছে বুয়েটে পড়া। সেখানে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ব। বাবার ইচ্ছা মেডিকেল। মা আমার পক্ষে।
নিজ কার্যালয়ের দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উল্লাস দেখছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আমিনুর রহমান খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ফলাফল আমাদের অপ্রত্যাশিত। জিপিএ কম এসেছে। এমনটা হবে ভাবিনি। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের কারণে এমনটি হতে পারে। তাছাড়া এবার বাংলায় পরীক্ষার প্রশ্নে একটু সমস্যা হয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয় সেজন্য আমরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে আরেকবার বৈঠকে বসব। সেখানে তাদের কিছু বিষয়ে পরামর্শ দেব। আগামীতে জিপিএ-৫ অর্জনে শিক্ষার্থীদের আরও বেশি নিবিড় পরিচর্যা করার কথা জানান তিনি।
উল্লেখ্য, দেশের শীর্ষস্থানীয় এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে এবার এক হাজার ৩৭০ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭৮৯ জন, যার শতকরা হার ৫৭ শতাংশ।
বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৮৭৫ জনের মধ্যে ৭২০ জন, ব্যবসায় শাখা হতে ৩৮৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৭ জন এবং মানবিক বিভাগ হতে ১১১ জনের মধ্যে জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন মাত্র ২২ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
প্রতিষ্ঠানটি থেকে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিল এক হাজার দুজন, যা ছিল ৭৪ দশমিক ১৭ শতাংশ।
জেইউ/জেডএ/জেআইএম