ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

৯ মাস বন্দরে পড়ে ছিল মদভর্তি কনটেইনার, খোঁজ রাখেনি কাস্টমস!

ইকবাল হোসেন | প্রকাশিত: ০৪:২৬ পিএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • গার্মেন্টস ফেব্রিক্স ঘোষণায় মদের চালানে ১২ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা
  • চার মাস আগেই চালানটির খালাস দেখানো হয় এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে
  • জড়িত কাস্টমস কর্মকর্তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট, কাস্টমস কমিশনার বলছেন পাসওয়ার্ড হ্যাক

চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ করা হয়েছে কনটেইনারভর্তি মদের চালান। মদভর্তি কনটেইনারটি ৯ মাসের বেশি সময় বন্দর অভ্যন্তরে পড়েছিল। চালানটি খালাসের জন্য কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এট্রিও সাবমিট করে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। শতভাগ রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের ফেব্রিক্স ঘোষণায় মদের এ চালান আমদানির মাধ্যমে ১২ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকির অপচেষ্টা করা হয়েছে বলে জানায় কাস্টমস।

অভিযোগ উঠেছে, ৯ মাস ধরে বন্দরের অভ্যন্তরে মদভর্তি কনটেইনার পড়ে থাকলেও দীর্ঘ সময়েও কেন কাস্টমস বিষয়টি শনাক্ত করতে পারেনি। কাস্টমসের তথ্য বলছে, গত চার মাস আগেই চালানটির শুল্কায়ন হয়েছে। একই সঙ্গে কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমেও ফেব্রিক্স ঘোষিত চালানটি খালাস দেখানো হয়েছে। কাস্টমসের ভাষায় এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম থেকেও চালানটি ‘এক্সিট’ দেখানো হয়েছে। তবে বন্দর থেকে বের না হওয়ায় বন্দরের সিটিএমএস (কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) থেকে কনটেইনারটির অবস্থান শনাক্ত হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফাইজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো মদের চালানটি আমদানি থেকে শুল্কায়ন পর্যন্ত একটি সিন্ডিকেট কাজ করেছে। আমাদের সতর্ক অবস্থানের কারণে তারা বন্দর থেকে চালানটি খালাস নিতে পারেনি।’

পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। চালানটি আমদানিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমরা জনসম্মুখে হাজির করবো।- কাস্টমস কমিশনার

কাস্টমস কমিশনারের দাবি, চালানটি শুল্কায়নের ক্ষেত্রে কাস্টমসের এক কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড হ্যাক করা হয়েছিল। পাসওয়ার্ড হ্যাক করে শুল্কায়ন করা হলেও চালানটির অ্যাসেসমেন্ট ফি ও ভ্যাট হিসেবে সরকারি পাওনা কাস্টমসের ব্যাংক হিসেবে জমা হয়েছে।

৯ মাস বন্দরে পড়ে ছিল মদভর্তি কনটেইনার, খোঁজ রাখেনি কাস্টমস!

তবে ৯ মাস আগে চালানটি বন্দরে আসা এবং চার মাস আগে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলেও চালানটি চিহ্নিত ও আটকাতে এত সময় কেন লাগলো জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। চালানটি আমদানিতে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। যারা জড়িত তাদের সবাইকে আমরা জনসম্মুখে হাজির করবো।’

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আটক মদের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর। গার্মেন্টস ফেব্রিক্স হিসেবে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের আদমজি ইপিজেডের সুপ্রিম স্মার্ট ওয়্যার লিমিটেডের নামে চালানটি আমদানি করা হয়। আমদানিকারকের পক্ষে চালানটি খালাসের দায়িত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম নগরীর গোলবাগ এলাকার সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান হাফেজ ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড।

কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলেও আটক হওয়ার আগে চালানটি বন্দর থেকে ছাড়ানোর জন্য কেউ আসেনি। কাস্টমসের শুল্ককর পরিশোধের পরে বন্দরের কয়েকটি চার্জ ও ফি রয়েছে। এগুলো পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ওই চালানটির ক্ষেত্রে তাও পরিশোধ করা হয়নি।- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক

