ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

কোথায় কীভাবে আছে সর্বজনীন পেনশনের টাকা

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ১১:০৬ এএম, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

• এক মাসে নতুন নিবন্ধন মাত্র ২৮৪ জনের
• মোট নিবন্ধন করেছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন
• চাঁদা জমা পড়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা
• বিনিয়োগ ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা
• ট্রেজারি বন্ডের সর্বোচ্চ কুপন হার ১২.৬০ শতাংশ
• নিবন্ধনে এগিয়ে দরিদ্ররা, পিছিয়ে প্রবাসীরা
• সর্বোচ্চ চাঁদা বেসরকারি চাকরিজীবীদের

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করে এরইমধ্যে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন চাঁদা জমা দিয়েছেন। তাদের জমা দেওয়া অর্থের পরিমাণ ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা বিভিন্ন সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগ থেকে মুনাফাও মিলছে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমের সিংহভাগ অর্থ বিনিয়োগ করা হলেও এবং ভালো মুনাফা পাওয়া গেলেও সরকার পতনের পর নিবন্ধনের গতি কমে গেছে। গত এক মাসে মাত্র দুইশো জনের মতো নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে মে, জুন ও জুলাই এই তিন মাসে আড়াই লাখের মতো নতুন নিবন্ধন হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার টাকা প্রথম বিনিয়োগ করা হয় ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর। সে সময় ১০ কোটি ৬৬ লাখ ৮৪ হাজার ৯৬৮ টাকা দিয়ে ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়। এই বন্ডের কুপন হার ৯ দশমিক ২০ শতাংশ। বর্তমানে বন্ডটির মূল্য ১১ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সর্বজনীন পেনশনের টাকা প্রথম বিনিয়োগ করা হয় ১৩ আগস্ট। ওইদিন ২৪ কোটি ২ লাখ ২ হাজার ৬৯১ টাকা দিয়ে ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়। ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ কুপন হারের এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এরপর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর ৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৯ টাকা দিয়ে ১৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়। এই বন্ডের কুপন হার ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বর্তমানে এই বন্ডের মূল্য ১০ কোটি টাকা।

চলতি বছর পেনশন স্কিমের টাকা দিয়ে প্রথম ট্রেজারি বন্ড কেনা হয় ২০ ফেব্রুয়ারি। ১০ কোটি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৪০২ টাকা দিয়ে কেনা হয় ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড। ১২ দশমিক শূন্য ৫ শতংশ কুপন হারের এই ট্রেজারি বন্ডের বর্তমান মূল্য ১০ কোটি টাকা।

এরপর ১৬ এপ্রিল ১১ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৮ টাকা দিয়ে কেনা হয় ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড। ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ কুপন হারের এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ১১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২১ মে আরও একটি ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়। ২১ কোটি ৩০ লাখ ১৬ হাজার ৩৭১ টাকা দিয়ে কেনা এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ২১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটির কুপন হার জানা যায়নি।

এক মাস পর ২৫ জুন ১৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডে ৩০ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯২ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ কুপন হারের এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পেনশনের টাকায় এটিই সর্বশেষ বিনিয়োগ।

গত এক মাস ৫ দিনে মাত্র ২৮৪ জন নতুন করে পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এতে ১৪ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত সবর্জনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পেনশনের টাকা প্রথম বিনিয়োগ করা হয় ১৩ আগস্ট। ওইদিন ২৪ কোটি ২ লাখ ২ হাজার ৬৯১ টাকা দিয়ে ৫ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়। ১০ দশমিক ৩৫ শতাংশ কুপন হারের এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ২৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর ৮ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৮০৮ টাকা দিয়ে কেনা হয় ১০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ড। ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ কুপন হারের এই বন্ডের বর্তমান মূল্য ৮ কোটি টাকা। পেনশনের টাকায় এখন পর্যন্ত যে কয়টি ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়েছে, তার মধ্যে এটির কুপন হার সব থেকে বেশি।

সবমিলিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের চাঁদার টাকায় ৮ দফায় মোট ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকার ট্রেজারি বন্ড কেনা হয়েছে। এই ট্রেজারি বন্ডগুলোর বর্তমান মূল্য ১২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ যে টাকা দিয়ে ট্রেজারি বন্ডগুলো কেনা হয়েছে বর্তমান মূল্য তার থেকে ৩ কোটি ২৬ লাখ ৪৪ হাজার ৩৩১ টাকা বেশি।

