পূজায় জমে উঠেছে স্থানীয় ফ্যাশন হাউজগুলো
দুর্গাপূজা উপলক্ষে এ বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি ক্রেতা না থাকলেও দেশের বাজারে ক্রেতা সমাগম বেড়েছে। যেসব ক্রেতা ভারতে যেতে পারেননি, তারা বাংলাদেশের স্থানীয় বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ থেকে নিজেদের পছন্দমতো কেনাকাটা করছেন।
সরেজমিন পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের স্বত্বাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কেনাকাটা করতে যান। এবার অনেক ক্রেতা সেই সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে তারা দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো থেকে পণ্য কিনছেন।
তাছাড়া দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো পূজাকে কেন্দ্র করে নানান আয়োজন নিয়ে এসেছে। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, পূজার কেনাকাটা শুরু হয় মূলত পূজা শুরু হওয়ার ১৫ দিন থেকে ১ মাস আগে। এখন মূলত ক্রেতারা শেষ সময়ের কেনাকাটা করছেন। অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি নতুন জামা, জুতা, গহনা, ইত্যাদি কেনার হিড়িক পড়ে যায়। তবে বিশেষ করে মহালয়া থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত টানা দশদিন নানান আয়োজনে সেজে ওঠে দেশের বিভিন্ন বিপণিবিতান, শপিংমল থেকে স্থানীয় বাজার।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা পূজা উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী নানান ধরনের পাঞ্জাবি, ধুতি, শাড়ি, থ্রি-পিসের পসরা সাজিয়েছেন। এর পাশাপাশি শেষ সময়ে বিভিন্ন প্রসাধনী, গহনা, জুতার দোকানে উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী সৌমিক দাস বলেন, পূজার জন্য আমাদের আলাদা প্রস্তুতি থাকে। গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি, ক্রেতারা বিদেশনির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পোশাকের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন। আমরা একটু একটু করে আয়োজনটা বাড়িয়েছিলাম। সেই সূত্রে এবারও আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আমরা কিছুটা শঙ্কিতও ছিলাম। তবে আমাদের আগাম প্রস্তুতি থাকায় এবং মানুষের চাহিদামতো পণ্যে বৈচিত্র্য থাকায় আমাদের আয়োজন ক্রেতারা পছন্দ করেছেন। তুলনামূলক সন্তোষজনক বেচাকেনা ছিল।
দেশীয় ফ্যাশন খাতের প্রসারে মানুষের মন-মানসিকতা অনেক বড় প্রভাব ফেলে বলে মনে করেন ফ্যাশন হাউজ কে-ক্রাফটের উদ্যোক্তা খালিদ মাহমুদ খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই মাসের অস্থিরতা কেটে ফ্যাশন হাউজগুলো তাদের বেচাকেনা শুরু করতে পেরেছে যা আমাদের সামগ্রিক খাতের জন্য ইতিবাচক।
এটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচনা করে খালিদ মাহমুদ খান বলেন, করোনা মহামারির পরবর্তী সময় অর্থনীতি মন্থর হয়ে আছে। এছাড়া এখন পরিবর্তিত সময়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশে মানুষ কেনাকাটা করছে। প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছে। এটি ভালো দিক।
তিনি আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবে পূজা এলে মানুষ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যেত। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় তা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে উঠছে না। এর পাশাপাশি মানুষের মানসিকতাও এক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা রাখে। ফলে আমাদের বেচাকেনা আরও ভালো হতে পারতো। যেটুকু হয়েছে মোটামুটি ভালো।
ক্রেতা সমাগম নিয়ে ফ্যাশন ব্র্যান্ড সাদাকালো’র স্বত্বাধিকারী আজহারুল হক আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের তুলনায় ভালো হওয়ার সুযোগটা কম। কারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা আছে। ফলে লোক সমাগম কম, তবে আমরা যতটা খারাপ ভেবেছিলাম ততটা না।
পূজার বেচাকেনা নিয়ে কথা হচ্ছিল রাজধানীর শাঁখারি বাজারের দীপ বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, দাম মোটামুটি ঠিকই আছে। সরকার পরিবর্তনের কারণে দামের তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। মোকাম থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঊর্মি বর্মণ বলেন, এবার বেশি কেনাকাটা করিনি। সবাই প্রার্থনা করছি যাতে পূজা ভালোভাবে শেষ করতে পারি।
ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস্ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড অঞ্জন’স এর স্বত্বাধিকারী শাহিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ব্যবসার পরিস্থিতি তুলানমূলক ভালো। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম সেরকম হয়নি। খুব বেশি ভালো তা বলা যাবে না। তবে আমরা আশাবাদী।
এসআরএস/এমএইচআর/এএসএম