বাজুস
সোনা চোরাচালানের মূলহোতারা আড়ালে, ধরা পড়ছে চুনোপুঁটি
সোনা ও হীরা চোরাচালানের মূলহোতারা আড়ালে থেকে যায়, যেখানে ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা এমন অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। সে ক্ষেত্রেও আইনের বেড়াজালে জামিনে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে চুনোপুঁটির দল। ফলে চোরাচালান চলছে তাদের নিজস্ব গতিতেই।
সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে মনিটরিং সেল গঠনের দাবি জানিয়েছে জুয়েলারি খাতের সংগঠনটি। সোমবার (৩ জুন) বাজুস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুয়েলারি শিল্পের চলমান সংকট ও দেশি-বিদেশি চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য, অর্থপাচার ও চোরাচালান বন্ধ এবং কাস্টমসসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর জোরালো অভিযানের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বাজুস।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাজুসের উপদেষ্টা রুহুল আমিন রাসেল, বাজুস কার্যনির্বাহী কমিটির সহ-সভাপতি ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন অ্যান্টি-স্মাগলিং অ্যান্ড ল এনফোর্সমেন্টের চেয়ারম্যান মো. রিপনুল হাসান, সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন ট্যারিফ অ্যান্ড ট্যাক্সেশনের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাজুস আজ জুয়েলারি খাতের এক উজ্জ্বল সোনালি দ্বারপ্রান্তে। এই গর্ব সব জুয়েলারি ভাইদের কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার ফলশ্রুতিতে বাজুসের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। একদল দেশদ্রোহী, প্রতারক ও চোরাকারবারিদের জন্য এ অবস্থা। যেসব ব্যক্তি চোরাচালানের মতো ঘৃণিত ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ও দেশের সুনাম নষ্টকারী তাদের সঙ্গে বাজুস কোনোদিন আপস করেনি, এমনকি বাজুস আইনি ব্যবস্থা নিতে সর্বদা প্রস্তুত।
আরও পড়ুন
- সোনা-হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে বছরে ৯১ হাজার কোটি টাকা পাচার
- ৫০ বছরে পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা
মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২ ধারায় সোনা চোরাচালানকে মানি লন্ডারিং এর সম্পৃক্ত অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। আইনে সেখানে ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ২০ (বিশ) লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, মূলহোতা আড়ালে থেকে যায় এবং ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা।
লিখিত বক্তব্যে বাজুস সহ-সভাপতি রিপনুল হাসান বলেন, ডলারের মাত্রাতিরিক্ত দাম ও সংকটসহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার ঊর্ধ্বমুখী দাম এবং বেপরোয়া চোরাচালানের ফলে বহুমুখী সংকটে পড়েছে জুয়েলারি শিল্প। এ পরিস্থিতিতে সোনার বাজারে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে চোরাকারবারিদের দেশি-বিদেশি সিন্ডিকেট। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে স্থানীয় পোদ্দার বা বুলিয়ন বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যাদের সঙ্গে চোরাকারবারিদের সিন্ডিকেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মূলত এই চোরাকারবারিদের একাধিক সিন্ডিকেট বিদেশে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। দেশে চলমান ডলার সংকট ও অর্থপাচারের সঙ্গে সোনা চোরাচালানের সিন্ডিকেটসমূহের সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে জানানো হয়।
সোনার বাজারের অস্থিরতার নেপথ্যে জড়িত চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে কাস্টমসসহ দেশের সব আইন- প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের জোরালো অভিযান ও শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সোনার বাজারে শৃঙ্খলা আনতে কঠোর অভিযান, বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সোনা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আলোচিত জেলাগুলোতে চিরুনি অভিযানের দাবি করছে বাজুস। তবে সরকারি নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, এমন কোনো বৈধ জুয়েলারি ব্যবসায়ীকে অভিযানের নামে হয়রানি করা যাবে না।
তিনি বলেন, অভিযানের পুরো কর্মকাণ্ডে বাজুসকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সোনা ও হীরা চোরাচালান প্রতিরোধে বাজুসকে সম্পৃক্ত করে পৃথকভাবে সরকারি মনিটরিং সেল গঠন করার দাবি জানান তিনি।
এসময় আরও জানানো হয়, প্রতিবেশি দেশ ভারতর সঙ্গে বাংলাদেশের ৩০টি জেলার সীমান্ত সংযোগ। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ৬ জেলা মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াড়াঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশাের ও সাতক্ষীরা জেলা সোনা চোরাচালানের নিরাপদ রুট হয়ে উঠেছে। ভারতে পাচার হওয়া সোনার বড় একটি অংশ এসব জেলার সীমান্ত দিয়ে হয়ে থাকে।
বাজুসের প্রাথমিক ধারণা, প্রবাসী শ্রমিকদের রক্ত-ঘামে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার অপব্যবহার করে প্রতিদিন সারাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথে কমপক্ষে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার অবৈধ সোানার অলংকার, সোনার বার, ব্যবহৃত পুরোনো জুয়েলারি ও হীরার অলংকার চোরাচালানের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। যা একবছর শেষে দাঁড়ায় প্রায় ৯১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি।
ইএআর/এসএনআর/জিকেএস