তৈরি পোশাক রপ্তানি ভালো করছে নতুন বাজারে
তৈরি পোশাক খাতের সামগ্রিক রপ্তানি আয় চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বাড়লেও অপ্রচলিত বাজারে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারে তুলনামূলক ভালো প্রবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত অপ্রচলিত বাজার থেকে পোশাক পণ্যের রপ্তানি আয় ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১৮ কোটি ডলার, যা একই সময়ে আগের বছরে ছিল ৭৬৮ কোটি ৯ লাখ ডলার। মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ এসেছে নতুন বাজার থেকে।
অন্যদিকে, তৈরি পোশাকের পণ্যের সামগ্রিক রপ্তানি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ হাজার ২৬৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
- আরও পড়ুন
পোশাক শিল্পের জন্য বাজেট হতাশাব্যঞ্জক
পোশাকের নতুন বাজারে ১৪ বছরে রপ্তানি বেড়েছে ১০ গুণ
পোশাক খাতে বেড়েছে নতুন বিনিয়োগ, রপ্তানি কমেছে প্রধান বাজারে
অপ্রচলিত বাজারের মধ্য থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে জাপান থেকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে জাপান থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি। আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ১৪৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতে পোশাক পণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ৭৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৯৫ কোটি ডলার।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখান থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি আয় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮ কোটি ৫৪ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ১০৬ কোটি ডলার।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলমান থাকলেও রাশিয়া থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ২৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৪০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক অংশীদার ভারতে পোশাক পণ্যের রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ৭৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৯৫ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের এক নম্বর বাণিজ্যিক অংশীদার চীনে রপ্তানি বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। আয় হয়েছে ৩১ কোটি ৫৭ লাখ ডলার, যা আগের বছরে ছিল ২৫ কোটি ২ লাখ ডলার।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে রপ্তানি বেড়েছে ৫৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ২৭ কোটি ৩ লাখ ডলার, যা গত বছর ছিল ১৭ কোটি ২ লাখ ডলার
- আরও পড়ুন
লোহিত সাগরে অস্থিরতা, কনটেইনার সংকটে রপ্তানিকারকরা
মে মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ১৬ শতাংশ
দেশে সবুজ পোশাক কারখানার সংখ্যা এখন ২১৪
কোরিয়ায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ১১ মাসে আয় হয়েছে ৫৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার। গত বছর পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৫০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানি আয়ের ৪৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ আসে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে। অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় ইতিবাচক থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে রপ্তানি কমেছে ২ শতাংশ। জুলাই-মে সময়ে আয় হয়েছে ২ হাজার ১৬৪ কোটি ৮১ লাখ ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। প্রথম ১১ মাসে আয় হয়েছে ৭৪৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। গত বছর একই সময় আয় হয়েছিল ৭৭৩ কোটি ৩৮ লাখ ডলার।
বাজেটে যে নতুন ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং বাজেট রপ্তানিবান্ধব করতে হবে। অন্যথায় রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে’- বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম
যুক্তরাজ্যে তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আয় হয়েছে ৫১৬ কোটি ডলার, যা গত বছর ছিল ৪৫৯ কোটি ডলার।
পোশাক পণ্যের রপ্তানি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রচলিত বাজারের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা কমাতে আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। ফলে নতুন বাজারে রপ্তানির হিস্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং প্রচলিত বাজারের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হারও বেশি।’
‘এ প্রবৃদ্ধির হার ধরে রাখতে এবং আগামী দিনে আরো ভালো করতে সরকারের চলমান সুবিধাগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি বাজেটে যে নতুন ধরনের কর আরোপ করা হয়েছে সেগুলো প্রত্যাহার করা এবং বাজেট রপ্তানিবান্ধব করতে হবে। অন্যথায় রপ্তানির এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে’ বলে দাবি করেন হাতেম।
- আরও পড়ুন
রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাকখাত থেকে: বস্ত্রমন্ত্রী
পোশাকশ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দাবি
পোশাকখাতে শ্রমিক ৫০ লাখ ১৭ হাজার: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছি না। সম্ভাবনা অনুযায়ী আমরা রপ্তানি আয় বাড়াতে পারছি না। এক্ষেত্রে সরকারকে অশুল্ক বাধা দূর করা এবং রপ্তানি সহজীকরণের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভারত একটি বড় বাজার। কারণ এর রয়েছে অনেক বড় জনসংখ্যা। সেখানে যদি আমরা খুব সামান্য পরিমাণও মার্কেট ধরতে পারি সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন হবে। সুতরাং ভারতসহ সম্ভাবনাময় সব অপ্রচলিত বাজারগুলোর প্রতি সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে এবং বাণিজ্যিক রিংগুলো কাজে লাগাতে হবে।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নতুন বাজারের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। তবে তা সম্ভাবনার চেয়ে কম। আমাদের নতুন বাজার আরো বেশি করে অনুসন্ধান করা উচিত। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে প্রচলিত বাজারে মার্কেটের হিস্যা রপ্তানিতে কমেছে।’
অন্যদিকে প্রচলিত বাজারে অতিমাত্রায় নির্ভরশীলতা ঝুঁকিপূর্ণ এবং যে কোনো সময় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। সরকার ও রপ্তানিকারকদের নতুন বাজারে রপ্তানির জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করার পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, নতুন ধরনের নীতির সহায়তা প্রদান করতে হবে এবং নগদ সহায়তার পুনর্বিন্যাস করতে হবে; যাতে নতুন পণ্য ও নতুন মার্কেটে রপ্তানি করতে তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকরা আগ্রহী হন।
আইএইচও/এমএমএআর/জেআইএম