ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে, অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ এর জন্য

মোঃ সামিউর রহমান সাজ্জাদ | প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আগামী বছর উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না হলেও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে। বাজার পরিস্থিতি উন্নতি করার জন্য, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। মুদ্রানীতি নমনীয় করলে, সুদের হার কমিয়ে দিলে তখন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে। তবে সার্বিকভাবে ২০২৬ এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

জাগো নিউজকে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটি স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন মাহফুজ কবির। জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আলাপ করেন চলমান অর্থনীতির নানান দিক নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সামিউর রহমান সাজ্জাদ। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

জাগো নিউজ: দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মাহফুজ কবির: সংস্কার কার্যক্রমের কিছুটা শুরু হয়েছে। কতগুলো কমিটি এবং টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। এরই মধ্যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী যাচাই-বাছাই হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকখাত সংস্কার, বাজার মনিটরিং, পুঁজিবাজারের সংস্কার, বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্ধারণের বিষয়ক আলাদা আলাদা টাস্কফোর্স আছে, যাদের মূল কাজ হচ্ছে পর্যবেক্ষণের পর প্রতিবেদন দেওয়া।

তবে অস্বস্তির জায়গা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। নভেম্বর মাসে আমরা আশা করেছিলাম যে মূল্যস্ফীতি অনেকটা কমে যাবে এবং বাজারে একটা স্থিতিশীলতা আসবে। কারণ, শীতকালীন শাক-সবজি এবং অন্য খাদ্যপণ্য বাজারে আসবে।

কিন্তু সেটা সুদূরপরাহত। এমনকি নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যা আমরা কল্পনাও করিনি। অর্থাৎ বাজারে এখনো অস্থিতিশীলতা এবং বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আমি ধারণা করছি যে ডিসেম্বরে আরেক দফা মূল্যস্ফীতির চাপ থাকবে।

সংস্কার কিছু চলমান, কিছু সামনের দিনগুলোতে নেওয়া হবে। এখনই বলার কোনো উপায় নেই যে কাজ কেমন হলো বা কেমন হচ্ছে। কিছু কাজ চলমান যেমন: ব্যাংকখাতের কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসছে। যেসব ব্যাংকের তারল্য সংকট ছিল তাদের ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার জন্য কিছু কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যদিও টাকা ফেরত আসেনি।

একদিকে কিছু কিছু সংস্কারকাজ চলছে, অন্যদিকে অস্বস্তিও আছে। সবমিলিয়ে একটা মিশ্র পরিস্থিতি আমি বলব।

‘তেলের পাশাপাশি আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ প্রত্যেকটি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে। এত সিন্ডিকেট অথচ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হলো।’

জাগো নিউজ: নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমছে না কেন?

মাহফুজ কবির: আমি মনে করি এজন্য এককভাবে সিন্ডিকেটই দায়ী। এরই মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড়, স্থানীয় কর রেয়াতি সুবিধা দেওয়া সত্ত্বেও ভোজ্যতেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়েছে। এটা একটা চাপ তৈরি করবে।

পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে আরও কিছু পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে। তেলের পাশাপাশি আলু, পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ প্রতিটি পণ্যের সিন্ডিকেট আছে। এত সিন্ডিকেট অথচ তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ করে দেওয়া হলো।

ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বাজার থেকে আগেই তেল উধাও করে দিয়েছিলেন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। তেল আমদানির সময় চাহিদার চেয়ে এক লাখ মেট্রিক টন বেশি আমদানি করা হয়েছিল। অথচ তারা তেল মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে মানুষকে কষ্ট দিল, যা আমাদের মজুত আইনের পরিপন্থি। আইন ভঙ্গ করা সত্ত্বেও তাদের সুবিধা দেওয়া হলো। এ ধরনের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকারের ভালো কাজগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে এবং বিতর্কিত করছে।

ব্যবসায়ীদের কিন্তু সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এমনকি লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে যে বাধা ছিল তা এখন দূর হয়ে গেছে। এখন আর কী সমস্যা থাকতে পারে। সিন্ডিকেট এখানে বড় রোল প্লে করছে। চালের দাম, আলুর দাম কেন বাড়লো? এসবের সরবরাহ তো স্বাভাবিক। তার মানে সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম বাড়েনি। মাঝে ডিম নিয়ে অস্থিরতা ছিল, পরে কোনোভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। কিন্তু অন্য পণ্যের ক্ষেত্রে পারা যাচ্ছে না।

