ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ক্রয় বৈঠক

পুরোনো চুক্তির আওতায় কেনা হচ্ছে সার

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২৪

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্রয় কমিটির প্রথম বৈঠকে সার কেনা সংক্রান্ত তিন প্রস্তাব নিয়ে আসা হচ্ছে। তিনটি প্রস্তাবে ৯০ হাজার মেট্রিক টন সার কেনার অনুমোদন চাওয়া হবে। এ সার কিনতে খরচ ধরা হচ্ছে ৩৫৯ কোটি ৮১ লাখ ২৬ হাজার ৮০০ টাকা। এ সার কেনা সংক্রান্ত চুক্তি করা হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করা হাসিনা সরকারের আমলে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এ সার কেনার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। কমিটির আহ্বায়ক অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বৈঠকে সভাপতিত্বে করবেন।

বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার, কাতারের মুনতাজাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্লক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার প্রস্তাব দেওয়া হবে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ফার্টিগ্লোব ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড থেকে ফার্ম ২ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং আপৎকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য অপশনাল ১ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ৩ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়।

ফার্টিগ্লোব থেকে জিটুজি চুক্তির আওতায় ২০০৭ থেকে ইউরিয়া সার আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর সংশোধনী চুক্তি সই করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য ফার্টিগ্লোবের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।

চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর। এসময়ের মধ্যে ফার্টিগ্লোব থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ৯টি লটে ফার্ম ২ দশমিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য দুটি অপশনাল শূন্য দশমিক ৬০ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফার্টিগ্লোবের নেগোশিয়েটিং ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক থেকে ইস্যু করা এলসি অ্যাড কনফার্ম না করায় একটি লটের সারের মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে ফার্টিগ্লোব পরবর্তী লটের সার সরবরাহ করে আসছে।

এ কারণে ফার্টিগ্লোবের কাছ থেকে পরিকল্পনা মাফিক সার আমদানি বিলম্ব হয়েছে। চুক্তিবদ্ধ সময়সীমার মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের ২৫ জুলাই প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী ১১তম লটের দর নেওয়া হয়েছে। এ ১১তম লেক্যানে লটের চুক্তির মেয়াদের পরে হলেও এলসি অ্যাড কনফার্মেশন সাপেক্ষে ফার্টিগ্লোব পরিবর্তিত লেক্যানে সার সরবরাহে সম্মত আছে।

ফার্টিগ্লোবের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১১তম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির লেক্যান নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ২১-২৫ আগস্ট। চুক্তি মোতাবেক ইউরিয়া সারের দর সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল তিনটি জার্নালে প্রকাশিত মিডল-ইস্ট এফওবি/এরাবিয়ান গাল্ফ এফওবি বাল্ক দরের গড়ের ভিত্তিতে ইউরিয়া সারের একক দর নির্ধারিত হবে। চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ২৫ জুলাই বুলেটিনে প্রকাশিত দর ১১তম লটের জন্য প্রযোজ্য হবে।

চুক্তি অনুযায়ী ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মোট এফওবি মূল্য এক কোটি ৩ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা ধরা হয়েছে) এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ১২১ কোটি ৯৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সংশ্লিষ্ট টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটির সভায় ফার্টিগ্লোব থেকে এ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সুপারিশ করা হয় এবং গত ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিসিআইসির ৩৩তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ক্রয় প্রস্তাবটি শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

অপরদিকে, কাফকো থেকে ৫ দশমিক ৪০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দ্বিতীয় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রাইস অফার পাঠানোর জন্য কাফকোকে অনুরোধ করে বিসিআইস। কাফকো গত ২৫ জুলাই প্রকাশিত চারটি বুলেটিনের দর অনুযায়ী দ্বিতীয় লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকো’র প্রাইস অফারের মেয়াদ ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বলবৎ আছে।

কাফকো’র দেওয়া প্রস্তাবিত প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের দর এফওবি ৩২৭ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মেট্রিক টনের ব্যাগিং চার্জ বাবদ ৫ মার্কিন ডলার যোগ হবে। এছাড়া ব্যাগিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাগ ও সুতা বিসিআইসি থেকে সরবরাহ করা হবে। সে হিসেবে এফওটি ভিত্তিতে প্রতি মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মূল্য ৩৩২ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার। এতে ৩০ হাজার মেট্রিক টন সারের ক্রয় মূল্য হবে ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ মার্কিট ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ১১৭ কোটি ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা)। গত ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত বিসিআইসির বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের আলোকে এ ক্রয় প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কাতারের মুনতাজাতের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ সারের পরিমাণ ফার্ম ২.৭০ লাখ মেট্রিক টন এবং আপৎকালীন ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অপশনাল ২.৪০ লাখ মেট্রিক টনসহ মোট ৫.১০ লাখ মেট্রিকটন টন। মুনতাজাত থেকে জিটুজি চুক্তির আওতায় ২০০৭ থেকে ইউরিয়া সার আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর সংশোধনী চুক্তি স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ইউরিয়া সার আমদানি করা হচ্ছে।

গত ১১ জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সার আমদানির জন্য কাতারের মুনতাজাতের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। এ চুক্তির মেয়াদ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এসময়ে মুনতাজাত থেকে ৩০ হাজার মেট্রিক টনের ৯টি লটে ফার্ম ২ দমশিক ৭০ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করা হবে।

মুনতাজাতের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম লটের ৩০ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার আমদানির লেক্যান নির্ধারণ করা হয়েছে চলতি বছরের ১-৫ সেপ্টেম্বর। চুক্তি অনুযায়ী ইউরিয়া সারের দর সংক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল তিনটি জার্নালে প্রকাশিত মিডিল-ইস্ট এফওবি/এরাবিয়ান গল্ফ এফওবি বাল্ক দরের গড়ের ভিত্তিতে ইউরিয়া সারের একক দর নির্ধারিত হবে।

চুক্তি অনুযায়ী চলতি বছরের ৮ আগস্টের বুলেটিনে প্রকাশিত দর প্রথম লটের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার ইউরিয়ার এফওবি দর কাতারের মেসাইদ বন্দর ৩৩৯ দশমিক ১৭ মার্কিন ডলার নির্ধারিত হয়েছে। ফলে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের এফওবি মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ৬ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা)। ১২ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিসিআেইসি’র বোর্ডসভার সুপারিশের আলোকে এ ক্রয় প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এমএএস/এমএএইচ/এএসএম