ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

আন্দোলনের প্রভাব শেয়ারবাজারে, লেনদেন তিনশ কোটির ঘরে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৪:২৯ পিএম, ১৮ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের শেয়ারবাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। ক্রেতা সংকটে দরপতন হচ্ছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের। সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে লেনদেন খরা।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন কমে তিনশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এর মাধ্যমে ১৯ কার্যদিবস বা এক মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটলো। সেই সঙ্গে বাজারটিতে ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম কমার তালিকায়। ফলে এ বাজারটিতেও সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর পরই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের অবরোধ ও সংঘর্ষের খরব আসতে থাকে। এতে দেখা দেয় ক্রেতা সংকট। ফলে ঢালাও দরপতন হয় শেয়ারবাজারে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই সংকট অব্যাহত থাকে। ফলে ঢালাও দরপতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩১১টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৪৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অর্থাৎ লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে।

সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ৩৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৪৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৫৩ পয়েন্টে নেমে গেছে।

এদিকে দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৬৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৯২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৯ জুনের পর ডিএসইতে সবচেয়ে কম লেনদেন হলো।

বাজারের এই চিত্র সম্পর্কে ডিএসই’র এক সদস্য বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। এ কারণে অনেকেই বিনিয়োগ না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজার খুবই সেনসিটিভ। দেশ বা অর্থনীতির ভালো খবরে শেয়ারবাজারে যেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়ে, তেমনি নেতিবাচক খবরেও তার প্রভাব পড়ে। মূলত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া পরিস্থিতির কারণেই আজ শেয়ারবাজারে এমন দরপতন ও লেনদেন খরা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ইন্টারনেটের সমস্যার কারণেও বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ইন্যাক্টিভ ছিলেন।

ডিএসই’র পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ আমাদের মন খুব খারাপ। আজ কোনো কিছু নিয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বাজারে বর্তমান পরিস্থিতির প্রভাব তো পড়েছেই। তাছাড়া দুদিকে (লেনদেন কার্যদিবসের আগে ও পরে) সরকারি ছুটি থাকলে অতীতে আমরা দরপতন দেখেছি। সব কিছু মিলেই আজ দরপতন হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহেই বাজার ভালো হয়ে যাবে।

এদিকে লেনদেন খরার বাজারে লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গ্রামীণফোনের ১১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১১ কোটি ৫২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- অগ্নি সিস্টেম, বিচ হ্যাচারি, জেমিনি সি ফুড, সোনালী পেপার, ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক এবং ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৪২টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

এমএএস/এমএইচআর/জিকেএস