খেলাপি ঋণ নিয়ে নতুন নিয়মে ব্যাহত হবে বিনিয়োগ, ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
খেলাপি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নিয়ম বেসরকারি খাতবিরোধী পদক্ষেপ। এতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব পড়বে।
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি ও শিল্প কারখানার নিরাপত্তা বিষয়ে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনায়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় পোশাকশিল্পসহ সব শিল্প কারখানায় বিরাজমান পরিস্থিতি, শিল্পে নিরাপত্তহীনতা, প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়া এবং ব্যাংক সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এপ্রিল মাস থেকে খেলাপি ঋণের নতুন নীতি কার্যকর হলে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। নতুন নীতি শিল্পগুলোতে সম্ভাব্য কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিরূপনে খাতভিত্তিক স্টাডি করার বিষয়ে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নেতারা একমত পোষণ করেন।
- আরও পড়ুন
ব্যবসায় মন্দা, বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দিতে চান কলকাতার ব্যবসায়ীরা
চামচা পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটায় অগণতান্ত্রিক মনোভাব তৈরি হয়েছে
সভায় পোশাক শিল্পসহ সব শিল্পখাতের নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে মাহমুদ জিন্স কারখানার ডিএমডির ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্য সংগঠনের নেতারা বলেন, এতে করে দেশের সামগ্রিক শিল্পখাতে গভীর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে উদ্যোক্তারা কারখানা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন। একই সঙ্গে দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগও ঝুঁকিতে পড়বে, যা মোটেও কাম্য নয়।
অর্থনীতি ও শিল্পের স্বার্থে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে, কর্মংস্থান সুরক্ষিত রাখতে শিল্পাঞ্চলগুলোতে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা প্রয়োজন। পোশাক শিল্পসহ সব শিল্প ও কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবসায়ী নেতারা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সভায় ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন নিয়েও বিশেষভাবে আলোচনা হয়। বলা হয় যে, এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা হারাবে। বাংলাদেশের সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি ও এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে আরও কিছুটা সময় দরকার। সেক্ষেত্রে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময়সীমা ৩-৬ বছরের জন্য পেছানো যেতে পারে বলে বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নেতারা মত প্রকাশ করেন।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, এফবিসিসিআই প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বিইএফ সভাপতি আরদাশির কবির, বিকেএমইএ সভাপতি মোহম্মদ হাতেম, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), এমসিসিআই সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি ওসামা তাসীর, বিজিএপিএমইএ সভাপতি মো. শাহরিয়ার, বায়লা সভাপতি আবরার হোসেন সায়েম ও ১ম সহ-সভাপতি হাসিন আরমান প্রমুখ।
বর্তমানে ব্যাংকঋণের ধরন ও খাত বিবেচনায় ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার এক বছর পর পর্যন্ত গ্রাহকের খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ রয়েছে। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) ঋণের ক্ষেত্রে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৯ মাস পর তা খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়। কৃষিঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি শোধ না করেও ১৫ মাস পর্যন্ত সময় পান কৃষকেরা। অন্যদিকে শিল্পঋণের ক্ষেত্রে চলতি ঋণ, মেয়াদি ঋণ ও ডিমান্ড ঋণের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের পর সেসব ঋণ খেলাপির তালিকায় যুক্ত হয়।
গত ২৭ নভেম্বর খেলাপি ঋণ বিষয়ে সর্বশেষ নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নীতিমালা আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে।
নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণ পরিশোধ/সমন্বয়ের জন্য নির্ধারিত দিনের পরবর্তী দিন থেকে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবে। সব ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণের সময়সীমা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে হলে নিম্নমান হিসেবে খেলাপি হবে। ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে সন্দেহজনক এবং ১২ মাস বা এর বেশি হলে মন্দ/ক্ষতিজনক মানে খেলাপি হবে।
কেএসআর/এমএমএআর/জেআইএম