ঈদের বেচাকেনায় প্রস্তুত নিউমার্কেটের দোকানিরা, ভালো বিক্রির আশা
ঈদুল ফিতরের পর এখনো তেমন জমে ওঠেনি রাজধানীর নিউমার্কেটের কেনাকাটা। ঈদুল আজহার আগে এখনো হাতে বেশ সময় থাকায় ক্রেতারা ততটা মার্কেটমুখী হননি। ফলে মার্কেটের দোকানগুলোতে ক্রেতা সমাগম নেই বললেই চলে। যদিও ছুটির দিনগুলোতে কিছু ক্রেতার দেখা পান নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা জানান, সামনে ঈদকে কেন্দ্র করে আগেভাগেই বাড়তি বিক্রির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন তারা। তবে ক্রেতা সমাগম এখনো শুরু হয়নি। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও অন্যদিন ক্রেতার দেখা তেমন একটা পাওয়া যায় না। তবে ঈদকেন্দ্রিক ভালো বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা।
যদিও উল্টোচিত্র ফুটপাতের দোকানগুলোতে। তুলনামূলক দাম কম হওয়ায় ফুটপাত থেকে কেনাকাটা করছেন অনেকেই। অন্যদিকে বিক্রি কম হওয়ায় মার্কেটের বিক্রেতারা অনেকটাই অলস সময় পার করছেন। তারা বলছেন, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে বিক্রি একেবারেই কম। তবে ছুটির দিন হওয়ায় আজ বিক্রি কিছুটা বেড়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) বিকেলে নিউমার্কেট ও পাশের গ্লোব শপিং কমপ্লেক্স, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নুরজাহান মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নিউমার্কেট ও আশপাশের মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, যেসব কাপড় বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে শার্ট, টি-শার্ট,প্যান্ট, থ্রিপিস ও বিভিন্ন ডিজাইনের সুতি কাপড়ের চাহিদা কিছুটা বেশি। ছেলেদের কেনাকাটায় পছন্দের শীর্ষে প্যান্ট, শার্ট ও টি-শার্ট। নারীরা কিনছেন থ্রিপিস, ওড়না ও জামা। তবে কেউই এখন ঈদের কেনাকাটা করছেন না বলে জানান তারা। ক্রেতারা জানান, প্রয়োজনীয় কাপড় কিনতে এসেছেন তারা। ঈদের এখনো প্রায় এক মাস বাকি। ফলে ঈদের কেনাকাটা পরে করবেন।
কথা হয় গ্লোব শপিং কমপ্লেক্সের এক দোকানের বিক্রেতা আজিমের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, বিক্রি একেবারেই কম। রোজার ঈদের পর ক্রেতা তেমন আসছে না। মাঝে তীব্র গরমে বিক্রি একেবারেই কমে যায়। তখন দোকান ভাড়া দেওয়ার মতো অবস্থাও ছিল না। তারপর আবার কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। তবে শুক্র ও শনিবার কিছু ক্রেতা আসে। আজ শুক্রবার হওয়ায় ক্রেতা একটু বেশি। আশা করছি কোরবানি ঈদ সামনে রেখে ক্রেতা বাড়বে। আমরা সে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
আরও পড়ুন
নিউমার্কেটের জান্নাত বস্ত্র হাউজের বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, ঈদের পর বিক্রি তেমন নেই। কিছু মালামাল তুলেছি, সেগুলোই বিক্রি করছি। আসন্ন ঈদে বিক্রির জন্য কাপড় অর্ডার করেছি। সেগুলো কয়েক দিনের মধ্যেই চলে আসবে। মূলত এখন ঈদে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি এবার ভালো বিক্রি হবে।
গাউছিয়া মার্কেটের দোকানি অনুপ বিশ্বাস বলেন, ক্রেতা এখন অনেকটাই কম। সপ্তাহে ছুটির দুদিন একটু বেশি ক্রেতা আসে। যদিও ঈদের কেনাকাটা এখনো শুরু হয়নি।
তবে এসব মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বাড়তি দাম চাওয়ার অভিযোগ করেন। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রকৃত বিক্রয়মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দাম চাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফলে দেখা যাচ্ছে অনেক সময় দাম বলতেও লজ্জায় পড়তে হয়। এক হাজার টাকার কাপড়ের দাম চার হাজার টাকা বা তারও বেশি চাচ্ছেন বিক্রেতারা।
উত্তরা থেকে কেনাকাটা করতে নিউমার্কেটে এসেছেন এলিজা আক্তার। জাগো নিউজকে এলিজা বলেন, একটা থ্রিপিসের দাম চাইলো সাড়ে তিন হাজার টাকা। পরে দামাদামি করে সেটা ১১০০ টাকায় কিনলাম। এত দাম চাওয়ার দরকার কী! এত বেশি দাম চায় যে কম দাম বলতেও বিব্রত বোধ করি।
অতিরিক্ত দাম চাওয়ার বিষয়ে কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বিক্রেতারা যে দাম চান না কেন, ক্রেতাদের দামাদামি করে কেনার সুযোগ রয়েছে। তবে অতিরিক্ত দাম চান বলেও জানান তারা।
নিউমার্কেট এলাকার এসব মার্কেটের তুলনায় ওই এলাকায় ফুটপাতে থাকা দোকানে ভিড় বেশি। ক্রেতারা বলছেন, মার্কেটের তুলনায় ফুটপাতে দাম কম হওয়ায় তারা এখান থেকে কেনাকাটা করছেন।
ফুটপাতের এসব দোকান ঘুরে দেখা গেছে, টি-শার্ট ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, শার্ট ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া নারীদের এক পিসের জামা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, ছোট বাচ্চাদের হাফ প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা থেকে ৫০ টাকায়।
বরকত হোসাইন নামের এক ক্রেতা বলেন, বিকেল থেকে মার্কেট ঘুরে কিছু কেনাকাটা করলাম। মার্কেটে দাম বেশি চায়। ফুটপাতের দোকানে অনেকটা কম দামে কাপড় কেনা যায়। তাই ফুটপাতের দোকান থেকে কিছু কেনাকাটা করলাম।
ফুটপাতের বিক্রেতারা জানান, দোকান ভাড়া ও অন্য খরচ না থাকায় তারা কম দামে কাপড় বিক্রি করতে পারেন।
সালমান নামের এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের খরচ কম, বিক্রি বেশি। তাই কম দামে কাপড় বিক্রি করতে পারি। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি বেশি হয়।
তবে ফুটপাতের এসব দোকানের কারণে পথচারীদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে ফুটপাতে চলাচল করা দায়। ফলে বাধ্য হয়েই মূল সড়ক দিয়ে চলতে হয় পথচারীদের।
এনএস/কেএসআর/এএসএম