ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আশার আলো

নাজমুল হুসাইন | প্রকাশিত: ০৬:১৭ পিএম, ১৯ মে ২০২৪

চলতি অর্থবছরে প্রথম দশ মাসে সামগ্রিক রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। জুলাই-এপ্রিলে ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি (৪৭.৪৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। যদিও সামগ্রিক এ রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি শ্লথ হলেও রপ্তানি আশার আলো দেখাচ্ছে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য।

চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য থেকে আয় হয়েছে ৭৭ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় করেছে শুকনো খাবার। এসব খাবার থেকে আয় হয়েছে ১৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। বেভারেজ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ও মিষ্টান্ন থেকে ২ কোটি ডলার।

সবজি রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৮ কোটি ডলার। যা গত অর্থবছর ছিল ৫ কোটি ডলার। এছাড়া তামাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৫ কোটি ডলার, ফল রপ্তানিতে প্রায় ২ কোটি ডলার, মসলা রপ্তানি দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪ কোটি ডলারে। আর পান রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ২ কোটি ডলার।

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ক্রমাগতভাবে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমছে। বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্ববাজারে আমরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে আছি। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখতে পারছি না।- বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক

কৃষিখাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক ধারায় থাকলেও তা গত দুই বছরে বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ আয় ছিল ১১৬ কোটি (১.১৬ বিলিয়ন) ডলার। কিন্তু ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় কমে এসেছিল ৮৩ কোটি ডলারে। তবে এবছর বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ প্রথম দশ মাসে এ খাত থেকে আয় হয়েছে ৭৭ কোটি ডলার।

এ খাতের জন্য বাজেটে বরাদ্দ অপ্রতুল। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং রপ্তানি আগের জায়গায় নিতে প্রয়োজন আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা। আগামী বাজেটে এ সেক্টরের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোও একান্ত দরকার। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামীতে কাজ করতে হবে। দেশ-বিদেশে কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মার্কেট বড় না হলে কোনোভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। ঠিক একইভাবে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা কঠিন।

বেশ কিছু কারণে শাক-সবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কমানো একটি। আমাদের দেশে কার্গো ভাড়াও বেশি।- বিএফভিএপিইএ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

এমন অবস্থায় কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন আসন্ন বাজেটে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভর্তুকি ২০ শতাংশ করে, ২০২৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে। এছাড়া ১০ শতাংশ উৎসে কর কর্তন রহিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

কৃষিশিল্পের উপকরণ আমদানির বিপরীতে অগ্রিম আয়কর ও পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। এছাড়া উৎসে কর কর্তন অব্যাহতির সীমা নির্ধারণ ও কর কর্তনের হার হ্রাসকরণ এবং ঠিকাদারের বিল পরিশোধকালে একটি নির্দিষ্ট হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান প্রবর্তন করার প্রস্তাব করা হয়েছে ওই প্রস্তাবে।

সংগঠনটি সুগার সিরাপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আয়কর অব্যাহতি ও কৃষি প্রক্রিয়াকরণে বিনিয়োগকারী করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ২৭ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স কমানোর দাবি জানিয়েছে। সঙ্গে রিফাইন সুগার, বিট সুগার, ফুড প্রিপারেশন, অ্যাসেপটিক প্যাকসহ আরও কিছু পণ্যের শুল্ক-কর যৌক্তিকরণের দাবি জানিয়েছে বাজেট প্রস্তাবে।

বেশ কিছু কারণে শাক-সবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কমানো একটি। আমাদের দেশে কার্গো ভাড়াও বেশি।- বিএফভিএপিইএ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

এসব বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইকতাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ক্রমাগতভাবে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির গতি কমছে। এছাড়া বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্ববাজারে আমরা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে আছি। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক দাম বজায় রাখতে পারছি না।’

‘পার্শ্ববর্তী এসব দেশ কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ খাতকে খুব গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় গিয়ে পণ্যের উৎপাদন, শিপমেন্ট/বিতরণ খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় রপ্তানিকারকরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। তাই কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি ও রপ্তানির ভারসাম্য রক্ষা এবং অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে এ শিল্পের জন্য নগদ ভর্তুকি সুবিধাসহ অন্য সুবিধা দরকার।’

বেশ কিছু কারণে শাক-সবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কমানো একটি। আমাদের দেশে কার্গো ভাড়াও বেশি।- বিএফভিএপিইএ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

তাজা শাক-সবজি রপ্তানিও কমছে, প্রণোদনা বাড়ানো দরকার

বাংলাদেশ এখন প্রতিদিনই কাঁচামরিচ থেকে শুরু করে লাউ, কুমড়া, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি বিশ্বের অনেকগুলো দেশে রপ্তানি করছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে বলে দাবি রপ্তানিকারকদের।

এমন পরিস্থিতিতে তাজা সবজি ও ফলজাতীয় পণ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) বাজেট প্রস্তাবে বলেছে, এখন তাজা কৃষিপণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা আগে ২০ শতাংশ ছিল। এটি আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেওয়া দরকার। কারণ বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভারত ও পাকিস্তান পণ্যভিত্তিক আরও বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে। বাংলাদেশের প্রণোদনা কম হওয়ার কারণে ওইসব দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে।

বেশ কিছু কারণে শাক-সবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কমানো একটি। আমাদের দেশে কার্গো ভাড়াও বেশি।- বিএফভিএপিইএ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন

বিএফভিএপিইএ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বেশ কিছু কারণে শাক-সবজি রপ্তানি কমেছে। এর মধ্যে প্রণোদনা কমানো একটি। আমাদের দেশে কার্গো ভাড়াও বেশি।’

এছাড়া বিএফভিএপিইএ কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সব সেবা একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিসের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। যাতে পণ্য রপ্তানির সব সেবা এক ছাতার নিচে মেলে। তাতে রপ্তানিকারকদের হয়রানি কমবে ও সময় বাঁচবে।

এনএইচ/এএসএ/জেআইএম