ভিডিও EN
  1. Home/
  2. অর্থনীতি

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপি ধরতে পৃথক ইউনিট হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৩৭ এএম, ০৪ এপ্রিল ২০২৪

দেশের ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উদ্বেকজনক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। নানান অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনায় খেলাপি বাড়লেও আদায় হচ্ছে না মোটেও। এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্ত করতে পৃথক ইউনিট গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি মাস এপ্রিলের ৩০ তারিখের মধ্যে এ ইউনিট গঠনের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না। ব্যক্তির গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি কোনো ঋণগ্রহীতাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণ পরিশোধপূর্বক ওই তালিকা হতে অব্যাহতিপ্রাপ্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি খেলাপি হওয়ার পর উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কি না তা শনাক্ত করার ক্ষেত্রে বেশকিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদনের নিমিত্তে ফাইন্যান্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত দুই ধাপ নিচের কর্মকর্তার অধীনে প্রধান কার্যালয়ে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ নামে একটি পৃথক ইউনিট চলতি বছরের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে গঠন করতে হবে।

২০২৩ এ প্রদত্ত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংজ্ঞা মোতাবেক ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক তাদের কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কি না তা শনাক্ত করতে হবে। খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ওই ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি কি না তা নিরূপণের লক্ষ্যে বিবেচ্য বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে ফাইন্যান্স কোম্পানির সংশ্লিষ্ট ইউনিট কর্তৃক শনাক্ত করতে হবে। তবে যৌক্তিক কারণে বর্ণিত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা সম্ভব না হলে ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে ওই সময় আরও ৩০ দিন বৃদ্ধি করা যাবে।

কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে শনাক্ত হলে তা চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। যেমন কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে শনাক্ত হলে শনাক্তকরণের কারণ উল্লেখপূর্বক সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে তার বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ১৪ কর্মদিবস সময় প্রদান করতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে অথবা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণগ্রহীতার প্রদত্ত বক্তব্য গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে বা না হলে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা শনাক্তকরণ ইউনিট’ কর্তৃক এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। তবে জাতীয় শিল্প নীতিতে বর্ণিত সংজ্ঞানুযায়ী বৃহৎ শিল্প খাতের ৭৫ কোটি ও তদূর্ধ্ব, ‘মাঝারি শিল্প’ খাতের ৩০ কোটি ও তদূর্ধ্ব এবং অন্যান্য খাতের ১০ কোটি ও তদূর্ধ্ব স্থিতিসম্পন্ন ঋণের ক্ষেত্রে ফাইন্যান্স কোম্পানির নির্বাহী কমিটির পর্ষদের অনুমোদন গ্রহণ আবশ্যক হবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৩০(৯) ধারার আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার নিকট ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের তালিকা পাঠাতে পারবে। তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যুতে নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস এর নিকট কোম্পানি নিবন্ধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলে সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বা সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য হবেন না; ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গাড়ি, জমি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদির নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান আইন বিধির আওতায় যথাযথ কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। কোনো ঋণগ্রহীতাকে ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা কর্তৃক ঋণ পরিশোধপূর্বক উক্ত তালিকা হতে অব্যাহতি প্রাপ্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন না।

জরিমানা

ফাইন্যান্স কোম্পানি কর্তৃক ওপরে বর্ণিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করা হলে অথবা কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি জ্ঞাতসারে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বর্ণিত নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে মর্মে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট বিবেচিত হলে ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে উক্ত লঙ্ঘনের জন্য সংশ্লিষ্ট ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অন্যূন ৫০ লাখ টাকা এবং অনধিক এক কোটি টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। যদি উক্ত লঙ্ঘন অব্যাহত থাকে, তাহলে উক্ত লঙ্ঘনের প্রথম দিনের পর প্রত্যেক দিনের জন্য অতিরিক্ত অনূর্ধ্ব এক লাখ টাকা জরিমানা আরোপিত হবে।

ইএআর/ইএ