খেলাপি ঋণে সর্বকালের রেকর্ড ভাঙলো
নানান নিয়ম-বিধি করা হচ্ছে। ঋণ আদায়ে দেওয়া হচ্ছে সুবিধা। তবে কাজ হচ্ছে না কিছুতেই। অর্থনীতির বিষফোঁড়া খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণ সব রেকর্ড ভেঙেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা তিন মাস আগেও ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।
খাত বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংকের নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে খেলাপি ঋণের কারণে। ব্যাংকখাতে সুশাসনে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের মত তাদের। তবে বসে নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। সম্প্রতি এবার খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ গ্রহীতাদের যোগ্যতা যাচাইয়ে প্রাইভেট ক্রেডিট ব্যুরো (পিসিবি) নামে নতুন সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সংস্থাটি গ্রাহকের সম্পদ ও যোগ্যতা নির্ধারণ করে রেটিং দেবে। যার ভিত্তিতেই গ্রাহক ঋণ পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মার্চ প্রান্তিক শেষে ব্যাংকখাতে মোট বিতরণ (আউটস্ট্যান্ডিং) করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
তার আগের প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ৯ শতাংশ। সে হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। গত বছরের মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৫০ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাচ্ছে না। ব্যাংকখাতের এ বিষফোঁড়া নিয়ে দাতা সংস্থারও চাপ রয়েছে। খেলাপি ঋণ কমাতে ঋণ গ্রহীতাদের যোগ্যতা যাচাইয়ে প্রাইভেট ক্রেডিট ব্যুরো বা পিসিবি নামে নতুন সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পিসিবি গ্রাহকের সম্পদ ও যোগ্যতা নির্ধারণ করে রেটিং দেবে। যার ওপর ভিত্তি করেই গ্রাহক ঋণ পাবেন।
খেলাপি ঋণ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত ১০ বছরে খেলাপি ঋণ ৪২ হাজার ৭২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকখাতে সুশাসনে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতা না থাকায় এ নেতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গোষ্ঠীর যোগসাজশে যে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা তৈরি হয়েছে, তার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতায় তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে অনেক ব্যাংকে।
খেলাপি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসার মতোই খেলাপি ঋণ মডেলে পরিণত হয়েছে। সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক-ব্যবসায়িক কারণে এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এখন যে পরিস্থিতিতে এসেছে, এত খারাপ অবস্থায় আগে কখনো যায়নি। অবস্থার উন্নতি না হলে খেলাপি কমবে না। এ অবস্থা অবশ্যই কঠোর হাতে দমন করতে হবে। সুশাসন আনতে ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে।
ইএআর/এমএইচআর/জিকেএস