২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ওই সিঅ্যান্ডএফের নামেই চালানটি ফেব্রিক্স ঘোষণা দিয়ে কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়। যাবতীয় শুল্কায়ন কার্যক্রম শেষে গত মে মাসের মাঝামাঝি চালানটি কাস্টমসের এসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে খালাস দেখানো হয়।

এদিকে দীর্ঘ ৯ মাসেরও বেশি সময় পরে মদের চালানটি আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা। এর আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতেই চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে ফেব্রিক্স ঘোষণায় শুল্কায়ন হওয়া কনটেইনারটি ফোর্স কিপডাউন করে। এরপর শতভাগ কায়িক পরীক্ষা সম্পন্ন করে এআইআর টিম। বৃহস্পতিবার সকালে কায়িক পরীক্ষা শেষে ২০ ফুটের কনটেইনারটিতে ১ হাজার ১১৪ কার্টনে বিদেশি বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ উদ্ধারের বিষয়টি জানানো হয়। এতে ১১ ব্রান্ডের ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার মদ পাওয়া যায়।

৯ মাস বন্দরে পড়ে ছিল মদভর্তি কনটেইনার, খোঁজ রাখেনি কাস্টমস!

মদের চালান আটকের বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখার ডেপুটি কমিশনার একেএম খাইরুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গার্মেন্টস ফেব্রিক্সের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে নারায়গঞ্জের আদমজি ইপিজেডের সুপ্রিম স্মার্ট ওয়্যার লিমিটেড চালানটি আমদানি করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মদের চালানটি আটক করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে এতে ১১ হাজার ৬৭৬ লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। এতে প্রায় ১২ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অপচেষ্টা রুখে দেওয়া হয়েছে।’

কাস্টমস জানায়, চালানটির রপ্তানিকারক দেশ, ওয়েবসাইট, পণ্য তৈরি দেশ, আমদানিকারকের ব্যবসার ধরন ও ঠিকানা, পণ্যের বর্ণনা বিশ্লেষণ করে চালানটিতে মিথ্যা ঘোষণার মদের চালান আমদানির বিষয়ে ধারণা করে এআইআর টিম। আটক মদের চালানটিতে জ্যাক ডেনিয়েলস, টিচার্স, স্মিরনফ, ব্যালেন্টাইনস, পাসপোর্ট স্কচ, সিভাস রিগাল, ফোর্ট স্ট্রিট, হান্ড্রেড পিপার্স, রেপেডস, অ্যাবসিলুউট ভদকা এবং ব্ল্যাক লেবেল ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়।

৯ মাস বন্দরে পড়ে ছিল মদভর্তি কনটেইনার, খোঁজ রাখেনি কাস্টমস!

সূত্র জানায়, আটক মদের চালানের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। এর বিপরীতে সরকারি প্রায় ১২ কোটি টাকার রাজস্ব রয়েছে। মিথ্যা ঘোষণায় ওই ১২ কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা হয়। চালানটির শতভাগ কায়িক পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকা চট্টগ্রাম কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) মুহাম্মদ মাহফুজ আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি পুরো বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত নন বলে জানান।

মূলত বন্দর কর্তৃপক্ষের সতর্কতার কারণে মদের চালানটি বের করা সম্ভব হয়নি বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাস্টমসের শুল্কায়ন প্রক্রিয়া শেষ হলেও আটক হওয়ার আগে চালানটি বন্দর থেকে ছাড়ানোর জন্য কেউ আসেনি। কাস্টমসের শুল্ককর পরিশোধের পরে বন্দরের কয়েকটি চার্জ ও ফি রয়েছে। এগুলো পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু ওই চালানটির ক্ষেত্রে তাও পরিশোধ করা হয়নি।’

এমডিআইএইচ/এএসএ/জেআইএম