শেয়ারবাজারের লেনদেন ফের তিনশ কোটি টাকার ঘরে নামলো
কিছুতেই পতনের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না দেশের শেয়ারবাজার। মাঝে মধ্যে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললেও পরবর্তীতে আবার টানা দরপতন হচ্ছে। ফলে দিন যত যাচ্ছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা তত ভারি হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে লেনদেন খরা।
আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দেশের শেয়ারবাজারে ফের দরপতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক। সেইসঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন কমে আবার তিনশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে।
এর আগে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে চার কার্যদিবসেই দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশি প্রতিষ্ঠান। তার আগের সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসেও দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় কার্যদিবসে দাম বাড়ার তালিকায় ছিল বেশি প্রতিষ্ঠান।
যার প্রেক্ষিতে পতন থেকে বেরিয়ে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এমন আশা করতে থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সেই আশা বাস্তব হয়নি। ফের শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। বুধবার ডিএসইর মূল্য সূচক কিছুটা বাড়লেও দাম কমার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। আর বৃহস্পতিবার এসে পতনের মাত্র আরও বেড়ে গেছে। ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় যে কয়টি প্রতিষ্ঠান নাম লিখিয়েছে তার সাত গুণের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে দাম কমার তালিকায়।
এদিন লেনদেন শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে দাম কমার তালিকায় চলে আসে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে প্রথম দেড় ঘণ্টার লেনদেনে দাম বাড়া এবং কমার তালিকা প্রায় সমান ছিল। কিন্তু দুপুর ১টার পর থেকে শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। ফলে সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার পাশাপাশি মূল্য সূচকের মোটামুটি বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে মাত্র ৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩০৮টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪১ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১৯৬ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯১১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৪১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ২৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ড্রাগন সোয়েটারের ১১ কোটি ৯২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্নি সিস্টেম, আরডি ফুড, জেনেক্স ইনফোসিস, ব্র্যাক ব্যাংক, এমারেল্ড অয়েল, ওরিয়ন ফার্মা এবং নিউ লাইন ক্লোথিং।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৫টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
এমএএস/এমআইএইচএস/জেআইএম