ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

ব্যবসা সম্প্রসারণে কর কমাতে হবে

সাঈদ শিপন | প্রকাশিত: ০৩:৩৪ পিএম, ১১ মে ২০২৪

‘বিমাখাতের করপোরেট ট্যাক্স একটু কমানো উচিত। আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় একটু বেশি হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ হলো আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মার্কেটিংয়ে ব্যয় করতে হয়। এই বিনিয়োগের কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়।’

দেশের বিমাখাত নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আহমেদ সাইফুদ্দীন চৌধুরী। বিমা পেশা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করা সাইফুদ্দীন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির (বিজিআইসি) মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী বাজেটে বিমা খাতের জন্য কী ধরনের সুবিধা দেওয়া উচিত, বিমা ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা, ব্যবসা সম্প্রসারণের উপায়, নতুন পণ্য নিয়ে আসাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ শিপন।

আসন্ন বাজেটে বিমা খাতের জন্য আপনাদের প্রত্যাশা কী?

সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) গ্রাহকের কাছ থেকে নিয়ে সরকারের কোষাগারে জমা দেয়। আসন্ন বাজেটে বিমাখাতকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করলে ভালো হয়। কারণ প্রত্যেকটি মানুষ চিন্তা করে তার পণ্যের কস্ট অনুযায়ী সে বাজারে বিক্রি করতে পারবে কি না। পণ্যের ব্যয় যদি অন্য দেশের চেয়ে বেশি হয় তাহলে দাম অনেক বেশি হবে, তখন বিক্রি হবে না। তখন বিমা গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাবে। যদি কম ট্যাক্স নেওয়া হয় এবং ভলিউম বেশি থাকে তাহলে সরকার বেনিফিটেড হবে।

মোটর বিমা বন্ধ করে দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমি মনে করি মোটর বিমা থাকা উচিত। কারণ শুধু গাড়ি ড্যামেজ হয় তা তো নয়, মানুষেরও ড্যামেজ হতে পারে। আমার অভিমত মোটর বিমা বন্ধ না করে এটাকে সংস্কার করা উচিত।

সাম্প্রতিক সময়ে বিমার গ্রাহক সংখ্যা কমে যেতে দেখা যাচ্ছে। এর পিছনে কী কারণ রয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

আমাদের দেশে বিমার প্রিমিয়াম রেট বেশ হাই এবং ট্যারিফে চলছে। প্রিমিয়াম রেট কমানোর জন্য ট্যাক্স, ভ্যাট কমাতে হবে। সেই সঙ্গে নন-ট্যারিফ করে দিতে হবে। নন-ট্যারিফ করে দিলে এক টাকা দিয়ে যে আমদানি করছি, সেটা দেখা যাবে আমি মার্কেট খুঁজে ২০-৩০ পয়সায় করে দিতে পারবো। এতে ভলিউম বেড়ে যাবে। ভলিউম বেড়ে গেলে সরকারের যেমন আয় হবে, বিমা কোম্পানির উন্নয়নও হবে।

ব্যবসা সম্প্রসারণে কর কমাতে হবে

বিদেশে কি ট্যারিফ আছে?

বাইরের দেশে নন-ট্যারিফ। আমরা যদি ভারতকে আইডিয়াল হিসেবে ধরি, ভারত কিন্তু নন-ট্যারিফ মার্কেট। পাকিস্তান নন-ট্যারিফ। বাংলাদেশেও নন-ট্যারিফ করে দেওয়া উচিত।

বিমাখাতের জন্য করপোরেট ট্যাক্সের যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটাকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

আমার মতে বিমাখাতের করপোরেট ট্যাক্স একটু কমানো উচিত। আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় একটু বেশি হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ হলো ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য মার্কেটিংয়ে ব্যয় করতে হয়। এই বিনিয়োগের কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যায়। কিন্তু করপোরেট ট্যাক্স যদি কমানো হয়, তাহলে আমার মনে হয় প্রত্যেকটি কোম্পানি বিমা প্রসারের জন্য অনেক অবদান রাখতে পারবে।

আরেকটি বিষয় হলো তালিকাভুক্ত কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের যে লভ্যাংশ দেয় তার ওপর থেকে সরকার ট্যাক্স কাটে। অথচ কোম্পানি তার ব্যবসা থেকে যে আয় করে সেই আয়ের ওপর থেকে ট্যাক্স দেওয়ার পর লভ্যাংশ বিতরণ করে। এতে একই অর্থের ওপর দুবার ট্যাক্স কাটা হয়। আমি মনে করি শেয়ারহোল্ডারের লভ্যাংশের ওপর যে ট্যাক্স রয়েছে, সেটি উঠিয়ে দেওয়া উচিত। এতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বেশি আসবে বলে আমি মনে করি।

মোটর বিমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এখন আবার ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার অভিমত কী?

