ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অধিক নজর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২৪

দেশের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে সদ্য বিদায়ী সরকার রাজনৈতিক বিবেচনা বা ভোটের কথা চিন্তা করে যেসব প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তা বাতিল হতে পারে। পাশাপাশি মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বা জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত প্রকল্পগুলো অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এরই মধ্যেই এমন একটা রূপরেখা তৈরি করেছি পরিকল্পনা কমিশন। এ রূপরেখা অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ-পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। জানা যায়, চলমান অর্থসংকটে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হলেও কোনো প্রভাব পড়েনি মেগা প্রকল্পে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব প্রকল্পের কাজ চলছিল বেশ জোরেশোরেই। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর এসব প্রকল্প নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কথা হলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান জাগো নিউজকে বলেন, চলমান প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পে সংস্কার করা হবে। বাজেট ও অর্থ দেখতে হবে। বর্তমান সরকার জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বেশি নজর দেবে। সামাজিক ও আর্থিক বিষয়টি বেশি করে বিবেচনা করা হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক সচিব বলেন, রাজনৈতিকভাবে নেওয়া অনেক প্রকল্প বাদ যাবে। অনেক মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ কমবে। মানুষ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে পারে এমন প্রকল্পগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, মেগা প্রকল্পের কাজ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করছে। আওয়ামী লীগ সরকার এসব প্রকল্প তার দৃশ্যমান উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। এজন্য তারা মেগা প্রকল্পে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে আসছিল। অর্থনীতিবিদরা বার বার এসব প্রকল্পে গুরুত্ব কম দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিল। তাদের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টাও রয়েছেন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) গুরুত্ব পাওয়া মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে— রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এ প্রকল্পের বরাদ্দ রয়েছে ১০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। এটিতে রাশিয়ার বৈদেশিক ঋণ আছে। ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৬৪ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা।

এরপরে রয়েছে মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্প। চলতি অর্থবছরে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ১৯৭৫ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২০ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-১ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ১৯৪২ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১৫৮৫ কোটি টাকা। মেট্রোরেল লাইন-৫, নর্দার্ন রুট প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ৯৬৮ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল সেতুর জন্য বরাদ্দ ২৫৬০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এসব প্রকল্পে জাপানসহ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ রয়েছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩৫৪৪ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে ঋণ দিচ্ছে চীন।

দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ১৪৫৩ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৭১৭২ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে চীন এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ রয়েছে।

আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং সাসেক সংযোগ সড়ক প্রকল্প, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প।

এদিকে অর্থসংকটে থমকে গেছে এডিপি বাস্তবায়ন। বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য এক মাসের মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ কাজ করতে হবে।

মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি অনিশ্চয়তা রয়েছে চলতি অর্থবছরে এডিপিতে অনুমোদন পাওয়া ১৩২১টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প ২১টি।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব প্রকল্পের অনেকগুলোই বাদ দিতে পারে। কারণ প্রকল্পগুলোতে রাজনৈতিক বিবেচনার তথা লবিংয়ের প্রকল্পও রয়েছে। বিশেষ করে ৫০ কোটি টাকার নিচে যেসব প্রকল্প রয়েছে এগুলোর অনেক প্রকল্পই লবিংয়ের মাধ্যমে অনুমোদন হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কাজ অনেক হলেও সময় কম। চলমান প্রকল্পগুলো ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রকৃত প্রয়োজন হলে বাস্তবায়ন শেষ করতে হবে। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হলে সেগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, এ সরকার দেখবে প্রকল্পের প্রয়োজন কতটুকু, এছাড়া রাজস্ব আদায়েও একটা চ্যালেঞ্জ আছে।’

এমওএস/এমএএইচ/এএসএম