কৃষকরা এমনিতেই দাম পান না। আমদানি করলে তো কৃষকরা আরও দাম পাবেন না। তবু তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করছেন, দাদন নিচ্ছেন, ব্যাংকে গিয়ে ঋণ পাচ্ছেন না। তবু তারা উৎপাদন করছেন ঠিকই। কিন্তু সেটার সব সুবিধা নিয়ে বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে দাম বাড়াচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট।

বৈশ্বিক বাজারে কিন্তু কোনো সমস্যা নেই। সব পণ্যের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল অথবা নিম্নগামী। শুধু পাম্প তেলে একটু সমস্যা হতে পারে। এখন যে তেলের দাম বাড়ানো হলো তা কিন্তু আগে আমদানি করা হয়েছিল। বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা তেল আমদানি করেছিলেন, তারা এখন মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। তাই আমি মনে করি সিন্ডিকেট পুরো বাজারের একমাত্র ভিলেন।

‘আরও কিছু অনুসন্ধান হোক, কোনো সমস্যা নেই। যে খাতগুলো উল্লেখ করা হয়েছে শ্বেতপত্রে যেখানে দুর্নীতি হয়েছে, অর্থপাচার হয়েছে, সেই নির্দিষ্ট খাত ধরে যেমন: পরিবহনখাত, বিদ্যুৎখাত, ব্যাংকখাত প্রত্যেকটি খাত ধরে ধরে আলাদা করে অনুসন্ধান দরকার।’

জাগো নিউজ: শ্বেতপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এটি কি অর্থনীতির আসল চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে?

মাহফুজ কবির: শ্বেতপত্র করেছে সেটা একটা ভালো কাজ হয়েছে বিষয়টা এরকম নয়। বরং চলমান সংস্কারগুলো রয়েছে তার মধ্যে কিছু অগ্রগতি হচ্ছে। এটা একটা ইতিবাচক দিক। সত্য, মিথ্যা, তথ্য ঠিক আছে কি না সেটা আমরা পরে যাচাই করে দেখব। কিন্তু এখন যে কিছু প্রতিবেদন আসছে সেটা ভালো। তারা যে দেরি করছে না, সময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন দিচ্ছে বা হয়তো অনুসন্ধান করছে আমি মনে করি এটা ভালো দিক।

আরও কিছু অনুসন্ধান হোক, কোনো সমস্যা নেই। যে খাতগুলো উল্লেখ করা হয়েছে শ্বেতপত্রে যেখানে দুর্নীতি হয়েছে, অর্থপাচার হয়েছে, সেই নির্দিষ্ট খাত ধরে যেমন: পরিবহনখাত, বিদ্যুৎখাত, ব্যাংকখাত প্রত্যেকটি খাত ধরে ধরে আলাদা আলাদা করে অনুসন্ধান দরকার। তখন দেখা যাবে যে কতটুকু অর্থ অপচয় হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে, কত টাকা বাইরে পাচার হয়েছে কেন হয়েছে, কারা জড়িত ছিল। এ বিষয়গুলো তখন বিস্তারিত জানা যাবে। এখন তারা বলছে যে এত পরিমাণে দুর্নীতি, অর্থপাচার হয়েছে। কিন্তু কারা করেছে, কীভাবে করেছে, কখন করেছে, কারা জড়িত ছিল, দেশের ভেতরে কারা, বাইরে কারা সেগুলোর কোনো তথ্যই আমরা শ্বেতপত্রে পাইনি। যে সংখ্যাগুলো এলো সেগুলো সমর্থন করার মতো কোনো দালিলিক প্রমাণ এদের কাছে নেই। সুতরাং এরকম একটা গ্যাপ রয়েছে।

কিন্তু আমরা যেটা জানি যে, দুর্নীতি হয় বা হচ্ছে সেগুলো কিন্তু সাধারণ ধারণা। সেখানেই কিছু অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে। আমি মনে করি যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল শ্বেতপত্র প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে সেগুলো নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু একটা সংখ্যা নিয়ে আসা হয়েছে বিভিন্ন খাত নিয়ে। এই চিহ্নিত করাটা আমি মনে করি জরুরি ছিল। আমরা এখন জানতে পারছি যে কোথায় কোথায় কতটুকু দুর্নীতি হয়েছে। এরপরে বিস্তারিত অনুসন্ধান করলে, তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করলে, দালিলিক প্রমাণ থাকলে যা বের করার দায়িত্ব বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের। বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে। সবাই মিলে যখন বিস্তারিত অনুসন্ধান করবে, তখন জানা যাবে। তবে প্রাথমিক কাজ কিছুটা হয়েছে, আরও কিছু কাজ করার বাকি আছে।

‘আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আরও সুযোগ-সুবিধা পাব কি না সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। জিএসপি প্লাস দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হবে না।’

জাগো নিউজ: ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্র্যাজুয়েট করবে কি না এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। আপনি কী মনে করেন?

