শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ২০০ কোটির ঘরে, চার মাসে সর্বনিম্ন
• অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে শেয়ারবাজারে সর্বনিম্ন লেনদেন
• গত ৪ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা
দরপতনের সঙ্গে লেনদেন খরা প্রকট হয়ে উঠেছে দেশের শেয়ারবাজার। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (৮ ডিসেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর একক কোনো কার্যদিবসে এটিই সর্বনিম্ন লেনদেন। এমনকি গত চার মাসের মধ্যেও যা সবচেয়ে কম।
আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন, অর্থাৎ গত ৪ আগস্ট শেয়ারবাজারে এরচেয়েও কম লেনদেন হয়েছিল। এদিকে, লেনদেন খরার পাশাপাশি দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ফলে পতন হয়েছে মূল্যসূচকেরও।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সিএসইতেও কমেছে মূল্যসূচক। তবে এ বাজারটিতে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের আগের দিন (৪ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছিল ২০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
তবে সরকার পতনের পর শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যায়। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে নেয়ার পর ফের শুরু হয় দরপতন। পতনের সেই ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে লেনদেন খরা।
রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্য দিয়ে গত চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সবচেয়ে কম লেনদেন হলো।
এই লেনদেন খরার দিনে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া দরপতনের ধারা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে লেনদেনের শেষ দিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ায় মূল্যসূচকের পতন কিছুটা কম হয়েছে।
অবশ্য এরপরও দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় রয়েছে প্রায় তিনগুণ বেশি প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৮৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৮১ পয়েন্টে নেমেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
লেনদেন খরার বাজারে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ৮ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালসের ৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- জেনেক্স ইনফোসিস, আইসিবি, গোল্ডেন সন, ফাইন ফুড, লাভেলো আইসক্রিম, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং ড্রাগন সোয়েটার।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৩টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এমএএস/এমকেআর/জেআইএম