সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করায় রাজস্ব হারিয়েছে সরকার
গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন সমন্বয় জানিয়েছে ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ সময়কালে সিগারেটে কার্যকর করারোপ না করার ফলে প্রতিবছর গড়ে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। প্রতিটি স্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির হার অন্তত চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে বেশি হতে হবে বলেও দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
এছাড়াও প্রয়োজনীয় মাত্রায় সিগারেটের দাম বৃদ্ধি করা ও বাজারে বিক্রি হওয়া সিগারেটের স্তর ৪ টি থেকে কমিয়ে ৩টি তে নামিয়ে আনার দাবিও জানিয়েছে উন্নয়ন সমন্বয়।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সামরিক জাদুঘরের সেমিনারে উন্নয়ন সমন্বয়ের এক আয়োজনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটে কার্যকর করারোপ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব দাবি জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম এ সাত্তার মন্ডল। এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এনবিআরের প্রথম সচিব (করনীতি) মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত, প্রথম সচিব (ভ্যাট নীতি) মো. মশিউর রহমান, এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. মো. সহিদুল ইসলাম ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েটের সাবেক গবেষণা বিভাগের প্রধান ড. আবদুর রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী।
তিনি বলেন, সিগারেটে কার্যকর করারোপের ফলে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কাটি পুরোপুরি অমূলক। চলতি অর্থবছর জুড়ে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়েছে। তাই আসন্ন বাজেটে সকল স্তরের সিগারেটের ন্যূনতম ঘোষিত খুচরা মূল্য ১০ শতাংশ করে বাড়াতে হবে।
আরও পড়ুন
- জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সিগারেটে কার্যকর করারোপের আহ্বান
তামাকের ব্যবহার কমাতে শক্তিশালী কর আইনের বিকল্প নেই
এনবিআরের প্রথম সচিব (করনীতি) মির্জা মোহাম্মদ মামুন সাদাত বলেন, তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ পরিমাণ কর দিয়ে থাকে। কর আদায় আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে জনকল্যাণের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখতে হয়। তামাকজাত পণ্যে কর বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেলে এনবিআর তা বাস্তবায়ন করবে বলেও জানান তিনি।
এনবিআরের প্রথম সচিব মশিউর রহমান (ভ্যাট নীতি) বলেন, আইনের প্রয়োগ দরকার। কেবল রাজস্ব বাড়িয়ে ধূমপান নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়া ও খোলা সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও, এই আইন কেবল কাগজেই রয়ে গেছে।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, রাষ্ট্র যদি জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয় তাহলে তামাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন। নীতিমালা প্রণয়নে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। যদি তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণে রাজস্ব আদায়কে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব আছে তা পালনে সিগারেটে কর বাড়াতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, কিশোরদের একটা বড় অংশ ধূমপানে আসক্ত। একটা অস্বাস্থ্যবান তরুণ সমাজ আমাদের সামনে বেড়ে উঠছে। এটাকে আমাদের নিরুৎসাহিত করতে হবে। এর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় কমপক্ষে ১০ শতাংশ হারে সিগারেটের ওপর কর আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। এছাড়াও তামাকজাত অন্যান্য পণ্যের ওপরও যৌক্তিক হারে কর বসাতে হবে।
এসএম/এএমএ