ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের, শুল্ক আরও কমছে

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৪

দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২০ অক্টোবর চাল আমদানিতে শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। চাল আমদানিতে আগে যেখানে ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হতো, এখন তা কমে হয়েছে ২৫ শতাংশ। এরপরও চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতসহ অন্যান্য দেশে চালের দাম বাড়তি থাকায় আমদানি করা প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে প্রায় ৬৬ টাকা। এ দামে আমদানি করা হলে দেশের বাজারে চালের দাম আরও বেড়ে যাবে। এ অবস্থায় চাল আমদানিতে শুল্ক-কর আরেক দফা কমানোর প্রস্তাব দিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, এবার চাল আমদানিতে শুল্ক-কর ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। গত ২০ অক্টোবর চালের ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। এছাড়া নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে করা হয় ৫ শতাংশ। পাশাপাশি পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয় ৫ শতাংশ আগাম কর।

ভারতে বর্তমান চালের দাম প্রতি টন ৪৯০ থেকে ৫০০ ডলার। এ দামে চাল আমদানি করা হলে পরিবহন ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজি পড়বে ৬৬ টাকা। এটি বর্তমানে দেশের বাজারে যে দাম তার চেয়েও বেশি। এ দামে আমদানি করা হলে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের চাল কিনতে হবে।

খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন রয়েছে। এজন্য দরপত্র দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) পর্যায়ে আরও কয়েক লাখ টন চাল আমদানির চিন্তাভাবনা করছে খাদ্য অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের সংগ্রহ শাখার পরিচালক মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের আপামর জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারি-বেসরকারি খাতে চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। প্রথম দফায় শুল্ক প্রত্যাহারের পরও ব্যবসায়ীরা আগ্রহ না দেখানোর কারণে আরও কিছুটা শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে।’

তবে আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে বর্তমান চালের দাম প্রতি টন ৪৯০ থেকে ৫০০ ডলার। এ দামে চাল আমদানি করা হলে পরিবহন ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজি পড়বে ৬৬ টাকা। এটি বর্তমানে দেশের বাজারে যে দাম তার চেয়েও বেশি। এ দামে আমদানি করা হলে বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের চাল কিনতে হবে। বেশি দামের কারণে দেশের ব্যবসায়ীদেরও মুনাফা হবে না।

চাল আমদানিতে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের, শুল্ক আরও কমছে

শুল্ক কমানোর পরও আমদানি না হওয়ায় দেশের বাজারে চালের দাম কমছে না বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি কাওসার আলম খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন দেশে মিলপর্যায়ে ভালো মানের চালের কেজি ৬০ টাকা। বিদেশ থেকে আনলে দাম আরও বেশি পড়বে। তাহলে কেউ কেন আমদানি করবে?’

কিছুদিন পর আমন মৌসুম শুরু। তখন দেশে চালের দাম আরও কমবে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেশি, এলসি খোলা সমস্যা। এতসব ঝামেলা করে কেউ চাল আনছেন না। যে কারণে শুল্ক কমলেও কেউ এলসি খুলেছেন বলে আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, ‘এছাড়া কিছুদিন পর আমন মৌসুম শুরু। তখন দেশে চালের দাম আরও কমবে। পাশাপাশি ডলারের দাম বেশি, এলসি খোলা সমস্যা। এতসব ঝামেলা করে কেউ চাল আনছেন না। যে কারণে শুল্ক কমলেও কেউ এলসি খুলেছেন বলে আমার জানা নেই।’

সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। এতে আমন চাষে প্রভাব পড়েছে। বন্যার পর থেকেই খুচরা বাজারে চালের দাম বাড়তি। এর আগে জুলাই-আগস্টে দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চালের দাম একদফা বেড়েছিল। সবমিলিয়ে এখন চালের দাম স্বস্তিদায়ক নয় সাধারণ মানুষের জন্য। যে কারণে অন্তর্বর্তী সরকার শুল্ক কমিয়ে আমদানিকে উৎসাহিত ও স্থানীয় মজুত বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় আগে যে সরু চাল ৭২ থেকে ৭৪ টাকা বিক্রি হতো, সেটা এখন ৭৪ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মাঝারি মানের চাল ৬২ থেকে ৬৬ টাকার পরিবর্তে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৭০ টাকায়। অর্থাৎ শেষ দফা বন্যার পর বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে চার টাকা বেড়েছে।

এর আগে চাল আমদানিতে শুধু ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি রাখতে এনবিআরকে অনুরোধ করেছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে এনবিআর তা ২৫ শতাংশ রাখে। যে কারণে দ্বিতীয় দফায় শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিতে হচ্ছে বলে জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির হিসাব বলছে, চিকন চাল কিনতে এখন কেজিতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ছে ৮০ টাকা। গত বছরের এ সময়ে যা ছিল ৭২ টাকা। মাঝারি মানের চিকন চাল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, যার সর্বোচ্চ মূল্য প্রতি কেজি ৬২ টাকা। এছাড়া মোটা চালের সর্বোচ্চ দাম এখন ৫৫ টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৭ শতাংশ বেশি।

এনএইচ/কেএসআর/এএসএম