প্রশ্নের মান নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনপত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ সংখ্যক ৯০ হাজারেরও বেশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলেও প্রশ্নের মান নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। কেউ বলেছেন প্রশ্ন কঠিন হয়েছে আবার কেউ বলেছেন প্রশ্ন মানসম্পন্ন হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র ও তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে একাধিক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে প্রশ্নের মান নিয়ে এই মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানা গেছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবার ১৭টি মেডিকেল কলেজ ও একটি ডেন্টাল কলেজসহ মোট ১৮টি কেন্দ্রের ৩৭টি ভেন্যুতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভবনের (লেকচার থিয়েটার, আর্টস ফ্যাকাল্টি, সামাজিক বিজ্ঞান ও বিজনেস ফ্যাকাল্টি) মোট ১১৭ রুমে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাবা-মা’র সঙ্গে এসছিলেন ফারিহা আক্তার স্বপ্না। অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এ বছরই এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি।
পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে বের হয়ে ফারিহা আক্তার বলেন, ছোটবেলা থেকেই একজন চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে এসেছি। আমার এই স্বপ্নের সাথে বাবা-মার স্বপ্ন যুক্ত হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই ভালো পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। প্রশ্ন মানসম্পন্ন হয়েছে। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা।
রাইফেলস কলেজ থেকে পাশ করা আরেক শিক্ষার্থী তন্ময় আহমেদ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিলেন বন্ধু এহসানুলকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, মানুষের সেবা করার জন্য চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। ভর্তি পরীক্ষা মোটামুটি ভালো হয়েছে, তবে প্রশ্ন কিছুটা কঠিন হয়েছে।
কেন্দ্রে যখন ভর্তিচ্ছুরা চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন তখন পরীক্ষা হলের বাহিরে অভিভাবরা উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার্থীরা বের হওয়ার পর অভিভাবকরা ছুটে গিয়ে খোঁজ নিয়েছেন সন্তানদের।
এমনই একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর মা রেহেনা খাতুন বলেন, আমার মেয়ের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার। অভিভাবক হিসেবে অনেক চিন্তিত ছিলাম তবে মেয়ে জানিয়েছে, তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। মেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হলে তার এত দিনের পরিশ্রম স্বার্থক হবে।
তেজগাঁও কলেজ কেন্দ্রে অংশগ্রহণকারী তাইফুল আলম ডরিন নামে এক শিক্ষার্থী জানান, প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে। নৈর্ব্যক্তিকের অপশনগুলো অনেক বিভ্রান্তিকর ছিল। তবে আশা করছি খাতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হলে পাস মার্ক থাকবে।
শান্তা ইসলাম নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, পদার্থবিজ্ঞান এবং সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলো একটু কঠিন ছিল। বাকিগুলো মোটামুটি সহজই ছিল। খুব ভালো পরীক্ষা হয়েছে। আশা করছি পাস করতে পারবো।
এদিকে ভর্তি পরীক্ষা তদারকির জন্য ১৪৩ সদস্যের সমন্বয়ে পৃথক তিনটি টিম গঠন করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এমবিবিএস কোর্সের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।
এই কমিটির সদস্য বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, এবারের পরীক্ষার সার্বিক বিষয় তদারকি করার জন্য টিমও গঠন করা হয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে খুব ভালো পরিবেশে এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে সোহরাওয়ার্দীর পরীক্ষা তেজগাঁও কলেজে, সলিমুল্লাহর পরীক্ষা ঢাকা কলেজে, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এবং ল্যাবরেটরি স্কুলে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া ঢাকা ডেন্টাল কলেজের পরীক্ষা ঢাকা ডেন্টাল কলেজেই অনুষ্ঠিত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বর্তমানে ১০০টি মেডিকেল (সরকারি ৩০, বেসরকারি ৬৪ ও আমর্ড ফোর্সেস ৬টি) ও ৩৩টি ডেন্টাল (৯টি সরকারি ও ২৪টি বেসরকারি) কলেজ রয়েছে। এমবিবিএসে মোট আসন সংখ্যা ৯ হাজার ৬৭৯ ও বিডিএসে ১ হাজার ৮৩২টি।
সরকারি ৩০টি মেডিকেল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ২১২টি। তার মধ্যে সাধারণ কোটায় ৩ হাজার ১২৮টি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬৪টি, পার্বত্য এলাকার উপজাতি কোটায় ৯টি ও পার্বত্য এলাকার উপজাতি কোটায় ৩টি ও অন্যান্য জেলার উপজাতিদের জন্য ৮টি আসন সংরক্ষিত রয়েছে।
এআর/এএস/এমএইচ/এআরএস/পিআর