অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি মানতে নারাজ শীর্ষস্থানীয়রা
শিক্ষার্থীদের নম্বরপত্রে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি মানতে নারাজ শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রদত্ত গ্রেডিং ব্যবস্থা অযৌক্তিক দাবি করে এটি অনুসরণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইচ্ছামতো গ্রেডিং (নম্বর পদ্ধতি) অনুসরণ করায় নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। চাকরির বাজারেও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০০৬ সালে ইউজিসি একটি অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি তৈরি করে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তা বাধ্যতামূলক মূল্যায়নের নির্দেশনা দেয়া হয়। বেসরকারি ৯৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অধিকাংশই এ পদ্ধতি অনুসরণ করলেও শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ইউজিসি প্রদত্ত গ্রেডিং অনুযায়ী, ৮০ বা এর বেশি নম্বরের জন্য ‘এ+’ আর সিজিপিএ- ৪, ৭৫ থেকে ৮০ নম্বরের নিচে ‘এ রেগুলার’ আর সিজিপিএ- ৩ দশমিক ৭৫, ৭০ থেকে ৭৫ এর নিচে ‘এ-’ আর সিজিপিএ- ৩ দশমিক ৫, ৬৫ থেকে ৭০ এর কম ‘বি+’ আরও সিজিপিএ- ৩ দশমিক ২৫, ৬০ থেকে ৬৫ এর কম ‘বি রেগুলার’ আর সিজিপিএ-৩, ৫৫ থেকে ৬০ এর কম ‘বি-’ আর সিজিপিএ- ২ দশমিক ৭৫, ৫০ থেকে ৫৫ এর কম ‘সি+’ আর সিজিপিএ- ২ দশমিক ৫, ৪৫ থেকে ৫০ এর কম ‘সি রেগুলার’ আর সিজিপিএ- ২ দশমিক ২৫, ৪০ থেকে ৪৫ এর কম ‘ডি’ আর সিজিপিএ- ২ এবং ৪০ এর কম হলে ‘এফ’ দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
অথচ দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ইচ্ছামতো নম্বরপত্রে গ্রেডিং ব্যবহার করছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) শিক্ষার্থীদের ৯০ বা এর বেশি নম্বরের ক্ষেত্রে ‘এ+’ দেয়া হচ্ছে। ৮০ নম্বর পেলে ‘এ+’ না দিয়ে শুধু ‘এ’ গ্রেড দেয়া হচ্ছে। সিজিপিএ দেয়া হচ্ছে ৩ দশমিক ৭৫।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ইউআইইউ) ৮৫ নম্বরে ‘এ+’ দেয়া হচ্ছে। এর কম পেলে ‘রেগুলার এ’ গ্রেড ব্যবহার করা হচ্ছে। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও একই ভাবে গ্রেডিং ব্যবহার করছে। এছাড়া ইচ্ছামতো গ্রেডিং ব্যবহারের তালিকায় রয়েছে- ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, রয়েল ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউল্যাব ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি’সহ বেশ কয়েকটি নামিদামি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।
রাজধানীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একাধিক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রেডিং পদ্ধতিতে ভিন্নতা থাকায় তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কেউ ৮০ নম্বরের বেশি পেয়েও ‘এ+’ পাচ্ছেন না আবার কেউ ৮০ পেয়ে ‘এ+’ পাচ্ছেন। ফলে ভালো ফল করেও তারা বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করলে এ সমস্যার মুখে তাদের পড়তে হতো না।
অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ না করার বিষয়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক আতিকুর ইসলাম বলেন, ইউজিসির গ্রেডিং পদ্ধতি যুগোপযোগী নয়। এ কারণে আমরা আন্তর্জাতিক গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করে থাকি।
তিনি বলেন, নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান পরিচালন করে। সেখানে ইউজিসি কিছু চাপিয়ে দিলে তা মানতে হবে- এমন কোনো চুক্তি নেই।
‘বিশ্বের কোথাও অভিন্ন গ্রেডিং ব্যবহার হয় না’ দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘এ পদ্ধতি আন্তর্জাতিক বাজারে গ্রহণযোগ্য নয়। তবে কেন তা চাপিয়ে দেয়া হবে?’
আতিকুর ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কিংয়ের কোনো মাপকাঠি নেই। প্রতিষ্ঠান তার ইচ্ছামতো এ পদ্ধতি তৈরি করতে পারে।’
শিক্ষার্থীরা এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গ্রেডিং অভিন্ন হলে বরং শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের স্বীকার হবে।’ ‘ইউজিসি কী উদ্দেশে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে’- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার যেকোনো নিয়ম চালু করতে পারে কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তা চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।’
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজওয়ান খান বলেন, ইউজিসি’র গ্রেডিং পদ্ধতিতে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। তাই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, ‘বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং এক হলেও এর মান এক হবে না। এটি মানুষের কাছেও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি বাস্তবসম্মত নয়।’
এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, সবাইকে অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে আমরা এ পদ্ধতি চুলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটি বাস্তবায়নে একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতি কারা অনুসরণ করছে আর কারা করছে না, সেই তালিকা তৈরি হচ্ছে। যারা নিয়ম মানবে না তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচএম/এমএআর/পিআর