প্রবাসী রেমিট্যান্স আসবে বিকাশে
মাস্টার কার্ড, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও বিকাশ যৌথভাবে মুঠোফোনে প্রবাসী আয় বা মানি ট্রান্সফার সেবা চালু করেছে। যার ফলে বিকাশ-এর নিবন্ধিত গ্রাহকরা এখন বিদেশ হতে প্রেরিত রেমিটেন্স সরাসরি তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টেই গ্রহণ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বজনদের কাছে সরাসরি মুঠোফোনেই রেমিট্যান্স পাঠাতে পারবেন।
রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও এ ওই তিন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যাক ব্যাংক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ এই সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
বাংলাদেশ বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম আন্তর্জাতিক রেমিটেন্স গ্রহণকারী দেশ। এই নতুন সেবা চালুর ফলে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিদেশে বসবাসরত তাদের স্বজনদের পাঠানো রেমিট্যান্স গ্রহণ অনেক সহজ ও সুবিধাজনক হবে। বিকাশ-এর অভূতপূর্ব সাফল্যের উপর ভিত্তি করে চালু হয়েছে এই নতুন ধরনের রেমিট্যান্স সেবা।
২০১১ সালের চালু হওয়া বিকাশ-এর বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ২২ মিলিয়ন। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত যে কোনো ব্যক্তি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পাঠানো রেমিট্যান্স বিকাশ গ্রাহকরা নিজেদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি গ্রহণ করতে পারবেন।
যেভাবে মুঠোফোনে আসবে রেমিট্যান্স
বিকাশ-এর নিবন্ধিত গ্রাহকরা প্রায় সব দেশ থেকেই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে তাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবেন। রেমিট্যান্স গ্রহণ প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এক্ষেত্রে বিকাশ মেন্যুতে যেয়ে রেমিট্যান্স ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন নির্বাচিত করে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের রেফারেন্স নাম্বার (এমটিসিএন) প্রবেশ করে, টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে বিকাশ পিন চাপতে হবে। পরবর্তী ধাপে লেনদেনের অনুরোধটি মাস্টারকার্ডের সিকিউরড পেমেন্ট টেকনলজির মাধ্যমে সরাসরি বিকাশ অ্যাকাউন্টে চলে যাবে।
একজন বিকাশ গ্রাহক দিনে একটি একক লেনদেনের সর্বোচ্চ টাকার পরিমাণ হবে ৩৫ হাজার টাকা (প্রায় ৫০০ ডলার)। একজন গ্রাহক দিনে পাঁচবার লেনদেন করতে পারবেন যার সর্বোচ্চ পরিমাণ হবে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা (প্রায় ১৫০০ ডলার)। মাসে সর্বোচ্চ ২০ বার লেনদেন করতে পারবেন এবং এক্ষেত্রে বিকাশ অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ স্থিতি থাকবে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিকাশ বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধাবহির্ভূত জনগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশকে আর্থিক সেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। দরিদ্র ও ব্যাংকিং সুবিধাবহির্ভূত জনগোষ্ঠীকে একটি নিয়মতান্ত্রিক আর্থিক কাঠামোয় অংশগ্রহণে সুযোগ দিয়ে বিকাশ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এই রেমিট্যান্স সেবায় ফরেন রেমিট্যান্স রেগুলেশন প্র্যাকটিস অনুসারে ওভারসিজ ফান্ড ফ্লো প্রক্রিয়া করবে ব্র্যাক ব্যাংক।
বিকাশের নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রথমসারির প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রেমিট্যান্স সেবা চালু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর ফলে বিকাশ গ্রাহকরা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে বিদেশ থেকে স্বজনদের প্রেরিত অর্থ দিন রাত ২৪ ঘণ্টাই গ্রহণ করতে পারবেন। এটি দেশে-বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের জন্য একটি বিশাল সম্ভাবনা বয়ে এনেছে।
মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল প্রোডাক্টস অ্যান্ড সলিউশন্সের গ্রুপ এক্সিকিউটিভ ম্যাথিউ ড্রাইভার বলেন, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ নতুন ৫০ কোটি মানুষের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে আমাদের যে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটি পূরণের পথে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে গেলাম।
ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া-প্যাসিফিক, পূর্ব ইউরোপ ও সিআইএসের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট জ্যাঁ ক্লড ফারাহ বলেন, বিকাশ, ব্র্যাকব্যাংক ও মাস্টারকার্ডের সাথে এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক অর্থ স্থানান্তর কার্যক্রমের অংশীদার হতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সেলিম আর এফ হুসেইন বলেন, বিকাশ, মাস্টারকার্ড, ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও ব্র্যাক ব্যাংকের এই যৌথ উদ্যোগ বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্স সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দেবে।
এসএ/এসএইচএস/পিআর