ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানো ‘ইতিবাচক নয়’
ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ডলারের বাজার আটকে রাখায় যেমন ইতিবাচক দিক নেই, একইভাবে একবারে বেশি দাম বাড়ানোতেও যুক্তি নেই। ধীরে ধীরে দাম বাড়ালে বাজারে অস্থিরতা হতো না বলেই মত তাদের। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যবধান কমবে।
বুধবার (৮ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বিনিময় হার পদ্ধতি বা ক্রলিং পেগ মিড রেট (সিপিএমআর) চালু করেছে। এতে ডলারের দাম এক লাফে বেড়েছে ৭ টাকা। এখন অফিসিয়াল দাম ১১০ থেকে ১১৭ টাকা। এতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। একবারে বেশি দাম বাড়ানোয় কোনো ইতিবাচক দিক পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা।
গ্রাহকের হাতে থাকা ডলার বাজারে ফিরিয়ে আনতে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিন দফায় মার্কিন মুদ্রাটির বিনিময় হার উল্টো ১ টাকা কমানো হয়েছিল। এর গত ২৩ নভেম্বর প্রতি ডলারে ৫০ পয়সা ও ২৯ নভেম্বর প্রতি ডলারে ২৫ পয়সা কমানো হয়। আর ডিসেম্বরে কমানো হয় আরও ২৫ পয়সা। এ নিয়ে বছরের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় দর ব্যাংকখাতে ছিল সর্বোচ্চ ১১০ টাকা। যদিও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে আসছেন ব্যাংক থেকে আমদানি পর্যায়ে ডলার কিনতে ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছিল তাদের।
আরও পড়ুন
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি মার্কিন এ মুদ্রাটির দর ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। এর একবছর পর ২০২১ সালের ১ জানুয়ারিতে দাম ১০ পয়সা কমে দাঁড়ায় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এর পরই মুদ্রাটির বিপরীতে টাকার ব্যাপক অবমূল্যায়ন হয়। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারিতে মুদ্রাটির দর বাড়তে বাড়তে ১০৫ টাকায় ওঠে। আর চলতি বছরের ১ জানুয়ারিতে মুদ্রাটির দাম ওঠে ১১০ টাকায়। সবশেষ বুধবার (৮ মে) দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানো হলো।
ডলারের দাম বাড়াই ছিল। এতদিন ধরে রাখার ঠিক হয়নি। কারণ আমদানিকারক কখনই নির্ধারিত দামে ডলার পায়নি। তাহলে তো ঊর্ধ্বমুখীই ছিল বাজার। এখন একবারে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে রেট আরও বাড়বে।- ড. জাহিদ হোসেন
এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ডলারের দাম বাড়াই ছিল। এতদিন ধরে রাখার ঠিক হয়নি। কারণ আমদানিকারক কখনই নির্ধারিত দামে ডলার পায়নি। তাহলে তো ঊর্ধ্বমুখীই ছিল বাজার। এখন একবারে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে রেট আরও বাড়বে। কারণ বলাই আছে এর সঙ্গে আরও এক টাকা বাড়া-কমার সুযোগ রয়েছে।’
ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক দরটা কার্যকরে আরও কঠোর হবে। এতে বাজারও অস্থির হবে। কারণ অনেকেই দাম বেশি পাওয়ার আশায় ডলার ধরে রাখতে চাইবে। আমার আশঙ্কা ছিল বাজারব্যবস্থা নিয়ে (অস্থিরতা)। ডলারের রেট কোথায় গিয়ে স্থির হবে এটা বলার সুযোগ নেই। সামনের সপ্তাহটা দেখা যাক।’
প্রকৃত বিনিময় হার (ডলার) আলোচনা করেই মধ্যবর্তী দর ঠিক করেছি। এখন খোলাবাজারেও ডলারের দর স্থিতিশীল। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারের ব্যবধান এক টাকার বেশি হবে না।- বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে ডলারের মধ্যবর্তী দর ঠিক করা হয়েছে। এখানে খোলাবাজারের সঙ্গে ব্যবধান কমবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই বাস্তবতার প্রতিফলন নেই খোলাবাজারে। ডলারের দাম ব্যাংকে ৭ টাকা বাড়লেও মানি এক্সচেঞ্জলোতে বেড়েছে ৯ টাকা পর্যন্ত। বুধবার (৮ মে) প্রতি ডলার কেনার রেট ছিল ১১৪ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রি হয়েছে ১১৬ টাকায়। বৃহস্পতিবার (৯ মে) মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা। ডলারের সঙ্গে অন্য মুদ্রায়ও এর প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রকৃত বিনিময় হার (ডলার) আলোচনা করেই মধ্যবর্তী দর ঠিক করেছি। এখন খোলাবাজারেও ডলারের দর স্থিতিশীল। ফলে ব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারের ব্যবধান এক টাকার বেশি হবে না।’
আরও পড়ুন
- ডলার সংকট ঠেকাতে এবার অফশোর ব্যাংকিংয়ে তোড়জোড়
- ডলার সংকট কিছুটা কমেছে
- ডলারের দাম নিয়ে আইএমএফের ক্ষোভ
- ডলারের দাম বাজারের উপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ ড. জাহিদের
- একলাফে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ালো বাংলাদেশ ব্যাংক
এ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধারক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলারের রেট ১১৭ টাকা নির্ধারণ ক্রলিং পেগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো। তবে এক ধাপে ৭ টাকা ডলারের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। ভারসাম্য করা যেত। ধীরে ধীরে বাড়ানো হলে প্রভাব পড়তো না বাজারে। এক লাফে বেশি বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।’
ডলারের দাম একবারে বেশি বাড়ানোকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এতে পরিবহন খরচ বাড়বে, পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। চাপে পড়বেন সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ডলারের দাম এক দিনে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। এতে রপ্তানিকারক সুবিধা পেলেও আমদানিকারকদের সমস্যায় পড়তে হবে। স্বাভাবিকভাবেই আমদানি ব্যয় বেড়ে গেলে বাজারে এর নেতিবাচক দিক তৈরি হবে। বেড়ে যাবে ভোক্তার কষ্ট। তাই বাস্তবতার আলোকে সব সিদ্ধান্ত না হলে সমস্যা তৈরি হবে, উসকে দেবে মূল্যস্ফীতিকে।
ইএআর/এএসএ/এমএস