বাণিজ্যমেলায় ই-টিকেটিং সেবা চালু
এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ই-টিকিট ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আনুষ্ঠানিক মেলা উদ্বোধনের আগে আজ মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এতে প্রবেশের জন্য ই-টিকেটিং সেবার কার্যক্রম শুরু করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। আগামীকাল (১ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে এই মেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
মঙ্গলবার মেলার জন্য নির্ধারিত পূর্বাচলের বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের উন্মুক্ত মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে স্থাপিত ইলেকট্রনিক বা ই-গেটটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংগৃহীত টিকিটের স্পর্শে মুহূর্তেই খুলে যায়। আর সেই গেট দিয়ে একে একে প্রবেশ করেন সীমিত সংখ্যক আমন্ত্রিত অতিথি ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর কর্মকর্তারা।
স্মার্ট মোবাইল ফোনে ই-টিকিটের ইমেজ ও ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) নামে পরিচিত কিউ আর কোড প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্যানারের কল্যাণে যাবতীয় তথ্য পৌঁছে যায় ই-গেটে। আর তথ্যপ্রাপ্তির কল্যাণে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য খুলে যায় এই গেট। একজন দর্শনার্থী প্রবেশের পর আবারও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ গেট বন্ধ হয়ে যায় এবং পরবর্তী দর্শনার্থী প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
এভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজার হাজার দর্শক মেলায় প্রবেশের সুযোগ পাবেন এ বছর। সাধারণভাবে ই-গেটে লাল বাতি জ্বালানো থাকবে এবং সঠিক টিকেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে সবুজ বাতি জ্বলবে এবং ই-গেট খুলে যাবে।
আন্তর্জাতিক মেলা নামে অভিহিত হলেও বিগত ২৮টি মেলায় প্রবেশের জন্য আগেকার দিনের কাগুজে টিকিট ব্যবহার করা হতো, যা আন্তর্জাতিক মেলার আবহের সঙ্গে মানানসই ছিল না। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা দর্শনার্থী ও বিনিয়োগকারীরা মেলায় প্রবেশের এমন ব্যবস্থাপনা দেখে দেশের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারতেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো এবারের ২৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ই-টিকিট প্রচলন করার মাধ্যমে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করলো।
এবারের মেলায় ই-টিকিট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পেয়েছে ডিজি ইনফোটেক নামের একটি প্রতিষ্ঠান। আর প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ডিজি ই-পে নামের সহযোগী আরেকটি প্রতিষ্ঠান। এর ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল টেলিফোন নির্ভর যেকোনো আর্থিক লেনদেনের সুবিধা কিংবা দেশের স্বনামধন্য বেশ কিছু ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সহজেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন এবং তাদের মোবাইলে তা সংরক্ষিত থাকবে।
মেলায় প্রবেশের সময় মোবাইল ফোনে সংরক্ষিত এই টিকিটের ইমেজ প্রদর্শন করে একজন ব্যক্তি বা টিকিটে উল্লিখিত সংখ্যক দর্শনার্থী সহজেই মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। এতে মেলায় প্রবেশের জন্য মেলা প্রাঙ্গণের সামনে স্থাপিত টিকিট কাউন্টারে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার বিড়ম্বনা থেকে দর্শকরা মুক্তি পাবেন। একই সঙ্গে কাগজ ও ছাপার খরচ পরিহার করে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবেন।
প্রথমবারের মতো ই-টিকিট ব্যবস্থাপনা চালু হচ্ছে বিধায় মোবাইল টেলিফোন ছাড়াও কাগজের টিকিট ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের সীমিত সুযোগ রাখা হয়েছে। এই কাগজেও বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। কাগজ এবং মোবাইল ফোনে সংযোজিত ভিসিবল ডিজিটাল সাইন (ভিডিএস) যাতে কোন অবস্থাতেই বিকৃত বা নকল হতে না পারে সেজন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার স্বীকৃত দেশের অন্যতম সার্টিফাইং অথরিটি রিলিফ ভ্যালিডেশন লিমিটেড।
এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কারিগরি সহযোগিতায় রয়েছে জার্মানের রাষ্ট্রায়ত্ত তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ভেরিডোজ। ডিজি ইনফোটেক ও ভেরিডোস বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহ ও দুটি স্থল বন্দরে ই-গেট স্থাপন, ব্যবস্থাপনা ও ই-পাসপোর্ট সেবা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে।
এমএএস/এমআইএইচএস