নীতিমালার মধ্যে আসছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়া
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া, বেতন কাঠামো নির্ধারণ, পদোন্নতি, অবসর সুবিধাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।
নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণের মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিগগিরই নিয়োগবিধির খসড়া প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেও অবসরে যাওয়ার সময় খালি হাতে বিদায় নিতে হচ্ছে তাদের। এখানে শিক্ষকদের পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। নেই কোনো বেতন স্কেল, ইচ্ছামতো বেতন নির্ধারণ, যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া চাকরিচ্যুত, অর্থ আদায়ের মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ এবং ট্রাস্টি বোর্ড সদস্যদের মনোনীতদের নিয়োগে অগ্রাধিকার, তাদের অযাচিত ক্ষমতার অপব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে শিক্ষকদের অভিযোগ।
সম্প্রতি আশা ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।
ইউজিসি কর্মকর্তারা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, নিয়োগবিধি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরা ইচ্ছামতো নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন। শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মধ্যে আনতে ইউজিসি উদ্যোগ নিয়েছে।
তারা বলেন, ইতোমধ্যে খসড়া নিয়োগবিধি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তা প্রেরণ করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে ইউজিসি থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রজ্ঞাপনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত নীতিমালা বাধ্যতামূলক অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হবে।
চলতি মাসের মধ্যেই নিয়োগবিধির খসড়া তৈরির কাজ শেষ হবে বলেও জানান তারা।
আশা ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফেরদৌস আরা তুলি জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেসরকারিতেও শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা থাকা জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগে কোনো বিধিমালা না থাকায় শিক্ষকরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের সব সময় অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিয়োগবিধিতে কী করলে শিক্ষকদের চাকরি যাবে না আর কী করলে পদোন্নতি পাওয়া যাবে- এসব বিষয়ে কোথাও উল্লেখ নেই। কিন্তু বিষয়গুলো থাকার প্রয়োজন ছিল।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও পদোন্নতির বিষয়টি সুস্পষ্ট করারও অনুরোধ জানান তিনি।
‘নিয়োগবিধি’ থাকা বাঞ্ছনীয় উল্লেখ করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফজলুল রহমান বলেন, নিজস্ব নিয়মে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। ফলে তাদের (ট্রাস্টি সদস্য) নির্দেশনা বাস্তবায়নই শিক্ষকদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়।
শিক্ষকদের চাকরির বয়সসীমা, অবসর সুবিধাসহ অন্য সুবিধাগুলো নিয়োগবিধিতে সংযোজিত হওয়া উচিত- মন্তব্য করে এ শিক্ষক আরও বলেন, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না- সরকার এমন ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ বৈষম্য দূর করতে দ্রুত যুগোপযোগী নিয়োগবিধি প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহাবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। অথচ সেখানকার শিক্ষকদের জন্য কোনো নিয়োগবিধি নেই।
‘এটি জাতির জন্য হতাশাজনক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে আগে শিক্ষকদের সঠিক মর্যাদা দিতে হবে। নতুবা চাকরি ও বেতনের অনিশ্চয়তা মাথায় নিয়ে শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদান করতে হবে, যা জাতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।’
তিনি নিয়োগবিধিতে শিক্ষকদের সব সুযোগ-সুবিধা স্পষ্ট করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
নিয়োগবিধি প্রণয়নের বিষয়টি স্বীকার করে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুবিধার্থে একটি নিয়োগবিধি তৈরির কাজ চলছে।
তিনি বলেন, নিয়োগবিধি বাস্তবসম্মত করা হবে। এখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সবার চাকরির নিশ্চয়তা দেয়া থাকবে। কী কী কারণে চাকরি যেতে পারে তাও উল্লেখ করা হবে।
চেয়ারম্যান বলেন, শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগ্যতা, সুযোগ-সুবিধা, পদোন্নতি, অবসর সুবিধাসহ সব বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া থাকবে নিয়োগবিধিতে। কেউ এর ব্যত্যয় ঘটালে শিক্ষকরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবিধির আলোকে এটি প্রণয়ন করা হবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়োগবিধির খসড়া প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। সেখান থেকে অনুমোদন দেয়া হলে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেয়া হবে।
দেশে বর্তমানে ৯৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। শিক্ষকের সংখ্যা (পূর্ণ ও খণ্ডকালীন) প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া প্রায় পাঁচ হাজার কর্মকর্তা এবং সাত হাজার কর্মচারী রয়েছেন।
এমএইচএম/এমএআর/জেআইএম/জেআইএম