মাহফুজ কবির: আমাদের এখানে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় যে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েট করবে। কারণ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সব মানদণ্ডে বাংলাদেশ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে মাথাপিছু আয়, অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন এই তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে। সুতরাং এ অবস্থায় আমাদের আসলে গ্র্যাজুয়েশন করতেই হবে। এখানে অন্য কোনো চিন্তার বা সুযোগ খোঁজার অবকাশ নেই। কারণ তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশকে আর এলডিসিতে থাকার অনুমোদন করবে না। তখন গ্র্যাজুয়েট করতেই হবে। ওই অবস্থায় আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে।

তবে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আরও সুযোগ-সুবিধা পাব কি না সেগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে হবে। জিএসপি প্লাস দিয়ে আমাদের কোনো লাভ হবে না। কারণ, জিএসপি প্লাসে যেতে একেকটা ক্যাটাগরিতে ২৫ শতাংশের বেশি পণ্য থাকা যাবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে ৪০ শতাংশ হচ্ছে আমাদের নিটওয়্যার গার্মেন্টস, যা ২৫ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। একই সঙ্গে এতগুলো আন্তর্জাতিক কনভেনশন বিশ্বাসযোগ্য বাস্তবায়ন একটা বড় বিষয়। কারণ, বাংলাদেশ হয়তো স্বাক্ষর করছে বা সীমিত আকারে বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু ইউরোপের মানদণ্ড অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করা এই মুহূর্তে দুঃসাধ্য কাজ। তাদের যদি বিশ্বাসযোগ্য মনে না হয় ততদিন পর্যন্ত তারা জিএসপি দেবে কি দেবে না এটা বড় চিন্তার বিষয়।

আমরা যদি তাদের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারি এটা একটা উপায় হতে পারে। অথবা এলডিসি থেকে উত্তরণের যে ট্রানজিশন পিরিয়ড, এটাকে বাড়ানোর জন্য তাদের অনুরোধ করতে পারি। এখন যেটা তিন বছর আছে সেটাকে ছয় বছর করা না হলে অন্তত পাঁচ বছর করা। সেক্ষেত্রে আমাদের শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পেতে থাকব। এর মধ্যে যদি আমাদের একটা বাণিজ্য চুক্তি হয়ে যায় যেমন ভিয়েতনামের সঙ্গে ইউরোপের বাণিজ্য চুক্তি আছে। তখন আমাদের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারে কোনো সমস্যা হবে না। তবে এজন্য এখনই কাজ শুরু করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি আমরা ট্রানজিশন পিরিয়ডটা তিন বছরের জায়গায় ছয় বছর করতে পারি এবং এর মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারি।

এর পাশাপাশি অন্য যেসব দেশ রয়েছে যেখানে আমরা পণ্য রপ্তানি করি বিশেষ করে ভারত, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপান। এদের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে, যাতে আমরা তাদের কাছে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার অনুরোধ করতে পারি একইসঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারি। তখন আমাদের রপ্তানি খাত বড় রকমের ঝুঁকি থেকে বেঁচে যাবে।

‘যদি মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হয় এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। এর কারণ এই মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিচ্ছে। যেহেতু সুদের হার অনেক বেশি; ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সহজলভ্য হচ্ছে না।’

জাগো নিউজ: আসছে বছর অর্থনীতির যে সংকট আছে সেগুলো থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মাহফুজ কবির: আসলে পরিস্থিতি যে অবস্থানে আছে সেখান থেকে আগামী বছর একেবারে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে সেটা পরিষ্কার করে বলা যায় না। কারণ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি তৈরি করা এবং এজন্য অনেকগুলো সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা। আগামী বছরে মূল মনোযোগ থাকবে সংস্কারের দিকে, সুন্দর নির্ভুল ভোটার তালিকা করা হবে এবং জাতীয়, স্থানীয় নির্বাচন হবে। এর আগে হয়তো যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আসবে তার জন্য কিছু আইনগত কাঠামো তৈরি করে সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা।