চাঁদা দেওয়া এবং নিবন্ধন করা দুদিক থেকেই সবার নিচে রয়েছেন প্রবাসীরা। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়েছে প্রবাস স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দিয়েছেন ৯১০ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছর সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে সরকার। গত বছরের ১৭ আগস্ট সাবেক প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বজনীন পেনশন স্কিম উদ্বোধন করেন। এর পর পরই আবেদন শুরু হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা-এই চার স্কিম নিয়ে সরকার সর্বজনীন পেনশন চালু করে।

পরবর্তী সময়ে সব স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেওয়া হয়। গত ১ জুলাই থেকে এই স্কিম কার্যকর হয়। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে প্রত্যয় স্কিম বাতিল করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা এই চারটি স্কিম চালু রয়েছে।

শুরুতে সর্বজনীন পেনশনে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও মাঝে নিবন্ধনে কিছুটা ধীরগতি আসে। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে হু হু করে বাড়তে থাকে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন করে চাঁদা জমা দেওয়া মানুষের সংখ্যা। এপ্রিলে ৬০ হাজার মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। এতে ওই মাসে সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধনের সংখ্যা ১ লাখের মাইলফলক স্পর্শ করে।

অর্থাৎ সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর ৮ মাস পরে নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা এক লাখ স্পর্শ করে। এরপর মে ও জুন মাসেও বিপুল সংখ্যক মানুষ নিবন্ধন সম্পন্ন করে চাঁদা জমা দেন। এতে জুলাই মাস শুরু হতেই নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ হয়ে যায়। আর জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

তবে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের গতি বেশ কমে যায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যান। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্রদের আন্দোলন শুরু হয় জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই। ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের গতি কমতে থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, ২ জুলাই দুপুর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করে ৩ লাখ ৪০ হাজার ২৪২ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ৮০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর দুই মাস পর ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্নকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৪ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৩ কোটি ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১১৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়।

এরপর গত এক মাস ৫ দিনে মাত্র ২৮৪ জন নতুন করে পেনশন স্কিমে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। এতে ১৪ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত সবর্জনীন পেনশন স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।

পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দরিদ্র মানুষজন, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। এই আয়ের মানুষদের জন্য চালু করা হয়েছে সমতা স্কিম। এই স্কিমের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা স্কিম গ্রহণকারী দেবেন এবং বাকি ৫০০ টাকা সরকার থেকে দেওয়া হবে। এই স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। আর জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

অপরদিকে, পেনশন স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা বাবদ সব থেকে বেশি অর্থ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে চাঁদা জমা পড়েছে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা। এই স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪১০ জন।

চাঁদা দেওয়া এবং নিবন্ধন করা দুদিক থেকেই সবার নিচে রয়েছেন প্রবাসীরা। বিদেশে অবস্থান করা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য চালু করা হয়ছে প্রবাস স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা দিয়েছেন ৯১০ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা।

এছাড়া অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি যেমন, কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি পেশার ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে সুরক্ষা স্কিম। এই স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন ৬৩ হাজার ১৭৪ জন। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

পেনশন স্কিমে নিবন্ধনের হার কমার কারণ জানতে চাইলে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে একটা ড্রাইভ দিয়েছিলাম, সে সময় অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বেড়েছিল। শুরু হয়েছিল কেবল, তারপর হঠাৎ করে আমরাও প্রচারে যেতে পারিনি। আর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে সবকিছু গিয়ার আপ (চাঙা করা) করতে একটু সময় লাগে।’

পেনশন স্কিমে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ খুবই কম। এ প্রসঙ্গে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পেনশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমরা সরাসরি প্রবাসীদের কাছে যেতে পারিনি। দূতাবাসগুলোকে আমরা এই কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেছি। দূতাবাসগুলো ড্রাইভ দেয়নি একেবারে তা বলবো না, দিয়েছে। তবে আমার মনে হয় যেভাবে তাদের কাছে পৌঁছানোর কথা, সেভাবে পৌঁছাতে পারিনি।’

এমএএস/এসএনআর/এমএমএআর/জিকেএস