পুঁজিবাজার বিষয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী
লোভী হওয়া যাবে না, ভয়ও পাওয়া যাবে না
পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেছেন, পুঁজিবাজারে দীর্ঘযাত্রার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। খুব লোভী হওয়া যাবে না, আবার খুব ভয়ও পাওয়া যাবে না।
বুধবার (২২ মে) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আয়োজিত 'পুঁজিবাজারে নারী’ ও স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী পুরস্কার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএসইসির কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিতি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি দেশের অর্থনীতি শুধু মানি মার্কেটের ওপর নির্ভর করে চলতে পারে না। পুঁজিবাজার হলো অর্থনীতির ড্রাইভার (চালিকাশক্তি)। বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে। সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে নারীদের বিও হিসাব অনেক কম। মোট যে বিও হিসাব আছে তার ২৪ শতাংশের মতো নারীদের। নারীদের বিনিয়োগের পরিমাণও যথেষ্ট কম। আমরা জানি ঘরে-বাইরে নারীরা সবত্রই ঠিকমতো হিসাব রাখেন। পুঁজিবাজারে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবার আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ হোক। দীর্ঘযাত্রার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। খুব লোভী হওয়া যাবে না, আবার খুব ভয় পাওয়া যাবে না।
পুঁজিবাজারে লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে হবে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাজার একটা বিশেষায়িত ক্ষেত্র। পুঁজিবাজারে নারীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা অপার। মেয়েরা যেভাবে সবক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে, পুঁজিবাজারেও তারা এগিয়ে আসবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, আমাদের স্টকমার্কেটে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম হওয়ার একটি বড় কারণ হচ্ছে যেভাবেই হোক এখানে (শেয়ারবাজারে) যে কোম্পানিগুলো আসছে, সেগুলো ভালো পারফর্ম করতে পারেনি। হয়তো আমরা ডিউ ডিলিজেন্স সঠিকভাবে করতে পারিনি। এক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আইন ও বিধিবিধান মেনে কাজ করতে হবে। তাহলে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে এবং বাজার ঘুরে দাঁড়াবে। এ কাজটা করতে হবে তাড়াতাড়ি।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, যেগুলো ভালো কোম্পানি তার শেয়ার দাম কিন্তু পড়েনি। অনেক শেয়ারের দাম এখন ১০ টাকার নিচে আছে। অর্ধেক দাম ৫ টাকা, ৪ টাকা, ২ টাকাতে আছে ১০ টাকা দামের শেয়ার। কিন্তু কিছু শেয়ার দাম ৩ হাজার টাকার ওপরেও আছে। এর মানে যারা ভালো পারফর্মার, যারা বিনিয়োগকারীদের ঠকায়নি, যারা সত্যিকার অর্থেই বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে ব্যবসায় খাটিয়েছে এবং ব্যবসা করে লভ্যাংশ দিয়েছে। এত খারাপ অবস্থার মধ্যেও তাদের শেয়ারের দাম পড়ছে না।
অনুষ্ঠানে 'পুঁজিবাজারে নারী' শীর্ষক বিষয়ের ওপর প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মডারেটর ছিলেন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার। বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা আহমেদ, অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মানতাশা আহমেদ, ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক শামীমা আক্তার এবং অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিজ অ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সহ-সভাপতি মনিজা চৌধুরী আলোচনায় অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে ২০২৩ সালের পারফর্মেন্সের ভিত্তিতে স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এ তিন ক্যাটাগরিতে আট প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড এবং এ ক্যাটাগরিতে তৃতীয় হয়েছে শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
মার্চেন্ট ব্যাংক ক্যাটাগরিতে এ বছর প্রথম হয়েছে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং তৃতীয় হয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক ক্যাপিটাল সার্ভিসেস লিমিটেড। আর সম্পদ ব্যবস্থাপক বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ২০২৩ সালে প্রথম পুরস্কার লাভ করেছে একাশিয়া এসআরআইএম লিমিটেড। এ ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছে আইসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড।
অনুষ্ঠানে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০২২-২৩ সালের জন্য তিনটি ক্যাটাগরিতে শুদ্ধাচার পুরস্কার দেওয়া হয়। ২য়-৯ম গ্রেড ক্যাটাগরিতে অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান, ১০-১৬তম গ্রেড ক্যাটাগরিতে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সমীর ঘোষ ও ১৭-২০তম গ্রেডে অফিস সহায়ক মো. সুজন আলম বিজয়ী হয়েছেন।
এমএএস/এসআইটি/এএসএম