ভিডিও EN
  1. Home/
  2. শিক্ষা

শতবর্ষে পা রাখছে কারমাইকেল কলেজ

প্রকাশিত: ০২:৩৭ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৬

বাঙালির শিক্ষা-দীক্ষা, আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের প্রতীক উত্তরের অক্সফোর্ডখ্যাত প্রাচীনতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রংপুর কারমাইকেল কলেজ। চলতি বছরই এই বিদ্যাপীঠ শতবর্ষে পা দিতে যাচ্ছে।
 
শতবর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে ‘শতবর্ষে শতপ্রাণ, ঐতিহ্যের জয়গান’ স্লোগান সামনে রেখে আগামী ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অধীন নিয়মিত কাজ করছে ১৭টি উপ-কমিটি। ইতোমধ্যেই কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। যেখানে নিবন্ধিত হয়েছেন কলেজটির বর্তমান ও সাবেক প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক।

১৯১৬ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার গভর্নর লর্ড থমাস ডেভিড ব্যারন কারমাইকেল এই ঐতিহাসিক কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তার নামানুসারেই কলেজের নামকরণ করা হয় কারমাইকেল কলেজ।

Rangpur

১৯১৭ সালের জুলাই মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই কলেজে আইএ ও বিএ ক্লাস খোলার অনুমতি দেয়। সেই সময় থেকে প্রায় দুই বছরের জন্য কলেজটির পঠনপাঠনের কাজ চলে রংপুরের বর্তমান জেলা পরিষদ ভবনে। এরপর ১৯১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কারমাইকেল কলেজের মূল ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

অবিভক্ত বাংলার যে ক’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিপুল খ্যাতি অর্জন করেছিল এর মধ্যে কারমাইকেল কলেজ রয়েছে প্রথম সারিতে। ইংরেজ আমলের অবিভক্ত বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও প্রচারের জন্য অসামান্য খ্যাতির অধিকারী এই কারমাইকেল কলেজ। তৎকালীন রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চলসহ অবিভক্ত ভারতের জলপাইগুড়ি, আসাম ও সংলগ্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস।

তৎকালীন সময়ে রংপুরে উচ্চবিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকলেও কলেজ পর্যায়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্যে ঘেরা নয়নাভিরাম এই ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় আটশ বিঘা জমি নিয়ে। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ ২১টি বিষয়ে সম্মান ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়ন করছেন প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থী।

জমিদারি স্থাপত্যের যেন এক অনন্য নিদর্শন। চারদিকে সবুজের সমারোহের মধ্যে যেন গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দ্য সুন্দর স্থাপত্য কীর্তি কারমাইকেল কলেজের শ্বেতশুভ্র মূল ভবন।

Rangpur

কলেজে ঢুকতেই হাতের বাঁয়ে পড়বে শিক্ষকদের আবাসিক ভবন। একটু এগিয়ে গেলে শিক্ষকদের ডরমেটরি, যা ‘হোয়াইট হাউস’ নামে পরিচিত। পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কিউএ মেমোরিয়াল প্রাথমিক বিদ্যালয় (কলেজ প্রাইমারি স্কুল)। আরো সামনের দিকে এগোলে চৌরাস্তা বা জিরোপয়েন্ট।

এছাড়া রয়েছে একটি সুদৃশ্য মসজিদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র, দ্বিতল ছাত্রী বিশ্রামাগার, বিভিন্ন বিভাগীয় ভবন, ক্যান্টিন, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল, সাব পোস্ট অফিস, অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম (নির্মাণাধীন), একটি টালি ভবন (বিএনসিসি ও স্কাউট), ছাত্র বিশ্রামাগার, পুলিশ ফাঁড়ি, প্রশাসনিক ভবন, বিশাল দুটি খেলার মাঠ। মূল ভবনের পূর্বে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মারক ভাস্কর্য, যা নতুনমাত্রা যোগ করেছে মূল ভবনের নান্দনিকতায়।

Rangpur

দক্ষিণে শহীদ মিনার, তিনতলা বিজ্ঞান ভবন (সেকেন্ড বিল্ডিং), তিনতলা কলা ও বাণিজ্য ভবন (থার্ড বিল্ডিং), দ্বিতল রসায়ন ভবন, নানা ফুলে সজ্জিত একটি বাগান। রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার বইয়ের এক বিশাল ভাণ্ডারসমৃদ্ধ লাইব্রেরি, যা কলেজ প্রতিষ্ঠাকালীন রংপুর জেলা গ্রন্থাগার থেকে ২৫০টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। কলেজের মূল ভবনের ঠিক মাঝে রয়েছে ‘আনন্দমোহন হল’।

উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, যা ‘বাংলা মঞ্চ’ নামে পরিচিত। কলেজের সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র এটি। পড়ার ফাঁকে নানামুখী সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। রয়েছে একাধিক সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিতর্ক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সব মিলিয়ে সারা বছরই প্রাণোচ্ছল রংপুর কারমাইকেল কলেজ।

বহু খ্যাতিমান পণ্ডিত, গবেষক ও জ্ঞানতাপসের ছোঁয়া রয়েছে কারমাইকেল কলেজে। এখানে পড়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমাম, রাজনীতিক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, কলাম লেখক আনিসুল হক, সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব ও বর্তমানে সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ এ দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে নামকরা আরো অনেকে।

কথা বললে শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর তোফায়েল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, শতবর্ষের এই উৎসবে কলেজটির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ ও কৌতূহল কাজ করছে। শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে রাত-দিন কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি কলেজটির দেশবরেণ্য সব শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে প্রাণ ফিরে পাবে। কলেজ প্রাঙ্গণ পরিণত হবে এক মহামিলন মেলায়।

এমএএস/এবিএস