ঋণের সুদ হার বাড়াতে চায় বিশ্বব্যাংক
বাংলাদেশের জন্য ঋণের সুদের হার বাড়াতে চায় দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক। এজন্য সম্প্রতি ঋণের মাত্রা বাড়িয়ে উচ্চ সুদ যুক্ত এক ঋণ প্রস্তাব পাঠিয়েছে সংস্থাটি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, উচ্চ সুদের এই ঋণ প্রস্তাবে বাংলাদেশ রাজি হলে বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশী ঋণ পাবে বলে জানিয়েছে দাতা সংস্থাটি।
ইআরডি জানায়,বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) আওতায় দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদে ঋণ পায় বাংলাদেশ। ছয় বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩৮ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু নতুন ঋণ প্রস্তাবে এই সুদের হার ৪-৫ গুন পর্যন্ত বাড়তে পারে। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকালও কম।
বিশ্বব্যাংক বলছে, কাঙ্খিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশকে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান জরুরি। বর্ধিত হারে বাংলাদেশ ঋণ নিতে আগ্রহী হলে বিশ্ব ব্যাংক তার বিনিয়োগের পরিমান বাড়াবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, জাতীয় উন্নয়নে আমাদের আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন। এজন্য প্রচুর অর্থের সংস্থান করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। এখনো সরকারের অবস্থান জানা যায়নি। সরকার তার অবস্থান ইতিবাচক দেখালে এ অর্থ পেতে প্রকল্প বাছাই করা হবে বলে জানান তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক চিঠিতে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সুভাস চন্দ্র গর্জ উচ্চ সুদের এ ঋণ প্রস্তাব দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে বোর্ড সভায় অনুমোদন পাওয়া বর্ধিত সুবিধা বা স্কেল আপ ফ্যাসিলিটি (এসইউএফ) থেকে উচ্চ সুদের এ ঋণ দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। এ তহবিলে ৩৯০ কোটি ডলার রয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী (প্রতি ডলার সমান ৭৮ টাকা) এর পরিমাণ ত্রিশ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
সংস্থাটির প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ২০১৪ সাল থেকে একই ধরনের ঋণ নিচ্ছে। বর্তমানে দেশটি বিভিন্ন খাতে এ ধরনের ঋণের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। এসব দিক বিবেচনায় ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশও ঋণ নিতে পারে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮ বছরে পরিশোধ করলে সুদের হার দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে পরিশোধ করলে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। ৬ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৪ বছরের মধ্যে পরিশোধ করলে ৪ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ সুদ দিতে হবে। চড়া সুদের এ ঋণ না নেওয়ার পক্ষেই মতামত দিয়েছে ইআরডি। এ প্রতিবেদন শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা করতে চায়। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ জন্য ব্যাপক অর্থেও যোগান জরুরি। বেশ কয়েকটি প্রকল্পে অর্থায়ন অনিশ্চয়তায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মূলত অবকাঠামো উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সহযোগিতা করতে চায়।
প্রসঙ্গত, মূলত দরিদ্র দেশের উন্নয়নে সংস্থাটি আইডিএ এর মাধ্যমে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান দিয়েছে। এর মধ্যে ৯০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ৩৭ প্রকল্প চলমান রয়েছে।
এমএ/এএইচ/আরআইপি