মোটর বিমা বন্ধ করে দেওয়াটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমি মনে করি মোটর বিমা থাকা উচিত। কারণ শুধু গাড়ি ড্যামেজ হয় তা তো নয়, মানুষেরও ড্যামেজ হতে পারে। আমার অভিমত মোটর বিমা বন্ধ না করে এটাকে সংস্কার করা উচিত। এখন মোটর ইন্স্যুরেন্সের ড্যামেজের জন্য ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। বর্তমান সময়ে ২০ হাজার টাকা তো তেমন কিছু নয়। এটাকে দুই লাখ টাকা করে দেওয়া যেতে পারে। প্রপার্টি ড্যামেজের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ ৫০ হাজার টাকা আছে, সেটাকে তিন লাখ টাকা করে দেওয়া যেতে পারে।

নতুন পণ্য আনতে হলে বিমাখাতে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে যাদের অভিজ্ঞতা ২৫ বছর হয়ে গেছে, তাদের অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।

এক্ষেত্রে প্রিমিয়ামে ভলান্টিয়ারি অ্যাক্সেস দেওয়া যেতে পারে। গ্রাহক ধরেন ৩০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ নেবে না, সেক্ষেত্রে বিমা কোম্পানি প্রিমিয়ামের ৪০ শতাংশ গ্রাহককে ছাড় দিতে পারে। যদি গ্রাহক বলে ৫০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ নেবে না, তাহলে কোম্পানি তাকে প্রিমিয়ামের ৬০ শতাংশ ছাড় দিতে পারে। এতে প্রিমিয়ামের হারও কমে আসবে।

বিমা খাতের উন্নয়নের জন্য নতুন কোন ধরনের পণ্য নিয়ে আসা উচিত?

নতুন পণ্য আনতে হলে বিমাখাতে প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে যাদের অভিজ্ঞতা ২৫ বছর হয়ে গেছে, তাদের অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে।

ব্যবসা সম্প্রসারণে কর কমাতে হবে

বিমা আইন সংশোধন করে কোম্পানির সচিব এবং প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) নিয়োগের ক্ষেত্রে আইডিআরএ’র অনুমোদন নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখছেন?

আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কারণ একটি কোম্পানির সিএফও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিইও কোম্পানিতে মাস্টার রোল প্লে করে। সিইও একটা সিদ্ধান্ত দিলে সিএফওকে সেটি বিশ্লেষণ করতে হবে। যে সিইও যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সেটি কতটুকু কার্যকর কিংবা কতটুকু কার্যকর না। যদি অকার্যকর হয়, তাহলে লজিক দিয়ে তাকে সিইওকে বোঝাতে হবে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের কর্মকর্তাকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নিয়োগ দেওয়ার বিধান করা ভালো উদ্যোগ।

কোম্পানির শেয়ার বন্ধক রেখে কোনো পরিচালক বা তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা যাবে না, আইনে এ ধরনের আর একটি সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কে কীভাবে দেখছেন?

আমি বিনিয়োগ করেছি। আমার তো যে কোনো সময় টাকার দরকার হতে পারে। এটা আপনি বন্ধ করবেন কেন? এমনও তো হতে পারে আমি এটা (শেয়ার) বিক্রি করে দিতে পারি। আমি চিন্তা করলাম এত কষ্ট করে বিনিয়োগ করেছি, এটা আপাতত লিয়েন রেখে লোন নিয়ে আমার সাময়িক সমস্যা দূর করি। সুতরাং, শেয়ার বন্ধক রেখে উদ্যোক্তারা ঋণ নিতে পারবেন না, এ নিয়ম করাটা ঠিক হবে না। এতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে নিরুৎসাহিত হবেন।

আপনাকে ধন্যবাদ।

জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।

এমএএস/এএসএ/জেআইএম