ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

৮ বছরেও হয়নি মুদ্রণশিল্প নগরী, ব্যয় বেড়ে তিনগুণ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৫০ পিএম, ০৬ জুলাই ২০২৪

সময়-ব্যয় বৃদ্ধির খেলায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) মুদ্রণশিল্প নগরী প্রকল্পটি। আট বছর আগে শুরু হওয়া প্রকল্পটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। অথচ ব্যয় বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। নতুন করে ফের সময়-ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটির মূল প্রস্তাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩৮ কোাটি ৭০ লাখ টাকা। এরপরে দ্বিতীয় ধাপে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট ব্যয় বাড়ে ১২৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকার। নতুন করে মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪৪৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ফলে শুরু থেকে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৩১০ কোটি টাকা, যা তিনগুণেরও বেশি। ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি মেয়াদও বেড়েছে কয়েকগুণ।

দিগত ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। এর আগে প্রকল্প ব্যয় না বাড়িয়ে তিন বছর (ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত) মেয়াদ বাড়ানো হয়। অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানো হয়েছে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে এসময়ও বাস্তবায়িত হবে না প্রকল্পের কাজ। তাই নতুন করে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে জুন ২০২৭ হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট সময় এখন দাঁড়ালো ১১ বছর।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ধীরগতি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, নানা কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি হয়। ভূমি অধিগ্রহণের কারণেও প্রকল্পটি ধীরগতি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে সামনে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আর সমস্যা হবে না। আমরা সঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলি। তারপরও প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, প্রকল্প এলাকা হচ্ছে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলা। প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঢাকা শহর ও দেশের অন্যান্য স্থানে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা মুদ্রণশিল্প কারখানাগুলো একটি সুবিধাজনক পরিবেশবান্ধব স্থানে স্থানান্তরসহ যাবতীয় সহযোগিতা দেওয়া, বেসরকারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ২৯৯টি (কম/বেশি) মুদ্রণশিল্প স্থাপনে অবকাঠামোগত সুবিধা দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

প্রকল্প ব্যয় বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানা যায়, প্রকল্পের জন্য নতুন স্থান নির্বাচন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত নতুন স্থানে চিহ্নিত জমির বর্ধিত মূল্য সংস্থান, পরিবর্তিত ১০০ একর জমির পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন অঙ্গের পরিমাণ ও ব্যয় হ্রাস/বৃদ্ধি, পিডব্লিউডি রেট শিডিউল-১৮ অনুযায়ী পূর্ত কাজের ব্যয় প্রাক্কলন, অত্যাবশ্যকীয় নতুন অঙ্গ অন্তর্ভুক্তি, প্রকল্পের লে-আউট সংশোধন, জনবলের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতের অর্থনৈতিক কোড পরিবর্তন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি ইত্যাদি।

প্রকল্পের আওতায় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণ ও ৮ দশমিক শূন্য ৪ লাখ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন, ৩৭৫ বর্গমিটার অফিস ভবন ও ৯৩ বর্গমিটার পাম্প ড্রাইভার কোয়ার্টার্স নির্মাণ, ১ হাজার ৮৬৪ মিটার সীমানা প্রাচীর ও একটি গেট নির্মাণ, ৪৫ হাজার ৬৭৩ বর্গমিটার রাস্তা নির্মাণ, ৯ হাজার ৪৭৫ মিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, ২৮টি কালভার্ট/ক্রসড্রেন নির্মাণ, ১৬০ দশমিক ৫৩ মিটার প্যালাসাইডিং, একটি গভীর নলকূপ স্থাপন, ৪ হাজার ৮০৫ মিটার পানির লাইন ও ৫ হাজার ৩৫০ মিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন, সোলার প্যানেল স্থাপন এবং ১ হাজার ৪৮৭ বর্গমিটার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট/ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণ ইত্যাদি।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপি-তে শিল্পখাতের অবদান ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৮৬ শতাংশে উন্নীত করা, শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ৯০ শতাংশে উন্নীত করা, পণ্যের উৎপাদনে দক্ষতা বৃদ্ধি, শ্রমঘন শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন বাড়ানো, আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন এবং শিল্প উৎপাদনে বেসরকারি খাতের প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, শিল্পায়ন বৃদ্ধি এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর ফলে দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে, যা প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করবে এবং জিডিপিতে অবদান রাখবে।

এমওএস/এমএএইচ/জেআইএম