ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল

‘শুধু ভারতীয় ঠিকাদার কাজ করবে’ নীতির পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ

মফিজুল সাদিক | প্রকাশিত: ১১:৪১ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের কাজ চলমান। প্রায় ৯০০ একর জমিতে অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রকল্পের উদ্দেশ্য। নানান জটিলতায় প্রকল্পটি নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

২০২০ সালের ১১ জুন ভারত সরকার তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে ১১৫ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে। সে সময় বিধান ছিল এ কাজে শুধু ভারতীয় ঠিকাদার অংশগ্রহণ করতে পারবে। দেরিতে হলেও এই বিধান বা নীতির পরিবর্তন করতে ভারত সরকারকে চিঠি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মাধ্যমে ভারতকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও প্রকল্পের কাজে অংশ নিতে পারার বিধান চায় বাংলাদেশ। তবে এখনো ভারতের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো উত্তর মেলেনি।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নে ভারতীয় ঠিকাদার মিলছে না। এজন্য আমরা চাচ্ছি ভারতের পাশাপাশি যেন দেশীয় ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।- প্রকল্প পরিচালক মো. মোখলেসুর রহমান

প্রকল্পটির পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোখলেসুর রহমান জাগো নিউজকে চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চলতি বছরের ৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।

‘শুধু ভারতীয় ঠিকাদার কাজ করবে’ নীতির পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ

ভারতীয় দুই ঠিকাদারের অপারগতা প্রকাশ

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য প্রাক-যোগ্যতাসম্পন্ন দুই ভারতীয় ঠিকাদার— আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড এবং ইন্টারন্যাশনাল সিপোর্ট ড্রেজিং প্রাইভেট লিমিটেডের অনুকূলে দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু দরপত্র দলিল কেনার প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হওয়ার পর ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে উভয় ভারতীয় ঠিকাদার দরপত্র দাখিলে অপারগতা প্রকাশ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের জন্য পুনঃদরপত্রের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রয়োজন পড়ে।

বেজা সূত্র জানায়, এ কাজের জন্য উপযুক্ত ও আগ্রহী ভারতীয় ঠিকাদার পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় সরাসরি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতীয় ঠিকাদারের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে চায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। তা না হলে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে না। শুধু ভারত থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের সেবা কেনার প্রভিশন থাকায় বিপাকে পড়েছে ভারতীয় কোম্পানিগুলোও। এজন্য ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের কোম্পানিগুলো যেন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে অংশ নিতে পারে সেই আবেদন করেছে বেজা।

প্রকল্পের অগ্রগতি ও ব্যয়

জানা যায়, ২০২০ সালের ১১ জুন ভারত সরকার তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নীতিগতভাবে ১১৫ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হওয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়ার সময় ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়নে তেমন কোনো অগ্রগতি না থাকায় এর মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৯১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস করে একনেক। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের তহবিল (জিওবি) ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা ও প্রকল্প সাহায্য ৯১৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি নতুন খাতে (আয়কর, ভ্যাট ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়) অন্তর্ভুক্তিসহ অতিরিক্ত ৪৫ কোটি টাকা (জিওবি) ব্যয়ের পূর্বানুমোদন নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যেক কোম্পানির কাজ করার একটা স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু শুধু ভারত থেকে মালামাল কেনার বিষয় থাকলে সবারই সমস্যা। এটা ফ্রি করে দেওয়া দরকার যেন উভয় দেশের কোম্পানি অংশ নিতে পারে।

গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় মোট ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ১০ লাখ, যার মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় ৩ কোটি ৫৫ লাখ ও ভারতীয় ঋণ ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) প্রকল্পের অনুকূলে প্রাপ্ত বরাদ্দ হচ্ছে মোট ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত) সম্পাদিত ব্যয় হচ্ছে মোট ০ দশমিক ০৭ কোটি টাকা (সম্পূর্ণ জিওবি খাত থেকে)।

সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না ভারত

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জানা যায়, ভারতীয় লাইন অব ক্রেডিটের শর্তানুযায়ী একটি প্রকল্পের আওতায় ক্রয়কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে শতকরা ৮৫ শতাংশ পণ্য-সেবা ভারতীয় উৎস থেকে আহরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। গত ১৪ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজ (প্যাকেজ-১) বাস্তবায়নে যৌথ অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশি ঠিকাদারের অংশগ্রহণ এবং ১০ শতাংশ পণ্য/সেবা ভারতীয় উৎস থেকে আহরণের সম্মতির জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

প্রকল্প বাস্তবায়ন বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এ প্রকল্প বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সবশেষ অবস্থান জানিয়ে জরুরিভিত্তিতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা করার বিষয়ে মত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

বেজা জানায়, দুই দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও জনবল খাতে বেতন-ভাতা খাতের বিপরীতে অতিরিক্ত ব্যয়ের সংস্থান না থাকায় প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। গত ২৩ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এ প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজের পুনঃদরপত্রের ক্ষেত্রে ভারতীয় ঠিকাদারের পাশাপাশি বাংলাদেশি ঠিকাদারের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সম্মতি চাওয়া হয়। তবে এখনো এ বিষয়ে সম্মতি পাওয়া যায়নি। ইআরডির মাধ্যমে চিঠি দিলেও ভারত কোনো উত্তর দেয়নি।

‘শুধু ভারতীয় ঠিকাদার কাজ করবে’ নীতির পরিবর্তন চায় বাংলাদেশ

যা বলছেন প্রকল্প পরিচালক

প্রকল্পের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মোখলেসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানান ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নে ভারতীয় ঠিকাদার মিলছে না। এজন্য আমরা চাচ্ছি ভারতের পাশাপাশি যেন দেশীয় ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভারত সরকারের কাছে আপিল করেছি। এখনো উত্তর পাইনি। এটা না করলে প্রকল্পের কাজ দেরি হবে। ভারত কিছু কোম্পানি ডকুমেন্ট কিনেছিল, পরে এটা তাদেরও অনুকূলে যায়নি। তারা কী মাল কিনবে কোথা থেকে আনবে এটার কারণে কাজ করতে পারেনি। ভারতীয় ঠিকাদারের সমস্যা হচ্ছে।’

প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্রত্যেক কোম্পানির কাজ করার একটা স্বাধীনতা থাকে। কিন্তু শুধু ভারত থেকে মালামাল কেনার বিষয় থাকলে সবারই সমস্যা। এটা ফ্রি করে দেওয়া দরকার যেন উভয় দেশের কোম্পানি অংশ নিতে পারে। আমার কাজটা ঠিকমতো করতে চাই। এটা ভারতীয় সরকারের কাছে বলেছি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আপিল করেছি। দেখা যাক সামনে কী হয়।’

প্রয়োজনে বিকল্প চিন্তা

এই প্রসঙ্গে বেজার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভারত যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদার না দিতে পারে অথবা বাংলাদেশের ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয় তবে বিকল্প চিন্তা করতে হবে। দরকার হয় চুক্তি বাতিল করে দেশীয় অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

এমওএস/এএসএ/এএসএম