পুঁজিবাজারে আশা সঞ্চার হওয়ার মতো পদক্ষেপ দেখছি না
‘পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হতে হলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আস্থা ফেরাতে হলে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত করতে হবে। তবে বাজার ভালো হওয়া বা বাজার নিয়ে নতুন আশা সঞ্চার হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ কারও কাছ থেকে দেখা যাচ্ছে না।’
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে এমনটাই অভিমত দিয়েছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম ডিবিএ’র সপ্তম সভাপতি হিসেবে ২০২৪-২৫ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক এবং টানা দুই মেয়াদে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ছিলেন। সম্প্রতি দেশের পুঁজিবাজারের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সংগঠনটির এ নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ শিপন।
এখন পর্যন্ত আমি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। বাজার ভালো হওয়া বা বাজার নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ কারও কাছ থেকে দেখছি না।
জাগো নিউজ: পুঁজিবাজার সংস্কারে আপনারা বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিছু কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু বিষয়ে সমালোচনাও রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ২০২৫ সাল নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা কী?
- আরও পড়ুন
- প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে স্থিতিশীলতার দিকে
- ২০২৫ সালে আশার আলো দেখছি
- অর্থপাচারকারীরা নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে
সাইফুল ইসলাম: বাজারে যে অশনি সংকেত তা হলো আস্থার অভাব। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, এটাই আমাদের মূল প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত আমি আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছি না। বাজার ভালো হওয়া বা বাজার নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার হওয়ার মতো কোনো পদক্ষেপ কারও কাছ থেকে দেখছি না।
জাগো নিউজ: কী ধরনের পদক্ষেপ নিলে বাজার নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায়?
সাইফুল ইসলাম: প্রথমত আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। আস্থা ফেরানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে হবে।
জাগো নিউজ: বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কী করতে হবে?
সাইফুল ইসলাম: আস্থা ফেরাতে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকে সুরক্ষিত করতে হবে। বাজার ভালো করতে হলে মানসম্পন্ন কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আনতে হবে।
আমি মনে করি প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা। আগামী বছর কেয়ারটেকার সরকার থাকবে, নাকি রাজনৈতিক সরকার আসবে- এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া উচিত।
জাগো নিউজ: ব্যবসার ক্ষেত্রে ২০২৫ সালের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী হতে পারে?
সাইফুল ইসলাম: প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে রাজনৈতিক সমস্যা। রাজনৈতিক সমস্যা যতদিন সমাধান না হয়, ততদিন অন্য সমস্যার সমাধান হবে না। সবগুলো বিষয় রাজনীতির ওপর নির্ভার করে। এই যে শ্রম অসন্তোষ, এটা একটা অর্থনৈতিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক বিষয় বেশি। তারপর জ্বালানি। জ্বালানিটা নির্ভর করছে দেশের ফিসক্যাল পলিসি (রাজস্ব নীতি) কী হবে তার ওপর। সেটা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত। আমি মনে করি প্রধান সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা। আগামী বছর কেয়ারটেকার সরকার থাকবে, নাকি রাজনৈতিক সরকার আসবে- এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া উচিত।
জাগো নিউজ: নতুন বছরে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন হতে পারে?
সাইফুল ইসলাম: এগুলো নির্ভর করছে সংস্কারের ওপর। কারণ চার মাস ধরে আমরা বলছি- সংস্কার করা হবে। সংস্কারটা হচ্ছে কি না আদৌ এবং যদি হয় কী সংস্কার হচ্ছে? বিনিয়োগবান্ধব কি না? এখন তো আর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই, এখন একটাই কর্মসূচি এটা হচ্ছে সংস্কার। এই সংস্কারগুলো কতটুকু, কীভাবে হয় তার ওপর নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ।
জাগো নিউজ: নতুন বছরে বিনিয়োগ বাড়বে নাকি কমবে? কী প্রত্যাশা করছেন?
সাইফুল ইসলাম: নতুন বছর বিনিয়োগ কমবে বলে আমরা মনে করি না। কারণ ১৫ বছর একটা সরকার ক্ষমতায় থাকার পর গদিচ্যুত হলো। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে একটি সরকার চলছে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কিন্তু বলা হচ্ছে সংস্কার, সংস্কার এবং সংস্কার। এখন সংস্কারগুলো যদি না হয় এবং যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তাহলে মানুষ আবার হতাশাগ্রস্ত হবে। বিনিয়োগ বাড়তে গেলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কোনো বিকল্প নেই।
এমএএস/এএসএ/জিকেএস