এসব কিছুর মাঝে অর্থনীতির জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে বিষয়টা এরকম নয়। আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ২০২৬ পর্যন্ত। তখন যদি কোনো নির্বাচিত সরকার আসে তারা রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেবে এবং এখনকার যে সমস্যাগ রয়েছে সেগুলো ধীরে ধীরে দূর হবে।

সুতরাং, ২০২৫ সালে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যে পরবর্তী বছরের জন্য এবং এর মধ্যে হয়তো ব্যাংকখাত, পুঁজিবাজারে কিছু কিছু সংস্কার হয়তো সম্পন্ন হবে। তবে পরিস্থিতি এরকমই হয়তো থাকবে। খুব বেশি উন্নতি হবে এরকম নয়। যদি আমাদের রপ্তানি বাড়ে, রেমিট্যান্স বাড়ে এবং একই সঙ্গে যদি আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে কিছু আর্থিক সাহায্য পাই সেক্ষেত্রে হয়তো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা বাড়বে এবং এর মাধ্যমে আমাদের সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে।

এর পাশাপাশি নিত্যপণ্যের বাজারে যে চাপ রয়েছে তা কবে কমবে সেটাও একটা চিন্তার বিষয়। কারণ যেহেতু নভেম্বর পর্যন্ত আমরা দেখলাম যে বড় রকমের চাপ রয়েছে সাধারণ মূল্যস্ফীতি এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে তা খুব বেশি দূর হবে কি না সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার কমানো হয় এবং একই সঙ্গে মুদ্রানীতি কিছুটা নমনীয় হয় তাহলে হয়তো রেভিনিউ বাড়বে। দেশি বিনিয়োগ বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ খুব একটা বাড়বে কি না সেটা নিয়ে চিন্তা রয়েছে। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের ক্রেডিট রেটিং কমে গেছে। আবার দেশি বিনিয়োগকারীরা নির্বাচিত সরকারের জন্য অপেক্ষা করবে। তারা দেখবে যে সংস্কার কার্যক্রম কতটুকু অগ্রসর হয়।

এসব মিলিয়ে আগামী বছর আমরা উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না পেলেও হয়তো আমার যেটা ধারণা হচ্ছে যে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে। কারণ যেহেতু অর্থপাচার হচ্ছে না, এর সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারকে সহযোগিতা করছে। ২০২৫ এর মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছেন, তারা ধৈর্য ধরছেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। সব মিলিয়ে দেখা যাবে যে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে কিন্তু বাজার পরিস্থিতি উন্নতি করার জন্য, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে। মুদ্রানীতি নমনীয় করলে, সুদের হার কমিয়ে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে। তবে সার্বিকভাবে ২০২৬ এর জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

যদি মুদ্রানীতি আরও কঠোর করা হয় এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে। তার কারণ এই মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি উসকে দিচ্ছে। যেহেতু সুদের হার অনেক বেশি ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সহজলভ্য হচ্ছে না। ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী মহাজনের থেকে ঋণ নিচ্ছে। এভাবে আসলে মূল্যস্ফীতি কমানো যাবে না। মূল্যস্ফীতি কমাতে অবশ্যই মুদ্রানীতি নমনীয় করতে হবে, সুদের হার কমাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। মুদ্রানীতি আরও কঠোর হলে অর্থনীতি চরম সংকটে পড়বে, প্রবৃদ্ধি একেবারে কমে যাবে এবং সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে। এধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়াটা হটকারী হবে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে চরম বেকায়দায় ফেলবে।

করছাড় বা সুরক্ষা যত দূর সম্ভব দেওয়া যায় সেটা ভালো। কিন্তু আমাদের রাজস্বের চাপ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা সেভাবে সরকারকে সহযোগিতা করছে না। কিছু কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা আইনের ফাঁকফোঁকর খুঁজে রাজস্ব পরিশোধ করছেন না। রাজস্ব না থাকলে শুল্কছাড় কীভাবে দেবে। আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন করতেই হবে। যে সূচকগুলো রয়েছে সেখানে আমাদের পেছানোর সুযোগ নেই। তখন কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া সম্ভব হবে না। সুতরাং এই চাপ তো রয়েছেই। আমরা যদি প্রত্যক্ষ কর বেশি আদায় করতে পারি তখন পরোক্ষ করের হার কমে যাবে এবং সাধারণ মানুষের থেকে করের বোঝা কমে যাবে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি স্মার্ট হবে।

এসআরএস/এমএমএআর/জিকেএস

আরও পড়ুন